জুমবাংলা ডেস্ক : ভাষা-সংস্কৃতি, ধর্ম-বর্ণসহ নানা ভেদাভেদ ভুলে শুধু ভালোবাসার টানে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন বিদেশি অনেক তরুণ-তরুণী। ভিনদেশি ছেলেমেয়েদের বিয়ের খবর প্রচার হলেও তাদের সংসার জীবন অনেকটাই আড়ালে থেকে যায়। বিয়ে করে অনেকে সুখের জীবন কাটান, আবার অনেকে ফিরে যাওয়ার পর কোনও যোগাযোগ রাখেননি। এমনই এক ঘটনা ঘটে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির জামালপুর বাজারের সঞ্জয়ের সঙ্গে। প্রেমের টানে তার কাছে ব্রাজিল থেকে ছুটে আসেন সাওপাউলোর তরুণী জেইসা ওলিভেরিয়া সিলভার। বিয়ের পর চার দিনের সংসার জীবন ছিল তাদের। ব্রাজিলে ফিরে যাওয়ার পর সঞ্জয়ের সঙ্গে আরও কোনও যোগাযোগ রাখেননি সিলভা।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় সঞ্জয়ের বাবা-মা, স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে। স্বজনরা জানান, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে জামালপুর বাজারের মিষ্টির দোকানি বলাই ঘোষের ছেলে শ্যামলী পরিবহনের সুপারভাইজার সঞ্জয় ঘোষের সঙ্গে ফেসবুকে প্রেম হয় ব্রাজিলের সাওপাউলোর বাসিন্দা ও সরকারি চাকরিজীবী ২৯ বছর বয়সী জেইসা ওলিভেরিয়া সিলভার। দেড় বছর প্রেমের পর তারা সিদ্ধান্ত নেন একসঙ্গে থাকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল ব্রাজিল থেকে রওনা হয়ে ৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকায় পৌঁছান সিলভা।
বিমানবন্দরে সিলভাকে বরণ করেন সঞ্জয়। পরে সিলভাকে নিয়ে সঞ্জয় চলে আসেন নিজ বাড়িতে। পরের দিন সকাল থেকেই ব্রাজিল কন্যার প্রেমের টানে ছুটে আসার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিভিন্ন স্থানের নারী-পুরুষরা তাকে একনজর দেখতে সঞ্জয়ের বাড়িতে ভিড় জমান। এ অবস্থায় বালিয়াকান্দির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম রকিব হায়দারের কাছে আবেদন করলে পুলিশ তাদের নিরাপত্তা বাড়ান। সঞ্জয়ের বাড়িতে একদিন থাকার পর ৫ এপ্রিল তারা চলে যান ঢাকায়। পরে ৬ এপ্রিল রাজধানী ঢাকার মিরপুর এলাকায় সঞ্জয় ঘোষের এক দাদার বাসায় তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের বিষয়টি তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছিলেন তৎকালীন জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী সরদার ও প্রতিবেশীরা। তবে বিয়ের বিষয়ে সঞ্জয় ও তার পরিবার কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন।
২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল বিয়ের পর ১০ এপ্রিল ঢাকা ছেড়ে ব্রাজিলে পাড়ি জমান সিলভা। এরপর পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাদের। সিলভা ব্রাজিলে ফিরে তার ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দেন। এমনকি যে সিম ব্যবহার করতেন সেটিও বন্ধ করে রাখেন। ফলে সঞ্জয়ের ইচ্ছা থাকার পরেও সিলভার সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। বিয়ের পর তাদের সংসার টিকেছিল মাত্র চার দিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সঞ্জয়ের এক আত্মীয় বলেন, সঞ্জয়কে ভালোবেসেই সিলভা এসেছিলেন এবং তাদের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন থাকার পর সিলভা দেশে ফিরে গিয়ে সঞ্জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
তবে সঞ্জয়ের দাবি, ‘সিলভা আমার শুধু ভালো বন্ধু ছিল। এর বাইরে কিছুই না। আমার কাছ থেকে বাংলাদেশের গল্প শুনে সিলভা এ দেশে আসে। ব্রাজিলে চলে যাওয়ার পরও তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। তবে ২০১৮-এর পর থেকে সিলভার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।’
সঞ্জয়ের বাবা-মা কোনও কথা বলতে রাজি হননি। তবে তারা জানিয়েছেন, ব্রাজিলে চলে যাওয়ার পর সিলভার সঙ্গে তাদের আরও কোনও যোগাযোগ হয়নি।
ফেসবুকে প্রেম ও বিদেশ থেকে তরুণ-তরুণীদের আসা এবং সংসার না টেকার বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ আ. হালিম তালুকদার বলেন, সোশাল মিডিয়া ফেসবুকের মাধ্যমে যেসব সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার কোনও ভিত্তি নেই। এখানে আবেগ আর মিথ্যার উপস্থিতি বেশি। আবেগ আর মিথ্যার ওপর নির্ভর করে কোনও বন্ধুত্ব বা ভালোবাসা টিকে না। আমাদের দেশের বাঙালিরা বেশিরভাগই সংস্কৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। এ কারণে অল্পদিনেই বিচ্ছেদ বা বন্ধুত্ব ভেঙে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।