বিনোদন ডেস্ক : জনপ্রিয় ও শক্তিমান অভিনয়শিল্পী ফজলুর রহমান বাবু। অভিনয়ের পাশাপাশি গান দিয়েও জয় করেছেন ভক্তদের হৃদয়। চলতি বছরে শুরুতেই নতুন একটি সিনেমায় যুক্ত হয়েছেন তিনি। সিনেমার নাম ‘মেঘনা কন্যা’। সিনেমাটিতে নেতিবাচক চরিত্রে দেখা যাবে এই অভিনেতাকে।
‘মেঘনা কন্যা’ সিনেমার বিষয়ে এই অভিনেতা বলেন, গ্রাম-শহরের দুই নারীর শেকল ভাঙার গল্প নিয়ে ফুয়াদ চৌধুরীর পরিচালনায় নির্মিত হবে ‘মেঘনা কন্যা’ সিনেমা। যেখানে নারী পাচারে গল্পও উঠে আসবে। এখানে আমার চরিত্রটি দালালের। গল্পে একটি সামাজিক মেসেজ রয়েছে। আমি চেষ্টা করব, শতভাগ মেধা, মনন ও শ্রম দিয়ে কাজটি করার। আশা করছি টিমের সঙ্গে একটি ভালো কাজ উপহার দিতে পারব।
ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটকের পাশাপাশি দুই ডজনের বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু। যার বেশিরভাগই প্রচলিত ধারার সিনেমার থেকে বেরিয়ে ভিন্ন ধারার। তবে এই অভিনেতার মতে, সিনেমার বাণিজ্যে আলাদা কোন উপাদান সেই। তার ভাষ্য, দর্শক যেটা দেখবে, সফল হবে, সেটাই বাণিজ্যিকভাবে সফল সিনেমা। দর্শক না দেখলে সেটা বানিজ্যিকভাবে অসফল। বানিজ্যের কোন নির্দিষ্ট উপাদান নেই। আবার সব বাণিজ্যিক সফল সিনেমাও ভালো সিনেমা নয়। কারণ অনেক ভালো সিনেমাও আছে পৃথিবীতে যেটা বানিজ্যিক সফলতা পায়নি।
নানা সময়ে শিল্পীদের নাটক ও সিনেমার শিল্পী বলে আলাদা শ্রেণীবিন্যাস করে ফেলেন অনেকেই। বিশেষ করে বিগত কয়েক বছরে দেখা গেছে, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে প্রচলিত ধারার সিনেমার শিল্পীদের চেয়ে এগিয়ে নাটকে অভিনয় করা শিল্পী-কলাকুশলীরা। এ নিয়েও কম কথা হয়নি। এফডিসি ঘরনার অনেকের কণ্ঠে এ নিয়ে ক্ষোভ বাক্যও শোনা গেছে। বিষয়টিতে অবগত ফজলুর রহমান বাবুও। তবে তার মতে শিল্পীদের কাজের কোন নিদিষ্ট মাধ্যম থাকতে পারে না।
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘নাটকের মানুষ’ – এটার মানে কী? যে পুরস্কারগুলো পাচ্ছে সেটা কী নাটক করে পাচ্ছে, নাকি চলচ্চিত্রে করে পাচ্ছে? যে পুরস্কৃত হচ্ছেন সে তো চলচ্চিত্র করেই পাচ্ছেন। এমন তো না, নাটক টিভিতে প্রচার হয়েছে সেটার জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। একজন অভিনেতা বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করতে পারে। আমি মনে করি, অভিনেতার গায়ে কোন সিল থাকার কথা না।
বেশ কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী এই অভিনেতা নিজের প্রসঙ্গে টেনে বলেন, আমি সবচেয়ে বেশি নাটক করি বেতারে। এখন যদি বলেন, বেতারের শিল্পী চলচ্চিত্রের পুরস্কার নিয়ে গেল! এটা বলা তো ঠিক হবে না। আমি তো চলচ্চিত্র করেই চলচ্চিত্রের পুরস্কার পাচ্ছি।
সাম্প্রতিক সময়ের উদাহারণ দিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি দেশে এবং বিদেশে নানা জায়গায় আমাদের যে চলচ্চিত্র প্রশংসিত হয়েছে সেই চলচ্চিত্রগুলো কিন্তু স্বাধীন চলচ্চিত্র। সেই জায়গা থেকে পুরস্কারে ক্ষেত্রেও এর অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালক-প্রযোজকরা এগিয়ে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক।
