জুমবাংলা ডেস্ক : বৃহস্পতিবার বিয়ের আসরে বসেছিলেন সুনামগঞ্জের তমা রানী তালুকদার। যে চাকরির স্বপ্নে দীর্ঘ অপেক্ষার পর বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন, তার বয়সও ফুরিয়ে আসছে। এমন অবস্থায় শুক্রবার ছিল তাঁর সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার দিন। তাই বিয়ের পরদিন ভোরেই ছুটে যান সুনামগঞ্জ শহরে।
শেষ পর্যন্ত তমার স্বপ্ন থমকে গেছে সুনামগঞ্জ শহরের সড়কের তীব্র যানজটে। কেন্দ্রে সাড়ে ৯টায় পৌঁছানোর নির্দেশনা থাকলেও তমা পৌঁছান পৌনে ১০টায়। যে কারণে আর পরীক্ষায় বসতে পারেননি ওই নববধূ। পরে পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁকে ঢুকতে দেওয়া না হলেও পার্শ্ববর্তী সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের কয়েকজন পরীক্ষার্থীকে ওই কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তমা। একই কথা জানান সেখানে উপস্থিত কয়েকজন অভিভাবকও।
শুক্রবার সুনামগঞ্জ জেলায় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। যেখানে ১৫ হাজার ১০৭ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। অংশ নিয়েছেন ১০ হাজার ৮০৭ জন। শহরের ২৭টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। এতে করে পরীক্ষার দিন শহরের প্রতিটি সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এদিন সকাল ৮টা থেকেই সড়কগুলোতে গতি কমতে থাকে যানবাহনের। অনেক পরীক্ষার্থীকে শহরতলির ওয়েজখালী থেকে হেঁটে যেতে দেখা গেছে নিজ নিজ কেন্দ্রে। অনেকেই আবার তমার মতো ব্যর্থ হয়েছেন নির্দিষ্ট সময়ে কেন্দ্রে পৌঁছতে।
ঘটনাবহুল দিনে সবচেয়ে আলোচিত ছিল তমার বিষয়টি। তমা রানীর ঘটনায় মর্মাহত হন সেখানে উপস্থিত পরীক্ষার্থী ও তাদের স্বজন। তাদের অনেকেই তমার জন্য সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের অনুরোধ করেন। তবে নিয়ম ভঙ্গের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তারা সেটি করেননি।
তমার বিষয়টির পর সেখানকার কয়েকজন অভিভাবক জানান, পাশের সরকারি এসসি বালিকা কেন্দ্রে ঢোকানো হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। নববধূ হয়েও মেয়েটি শুধু পরীক্ষা দিতে এতদূর ছুটে এসেছে। তাকে কেন ঢুকতে দেওয়া হলো না?
সেখানে দায়িত্বে থাকা এসআই দুলাল গণমাধ্যম কর্মী ও উপস্থিত লোকজনকে জানান, তারা ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তিনি অনুমতি দেননি।
বিকেলে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইনচান মিঞা জানান, ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত পরীক্ষা। সাড়ে ৯টায় উপস্থিত হওয়ার কথা পরীক্ষার্থীদের। ৯টা চল্লিশের পরেও কাউকে কাউকে ঢোকানো হয়েছে। এই মেয়েটি আরও পরে এসেছে, তখন পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে এবং কেন্দ্রে প্রবেশের নির্ধারিত সময়ের অনেক বেশি দেরি হয়ে গিয়েছিল। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তমার জন্য কিছু করা সম্ভব হয়নি।
ম্যাজিস্ট্রেট ইফতিসাম প্রীতি জানান, তিনি নির্দেশনা অনুসারে দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্য কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের পরে কাউকে ঢোকানো হয়েছে কিনা সেটার সত্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন আছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহন লাল দাস জানান, পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন ৪ হাজার ২৯৮ জন। ডুংরিয়া কেন্দ্রের একজন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং ওই কেন্দ্রের আরেকজনকে ওএমআর প্রশ্নপত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।