বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : একজন নাগরিকের জন্য তার জন্মের পর থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তৈরিতে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাগজটি হলো জন্ম সনদ। এক সময় শুধু হাতে লিখেই দেওয়া হতো এই সনদপত্রটি। তারপরে এলো কম্পিউটারে টাইপ করা বাংলায় জন্ম নিবন্ধন সনদ। আর এখন জন্ম নিবন্ধন সনদ ইংরেজি করা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। অনলাইন বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে জন্ম নিবন্ধনের বিষয়টি ইতোমধ্যেই জন্ম সনদ প্রাপ্তির পূর্ব শর্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন একজন বাংলাদেশি নাগরিককে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই দরকারি নথিটির ইংরেজি সংস্করণের জন্য আবেদন করতে হবে। আসুন জেনে নিই ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদের ইংরেজি ভার্সনেরর জন আবেদন পদ্ধতি সম্পর্কে-
ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন যাচাই
প্রথমেই যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হচ্ছে, সনদটি অনলাইন করা আছে কিনা। এর মানে হচ্ছে বাংলাদেশে সরকারের অনলাইন ডাটাবেসে ব্যক্তির জন্ম সনদ অন্তভূক্ত আছে কিনা। তা না হলে সবার আগে অনলাইনে জন্ম পরিচয় সংযুক্ত করতে হবে।
ডাটাবেসে সংযুক্ত আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রারের কার্যালয় ওয়েবসাইট-এ যেতে হবে।
অতঃপর ১৭ অঙ্কের জন্ম নিবন্ধন সংখ্যা এবং জন্ম তারিখ দিতে হবে। জন্ম সনদে উল্লেখিত ১৭ অঙ্কের পার্সনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বরই হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন সংখ্যা। তথ্যগুলো দেওয়ার পর যদি কোনো রেকর্ড না দেখায় তবে বুঝতে হবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন বা ডিজিটাল করা নেই। তখন প্রথম কাজ হবে এই ডিজিটালকরণটি সম্পন্ন করার জন্য আবেদন করা। আর থাকলে তার ইংরেজি সংস্করণ তৈরির জন্য আবেদন করা যাবে।
জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি করতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আবেদনের উপায়
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আবেদন যেহেতু অনলাইনে করতে হবে, সেহেতু যাবতীয় কাগজপত্রের সফট কপি দরকার হবে। তাই আগে থেকে নিম্নলিখিত নথিগুলো স্ক্যান করে প্রস্তুত রাখতে হবে, যেন অনলাইনের আবেদনের নির্দিষ্ট পর্যায়ে সহজেই তা আপলোড করে দেওয়া যায়।
→ আবেদনকারীর ন্যূনতম এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সনদপত্র
→ পিতা মাতার অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম সনদপত্র (যদি থাকে)
→ যদি ইতোমধ্যে আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়ে থাকে তবে তা দিতে হবে
এই কাগজপত্রের স্ক্যান বা ছবি সাইজ সর্বোচ্চ ১ এমবি(মেগাবাইট) হবে। তবে ওয়েবসাইটে ৯৭৬ কেবি(কিলোবাইট)-এর বেশি আপলোড নেয় না। ছবিগুলো প্রস্তুত করার সময় এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়া
এই কাজটি সম্পন্ন করার সময় সতর্কতার সঙ্গে প্রতিটি তথ্য সরবরাহ করতে হবে। ৪ বারের বেশি জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য আবেদন করা যায় না।
আবেদন প্রক্রিয়া শুরুর প্রথম ধাপে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ওয়েবসাইট-এ প্রবেশ করতে হবে। এখানে সামগ্রিক নীতিমালার নিচের প্রথম বক্সটিতে আবেদনকারীর ১৭ অঙ্কের জন্ম নিবন্ধন নাম্বার আর দ্বিতীয় বক্সে জন্ম তারিখ দিতে হবে। তারপর অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করলে ব্যক্তির জন্ম সনদ দেখাবে। এবার নির্বাচন করুন বাটনে ক্লিক করে কনফার্ম করতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন কার্যালয় বাছাইয়ের মুহূর্তে ব্যক্তি ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভায় যেখানে জন্ম নিবন্ধন করেছিলেন তা উল্লেখ করতে হবে। দেশ, বিভাগ, জেলা, উপজেলা বা সিটি কর্পোরেশন দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করতে হবে।
এরপরের ইন্টারফেসেই জন্ম নিবন্ধনের ইংরেজি ফরম দেখা যাবে। এ সময় বিষয়ে ক্লিক করে শুধু ইংরেজি অপশনগুলো আলাদা আলাদা করে বাছাই করে সেগুলোতে ইংরেজিতে তথ্য সরবরাহ করতে হবে। একাধিক বিষয়ের জন্য আরও তথ্য সংযোজন করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে। সংশোধনের কারণের অপশনগুলো থেকে ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে নির্বাচন করতে হবে। এরপর নিচে ব্যক্তির বর্তমান ও স্থায়ী সহ জন্মস্থানের ঠিকানা ইংরেজিতে দিতে হবে। সবশেষে দিতে হবে আবেদনকারীর যোগাযোগের তথ্য। আবেদনটি নিজের জন্য হলে নিজ নির্বাচন করতে হবে। সন্তানের জন্য হলে পিতা-মাতা বাছাই করতে হবে। অতঃপর আবেদনকারীর ফোন নম্বর দিতে হবে।
পিতা-মাতা ব্যতীত অন্য কেউ যেমন- দাদা-দাদী, নানা-নানী আবেদন করলে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিতে হবে। এরপর সবুজ রঙের সংযোজন বাটনে ক্লিক করে আগে স্ক্যান করে রাখা প্রয়োজনীয় নথিগুলোর ছবি আপলোড করতে হবে।
সবশেষে ফি আদায় অপশনটিকে অপরিবর্তিত রেখে সাবমিট বাটনে ক্লিক করলেই আবেদন সম্পন্ন হয়ে যাবে। আবেদন সফল হলে একটি কোড প্রদান করা হবে, যেটি পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। প্রিন্ট করুন বাটনে ক্লিক করে আবেদনটির একটি হার্ড কপি নিজের কাছে রেখে দিতে হবে।
আনুষঙ্গিক খরচাদি
জন্ম নিবন্ধনের আবেদনপত্র সহ দরকারি নথিগুলো জমা দেওয়ার সময় ১০০ টাকা ফি জমা দিতে হবে। এছাড়া প্রিন্ট, ফটোকপিসহ কার্যালয়ের অন্যান্য কাজে প্রায় ৩০০ টাকার মত খরচ হতে পারে।
আবেদনপত্র কোথায় জমা দিতে হবে
প্রিন্ট করা আবেদনপত্র সংযুক্তি কাগজপত্রের ফটোকপিসহ স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন/ইউনিয়ন/ পৌরসভার কার্যালয়ে গিয়ে জমা দিয়ে আসতে হবে। এবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আবেদনটি যাচাই বাছাই করে তথ্যগুলো সংশোধনপূর্বক পুরো জন্ম সনদটি ইংরেজি সংস্করণে তৈরি করে দিবে। কার্যালয় থেকে একটি টোকেন দেওয়া হবে যেখানে সনদপত্র সংগ্রহের তারিখ উল্লেখ থাকবে। অতঃপর সেই তারিখে যেয়ে চূড়ান্তভাবে ইংরেজিতে জন্ম নিবন্ধনের সনদ হাতে পাওয়া যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।