যারা প্রশ্ন তুলে তাদের বিষয়ে ফজলুর রহমান বাবু বলেন, প্রশ্নগুলো তুলছে যারা মাত্র চলচ্চিত্রে কাজ করে, অন্য কোনো মাধ্যমে কাজ করে না। কিন্তু তারাই চলচ্চিত্রের শিল্পী বিষয়টা সেরকম না। আমি তাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি- আপনি চলচ্চিত্র করেন, চাইলে টেলিভিশনেও কাজ করতে পারেন। আপনাকে তো কেউ বলেনি, আপনি টিভি-ওটিটিতে কাজ করবেন না। আপনার যোগ্যতা থাকলে সব জায়গায় কাজ করবেন।
এ প্রসঙ্গে ক্রিকেটের উদাহারণ দিয়ে তিনি বলেন, যার যোগ্যতা আছে সে টেস্টও খেলে, ওয়ানডেও খেলে, টি-টোয়েন্টিও খেলে। সে তো মূলত ক্রিকেটার। আবার কেউ আছেন যে কোনো একটি ফরমেটে খেলে। যার তিন ফরমেটে খেলার যোগ্যতা আছে সে সব জায়গায় খেলে। যদি পারে, তিন ফরমেটে খেললে তো সমস্যা নেই।
নাটকের বা সিনেমায় অভিনয়শিল্পী বিষয়টি না দেখে চরিত্রের চাহিদায় শিল্পী নির্বাচনের পুরো দায়িত্ব নির্মাতা ও প্রযোজকের। এ বিষয়ে তিনি বলেন, চরিত্রের প্রয়োজনে কাকে নিবেন- এটা এখন একজন চলচ্চিত্রকার কিংবা প্রযোজকের ব্যাপার। আমি যদি ছোট্ট উদাহারণ দেই, তৌকির আহমেদও একজন স্বাধীন নির্মাতা। তার অজ্ঞাতনামা সিনেমায় নিপুণ অভিনয় করেছিলেন। এর মানে চরিত্রের চাহিদা অনুযায়ী শিল্পী নির্বাচন হয়।
যোগ্যতার মানদণ্ড বিচারে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিক দেখে আক্ষেপ করতেও দেখা গেছে কয়েকজন তারকার। এ প্রসঙ্গে ফজলুর রহমান বাবু বলেন, যারা জুড়ি বোর্ডে থাকেন তারা প্রত্যেকেই যোগ্য লোক। এখানে একজন সদস্য না, আমার জানা মতে ১২-১৩ জন থাকে। যারা প্রশ্ন তুলেন, তারা যদি বেশি যোগ্য হোন সেক্ষেত্রে তাদের জুড়ি বোর্ডে থাকা উচিৎ। তবে হ্যাঁ, দু-একটি এদিক সেদিক হতে পারে! ১৯-২০ হতে পারে, ১০-২০ হয় না।
সোনালী সময়ের অনেক নির্মাতাই মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও সময়ের সঙ্গে চলতে পারছেন না! শুনতে অপ্রিয় হলেও সত্যি কথাটি বলতে দ্বিধা নেই ফজলুর রহমান বাবুর। তার ভাষ্য, বয়সের কারণেই হোক বা যে কারণেই হোক, তাদের অনেকেই সময়ের সঙ্গে যেতে পারছেন না। আজ থেকে ২০ বছর আগে দর্শকদের যে ধরনের টেস্ট লেভেল ছিল তার এখন পরিবর্তন হয়েছে। যিনি সময়ের সঙ্গে থাকবেন তিনি সবার চোখে পড়বেন, যিনি সময়ের সঙ্গে চলতে পারবেন না তিনি পিছিয়ে পড়বেন- এটাই স্বাভাবিক। এখানেও অনেক মেধাবী মানুষ আছেন, তারা যদি সারাবিশ্বের চলচ্চিত্রে খোঁজ-খবর রাখেন, পড়াশোনা করেন, নিজেকে আপডেট রাখেন তাহলে তারাও পারবে।
এফডিসির সমিতির দিকে ইঙ্গিত করে ফজলুর রহমান বাবু বলেন, যেখানকার বেশিরভাগ কর্মকাণ্ডই বিতর্কের জন্ম দেয়, সেখানে আমাদের কেন দেখবেন। আমরা তো বিতর্কের মধ্যে থাকতে চাই না, শিল্পচর্চা করতে চাই। তবে কাজের ক্ষেত্রে কোন ধারা নেই, কেউ ভালো করে, কেউ খারাপ করে। যদি মূলধারার কথা বলেন, আমরাই মূলধারায় আছি। কারণ আমার যে কাজ করি এগুলো জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ, সাংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে। আমাদের জীবন-যাপনের সঙ্গে যেটা জড়িত সেটা নিশ্চয়ই মূলধারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।