বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সোনার দাম। টানা কয়েক দফায় দাম বেড়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আউন্স প্রতি ৪ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে সোনার দাম। অন্যদিকে বড় এক লাফে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে রুপার দামও।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।
এদিন স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্স সোনার দাম ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৩৯৭ দশমিক ১৬ ডলারে পৌঁছেছে। তবে, সেশনের শুরুতে ৪ হাজার ৪০০ ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে রেকর্ড ৪ হাজার ৪০০ দশমিক ২৯ ডলারে পৌঁছেছিল মূল্যবান হলুদ ধাতুটির দাম।
আর ফেব্রুয়ারিতে ডেলিভারির মার্কিন সোনার ফিউচার মূল্য শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশ বেড়ে আউন্স প্রতি ৪ হাজার ৪৩০ দশমিক ৩০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৬৯ দশমিক ৪৪ ডলারে পৌঁছেছে স্পট রুপার দাম। ইতিহাসের প্রথমবারের মতো এ উচ্চতা ছুঁয়েছে ধাতুটির দাম।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত বুলিয়নের দাম ৬৭ শতাংশ বেড়েছে, যা একাধিক রেকর্ড ভেঙেছে এবং প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্সে ৩ হাজার ও ৪ হাজার ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। ১৯৭৯ সালের পর এটি তার বৃহত্তম বার্ষিক লাভের পথে রয়েছে। শক্তিশালী বিনিয়োগ প্রবাহ এবং ক্রমাগত সরবরাহ সীমাবদ্ধতার কারণে রুপার দাম গত বছরের তুলনায় ১৩৮ শতাংশ বেড়েছে, যা সোনাকেও উল্লেখযোগ্যভাবে ছাড়িয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরও সুদের হার কমানোর ক্রমবর্ধমান প্রত্যাশা এবং নিরাপদ আশ্রয়স্থলের চাহিদার কারণে সোমবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম প্রথমবারের মতো ৪ হাজার ৪০০ ডলার প্রতি আউন্স স্তর অতিক্রম করেছে। রুপাও এই উত্থানে যোগ দিয়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছেছে।
স্টোনএক্সের সিনিয়র বিশ্লেষক ম্যাট সিম্পসন বলেন, ডিসেম্বর সাধারণত সোনা ও রুপার জন্য ইতিবাচক মাস। এই সময়ে সোনার দাম এর মধ্যেই ৪ শতাংশ বেড়েছে। বছরের শেষের দিকে বিনিয়োগকারীরা সাবধানভাবে পদক্ষেপ নেবে, কারণ মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা আরও বাড়তে পারে।
রয়টার্সের কারিগরি বিশ্লেষক ওয়াং তাও বলেন, স্পট মার্কেটে সোনার দাম প্রতি আউন্সে ৪ হাজার ৪২৭ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে, কারণ এটি ৪ হাজার ৩৭৫ ডলারে একটি মূল প্রতিরোধ ভেঙেছে।
ঐতিহ্যগতভাবেই নিরাপদ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত সোনা। এখন ভূ-রাজনৈতিক ও বাণিজ্য উত্তেজনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্থিতিশীল ক্রয় এবং আগামী বছরে কম সুদের হারের প্রত্যাশা— সব মিলিয়ে সোনার দিকে আরও বেশি ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া, ডলারের দূর্বল হয়ে পড়াও বিদেশি ক্রেতাদের জন্য ধাতুটিকে সস্তা করে তুলেছে।
ফেডারেল রিজার্ভ সতর্কতার ইঙ্গিত দিলেও বাজার এর মধ্যেই আগামী বছরের জন্য দুটি মার্কিন সুদের হার কমানোর জন্য মূল্য নির্ধারণ করছে। সোনার মতো অ-ফলনশীল সম্পদ কম সুদের হারের পরিবেশে লাভবান হওয়ার প্রবণতা রাখে।
স্টোনএক্সের সিনিয়র বিশ্লেষক ম্যাট সিম্পসন আরও বলেন, ২০২৬ সালে দুটি ফেড সুদের হার কমালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের গতি দ্রুততর হবে এবং এর ফলে সোনার দাম আরও বাড়বে।
এদিকে দেশের বাজারে ইতোমধ্যেই ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে সোনা। টানা চার দফায় দাম বেড়ে ২ লাখ ১৮ হাজার ১১৭ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে সোনার ভরি। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) থেকে কার্যকর এ দামই দেশের ইতিহাসে এক ভরি সোনার সর্বোচ্চ দর।
নতুন দাম অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ২ লাখ ১৮ হাজার ১১৭ টাকা। পাশাপাশি ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা ২ লাখ ৮ হাজার ২০২ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা ১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৫৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে দেশের বাজারে।
এখন বিশ্ববাজারে নতুন উত্থানে দেশের বাজারে সোনার দাম আরও এক দফা বৃদ্ধির সম্ভাবনা জেগে উঠেছে। সেইসঙ্গে নতুন উত্থান দেখা যেতে পারে রুপার দামেও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



