বিনোদন ডেস্ক : বিশাল অঙ্কের টাকার অফার নিয়ে বিপাশা হায়াতের সামনে হাজির হলেন এক বিজ্ঞাপন নির্মাতা। ‘আপা আমাদের ক্লায়েন্টের খুব ইচ্ছা আপনাকে দিয়ে বিজ্ঞাপনটি করানো। আপনি যদি রাজি হতেন তাহলে আমরা খুবই খুশি হতাম।’
নির্মাতা পক্ষ নিশ্চিত ছিল বিশাল অঙ্কের এই অফার পেয়ে যেকোনো তারকাই একবাক্যে রাজি হয়ে যাবেন। কিন্তু ঘটল উল্টোটা। সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিপাশা হায়াত বললেন, ‘আপনাদের প্রডাক্টের রেপুটেশন তো ভালো না। আমি যদি আপনাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন করি তাহলে অনেকেই বিভ্রান্ত হতে পারেন। তাদের ক্ষতি হতে পারে। আমি এটা করব না।’
‘টাকার অঙ্ক যদি দ্বিগুণ করে দিই তাহলেও করবেন না?’ ‘না, দশ গুণ করে দিলেও করব না’-বিপাশা হায়াতের স্পষ্ট উত্তর। আরেকটু ভেঙে বললেন তিনি, ‘দেখুন, দেশের মানুষের প্রতি আমার একটা দায়বদ্ধতা আছে। টাকার বিনিময়ে আমি এমন কিছু করতে পারি না যাতে অন্য কারো ক্ষতি হয়। ’
কটাক্ষ করে নির্মাতা পক্ষ বলল, ‘কী যে বলেন আপা, এই সময়ে এসে কেউ এত কিছু ভাবে নাকি?’ বিপাশা হায়াত কোনো উত্তর দিলেন না। শুধু ছোট করে বললেন, ‘সেটাই!’ হতাশ হয়ে ফিরে গেল নির্মাতা পক্ষ।
বিপাশা হায়াতের জন্মদিনে এমন একটি ঘটনাই উল্লেখ করলেন সাংবাদিক ও নাট্যকার শামীম শাহেদ। আজ একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও চিত্রকর বিপাশা হায়াতের ৫১তম জন্মদিন। এই দিনে নিজের ফেসবুক পেজে বিপাশাকে নিয়ে এমন নির্লোভ গল্প শেয়ার করেছেন শাহেদ। নেটিজেনরাও এমন ঘটনা শুনে বস্ময় প্রকাশ করেছেন। বিপাশার এমন গল্প জেনে অনেকেই আনন্দিত।
শামীম শাহেদ বললেন, ‘আমি তখন প্রথম আলোতে কাজ করি। খবর এসে পৌঁছল আমাদের কানে। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, এমন মানুষের সংখ্যা আমাদের আশপাশে নেহায়েত কম না। অনেক পরিচিত মুখের অসচেতন পদক্ষেপের কারণে যখন অনেক মানুষের ক্ষতি হতে দেখি তখন এই মানুষগুলোর কথাই বারবার মনে আসে। আজকের এই দিনে বিপাশা হায়াতকে উপলক্ষ করে স্রোতের বিপরীতে চলা সবার প্রতি রইল অসীম শ্রদ্ধা। শুভজন্মদিন বিপাশা হায়াত। আমাদের বড় আপা। ’
বিপাশা হায়াত ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর থেকেই পেয়েছেন সাংস্কৃতিক পরিবার ও পরিবেশ। বাবা আবুল হায়াত একজন গুণী অভিনেতা। তাই অভিনয়ের সঙ্গে বিপাশার পরিচয় সেই ছোটবেলা থেকেই। ১৯৯০ সাল থেকেই শিল্পকলার জগতে তার বিচরণ। ১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে মাস্টার্স করেছেন এই গ্ল্যামারাস অভিনেত্রী। পড়াশোনার পাশাপাশি অভিনয় করে দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছেন। একসময় টিভি নাটকে তৌকীর-বিপাশা জুটি খুব জনপ্রিয় ছিল। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও।
নব্বইয়ের দশকে বিপাশা হায়াতের উত্থান টিভি নাটকের মধ্য দিয়ে। ক্যারিয়ারে নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অনেক চরিত্রকেই তিনি জীবন্ত করে তুলেছেন। তার অর্জনের ঝুলিতে আছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। হুমায়ূন আহমেদের ‘আগুনের পরশমণি’তে অভিনয় করে এই পুরস্কার জয় করে নেন তিনি।
অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদের সঙ্গে বিয়ের পর অভিনয় ছেড়ে সংসারে মনোযোগী হয়ে পড়েন বিপাশা। এই দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে। বড়টি মেয়ে আরিশা আহমেদ, ছোট ছেলে আরিব। সংসার সামলানোর পাশাপাশি বর্তমানে ছবি আঁকা ও চিত্রনাট্য লেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। জয়নুল গ্যালারি, প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের ডিভাইন আর্ট গ্যালারিসহ দেশে-বিদেশে বহু স্থানে বিপাশার আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়েছে।
এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘জয়যাত্রা’ ছবিতেও আজিজুল হাকিমের বিপরীতে অনবদ্য অভিনয় করেন তিনি। এটি পরিচালনা করেছিলেন বিপাশার স্বামী তৌকীর আহমেদ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।