জুমবাংলা ডেস্ক : মাস ব্যবধানে বিশ্ববাজারে টনপ্রতি চিনির দাম কমেছে ১০০ ডলারেরও বেশি। অথচ এর প্রভাব নেই দেশের বাজারে। বিক্রি হচ্ছে আগের চড়া দরে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, খোলা চিনির দাম বেশি। আবার এরই মধ্যে প্যাকেটজাত চিনির দাম আরও ৪ টাকা বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে।
ইন্টারন্যাশনাল সুগার অর্গানাইজেশনের (আইএসও) তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর এক টন অপরিশোধিত চিনির মূল্য ছিল ৭০০ ডলার। একই মাসের ২৯ তারিখে ১০০ ডলারের বেশি দাম কমে ৫৯১ ডলারে আসে প্রতি টন। পরে অপরিশোধিত চিনির প্রতি টনের দাম বেড়ে ৩১ জানুয়ারি হয় ৫৯৭ ডলার এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি হয় ৬২৪ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, প্রতি ডলারের দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা হলেও, ব্যবসায়ীরা বলছেন প্রতি ডলারের জন্য তাদের গুনতে হচ্ছে ১২৪ টাকা। সুতরাং, প্রতি ডলার ১২৪ টাকা দরে এক টন চিনির আমদানি মূল্য হয় ৭৭ হাজার ৩৭৬ টাকা। এতে কেজিতে ৩৫ টাকা ভ্যাট যুক্ত করে দাম নির্ধারণ হয় ১১২ টাকা। আবার এর সঙ্গে যুক্ত হয় কোম্পানির আনুষঙ্গিক খরচ।
কিন্তু বাজার বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। পবিত্র রমজান মাস আসতে আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি, তার মধ্যে এখনও অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। ফলে চিনির দামের উত্তাপে ক্রেতাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। নাভিশ্বাস ওঠা এক ক্রেতা বলেন, ব্যবসা হলো রসুলের সুন্নত। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ীরা হলো ডাকাত।
যদিও পাইকারিতে মাসের ব্যবধানে ৫০ কেজির বস্তার দাম ৩০০ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৯০ টাকা। অথচ খুচরায় এক মাস আগে যে দামে বিক্রি হয়েছে, সেই দামই বাজারে বিদ্যমান। রাজধানীর বাজারে প্রতিকেজি খোলা চিনির দাম ১৪০ টাকা। আর বাজারে খোঁজ নেই প্যাকেটজাত চিনির। যেখানে প্রতি কেজি খোলা চিনির সরকারনির্ধারিত দাম ১৩০ টাকা এবং প্যাকেটজাত ১৩৫ টাকা।
এমন বাজার পরিস্থিতিতে কোম্পানির প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে নতুন দরের পণ্য নিয়ে বাজারে হাজির হচ্ছেন- এমন দাবি করে এক বিক্রেতা বলেন, এখন আবার নতুন দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। ক্রেতা তো ১৪৪ টাকা গায়ের রেট দিয়ে কিনবে না। এর জন্যই মূলত আমরা চিনি রাখি না।
এদিকে ৮ ফেব্রুয়ারি অপরিশোধিত প্রতি টন চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ৮ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আমদানি শুল্ক কমায় আগামী সপ্তাহের মধ্যে দেশের বাজারে ভোজ্যতেল ও চিনির নতুন দাম নির্ধারণ করা হবে।
সে অনুসারে ২০ ফেব্রুয়ারি সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এখনও নির্ধারণ হয়নি চিনির দাম। তবে এতে বাজারে প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সৈয়দ বসির উদ্দিন।
এ সময় আমদানি মূল্য ও মিল পর্যায়ে দামের পার্থক্য যাচাই করার কথাও বলছেন তিনি। সৈয়দ বসির উদ্দিন বলেন, বাইরে থেকে আজ পণ্য কেনার ক্রয়াদেশ দিয়েছি। এটি আসবে ২ মাস পরে। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী দেখছেন কোথায় বাজারমূল্য ওঠানামা করছে, সেই অনুযায়ী তারা বাজার অস্থির করছেন।
এদিকে শুধু শুল্ক ছাড় দিলে হবে না। আমদানি করা পণ্য বিশ্ববাজার থেকে দেশের বাজারে এলে দামের তারতম্য বেশি না হয়, সেদিকেও সরকারকে নজর দেয়ার তাগিদ অর্থনীতিবিদদের। এ নিয়ে অর্থনীতিবিদ ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, ‘অর্থনীতি একটি অপরটির সঙ্গে সংযুক্ত। আমি একটি সিদ্ধান্ত নিলাম; কিন্তু যদি সেটি ফলোআপ না করি, তাহলে সেই সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত ফলাফল ভোক্তারা পাবেন না।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বছরে দেশে চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ১৯ লাখ টন। এর মধ্যে রমজানে চাহিদা থাকে ৩ থেকে ৪ লাখ টনের। বিপরীতে শুধু দেশে উৎপাদিত হয় ৫০ হাজার টন। বাকি চিনি করা হয় আমদানি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।