জুমবাংলা ডেস্ক : জন্মনিবন্ধন সনদের কথা বললেই সামনে ভেসে আসে ভোগান্তির চিত্র। এ চিত্র নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এমন পদে পদে ভোগান্তির শিকার হয়ে জন্মনিবন্ধন করতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাকে। এবার দীর্ঘ সময় ধরে সার্ভার জটিলতায় বন্ধ রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নতুন নিবন্ধন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার সেবাগ্রহীতা। দপ্তরে দপ্তরে ঘুরেও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না তারা।
জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে সহজ করার বিষয়টি দীর্ঘ দিন ধরেই দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটি সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়েই রয়ে গেছে। অপর্যাপ্ত জনবল ও জটিল নিয়মের কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সেবাপ্রত্যাশীরা। আর এর সঙ্গে কিছুদিন পর পর সার্ভার জটিলতা তো আছেই। তবে উত্তর সিটি করপোরেশন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খুব শিগিগরই কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে জন্মনিবন্ধন দেওয়া শুরু হবে। আগস্ট থেকেই এটি চালু করার কথা বলছেন তারা। এতে সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি কমবে বলেও জানান তারা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরিতে যোগদান, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নাগরিক সেবার ১৯টি ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় জন্মসনদের। জন্মনিবন্ধন বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। যা সবার ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে প্রয়োজন। ঢাকার এমন কোনো মানুষকে খুঁজে পাওয়া কঠিন যিনি তার সন্তানের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে ভোগান্তিতে পড়েননি। সাধারণ মানুষের ভোগান্তিকে পুঁজি করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দালাল চক্র। ‘দ্রুত সময়ে, কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই জন্মসনদ দেওয়া হবে’ এমন প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। টাকা দিলেও হয় না সমাধান। সার্ভার নেই, বাবা-মায়ের নামের বানান ভুল, অনলাইন কপিতে সমস্যাসহ নানা জটিলতার অজুহাতে মাসের পর মাস ঝুলিয়ে রাখা হয় আবেদন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করলে তার মা-বাবাকে প্রথমে ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসের মাধ্যমে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যেতে হয় সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে। সেখান থেকে দেওয়া হয় জন্মসনদ। কিন্তু কোনো ভুল সংশোধন করতে হলে সেটি আর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে করা যাবে না। সেক্ষেত্রে যেতে হবে সদরঘাটে অবস্থিত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। এছাড়া জন্মসনদ নিতে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করে যেতে হয় সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে। সেখানে জমা দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তথ্য ইনপুট দেন। পরে সেটি ভেরিফায়েড হয়ে আসে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে।
দক্ষিণ সিটির বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমি অনলাইনে ফরম পূরণ করি। সব প্রক্রিয়া মেনে কাজ শেষে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে গেলে তারা জানান, সার্ভার জটিলতায় ব্যাংকের চালান নাকি এন্ট্রি নিচ্ছে না। নিবন্ধন প্রক্রিয়া বন্ধ আছে। কখন ঠিক হবে কেউ বলতে পারছে না।’
অন্যদিকে একই বিড়ম্বনায় পড়েছেন তাওসিফ আলম নামে দক্ষিণ সিটির আরেক বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘আমার জন্মনিবন্ধনের নামে ছোট ভুল ছিল, সেটি সংশোধনের জন্য আবেদনের পর সংশোধন করা হয়। তবে এটি করতেও দালাল ধরতে হয়েছে। কিন্তু সংশোধনের পরে দেখি, আবার আরেকটি নামের মধ্যে ভুল। এবার আবার সেটি ঠিক করতে গিয়ে শুনি এখন নাকি সার্ভার বন্ধ রয়েছে। এ জটিলতা থেকে কীভাবে মুক্তি পাব বুঝতে পারছি না। সব জরুরি কাজ এ সনদের জন্য আটকে আছে। ’
এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১ এর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রেশন সহকারী মো. গিয়াসউদ্দিন বলেন, প্রায় দেড় মাস ধরে তাদের সার্ভারে সমস্যা। নতুন কোনো নিবন্ধন হচ্ছে না। তবে তিনি নাম সংশোধন হচ্ছে বলে দাবি করেন। এ বিষয়ে জানার জন্য দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামসুল কবীরকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
অন্যদিকে এ বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বলেন, ডিএনসিসিতে আপাতত সার্ভার জটিলতা নেই। আগামী মাস (আগস্ট) থেকে তারা কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন বলে আশা করছেন। এতে ভোগান্তি লাগব হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।