জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের মোবাইল ফিনটেক জগতে ২০২৪ সালটি যে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ লিমিটেড ২০২৪ সালে যেভাবে রাজস্ব ও মুনাফার রেকর্ড গড়েছে, তা শুধু প্রতিষ্ঠানটির নয়, গোটা দেশের অর্থনীতির জন্যও একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে। বিকাশ লাভের আয় বৃদ্ধি যেন বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির সক্ষমতা ও সম্ভাবনার বাস্তব প্রতিফলন।
Table of Contents
বিকাশ লাভের আয় বৃদ্ধি: পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ
২০২৪ সালে বিকাশের মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৫,০৫৮ কোটি টাকায়, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৮৬৭ কোটি টাকা বা ২১ শতাংশ বেশি। এ বছর প্রতিষ্ঠানটি ৩১৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকার নিট মুনাফা অর্জন করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২০৪ শতাংশ বেশি। এই রেকর্ড পরিসংখ্যান বিকাশের ব্যবসায়িক কৌশল, প্রযুক্তি-নির্ভর সেবা এবং গ্রাহকের আস্থার মিশ্রণে সম্ভব হয়েছে।
২০১১ সালে যাত্রা শুরু করা বিকাশ ২০১৪ সালে করেছিল মাত্র ৫৭৩ কোটি টাকার আয় এবং ১৯ কোটি টাকার মুনাফা। মাত্র এক দশকে আয় ৯ গুণ এবং মুনাফা ১৭ গুণ বেড়ে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্থিতি এবং দৃষ্টিভঙ্গির সুস্পষ্ট উন্নতি ঘটিয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংকের আর্থিক অবদান বিকাশের সাফল্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
২০২১ সালে বিকাশ লোকসানে ছিল ১১৭ কোটি টাকা। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়িয়ে ১৮ কোটি টাকা এবং ২০২৩ সালে ৯৯ কোটি টাকা মুনাফা করে। ২০২৪ সালে সেই মুনাফা তিন গুণেরও বেশি বেড়ে ৩১৫ কোটির গণ্ডি ছাড়ায়, যা প্রতিষ্ঠানটির পরিকল্পিত বিনিয়োগ, টেকসই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য এবং ডিজিটাল সার্ভিস সম্প্রসারণের সাফল্যের প্রমাণ বহন করে।
আর্থিক সাফল্যের কারণ ও ব্যবসায়িক কৌশল
বিকাশের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং ‘পেশেন্ট ক্যাপিটাল’ ভিত্তিক বিনিয়োগ। সিএফও মঈনুদ্দিন মোহাম্মদ রাহগীরের ভাষায়, “ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে আমরা প্রযুক্তি ও পরিষেবা অবকাঠামোয় ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করেছি।” প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের ডিজিটাল শিক্ষা, ন্যানো ঋণ, বিল পেমেন্ট, সঞ্চয় এবং মাইক্রো ক্রেডিটের মতো সেবায় নজর দিয়েছে।
প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিকাশ এখন দেশের প্রায় ৮ কোটি গ্রাহকের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। তাদের সাথে কাজ করছে ৩ লাখ ৩০ হাজার এজেন্ট এবং সাড়ে ৫ লাখ মার্চেন্ট পয়েন্ট। প্রযুক্তি-নির্ভর সেবা এবং গ্রাহক অভিজ্ঞতা উন্নয়নের জন্য বিকাশ ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে।
এই অংশীদারিত্বের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন মানি ইন মোশন (১৬.৪৫%), আলিপে সিঙ্গাপুর (১৪.৮৭%), আইএফসি (১০.৩৬%), এবং সফটব্যাংকের এসভিএফ টু বিম (৭.৩২%)। মূল মালিকানা ৫১% রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের হাতে। এই বহুজাতিক বিনিয়োগ বিকাশকে আন্তর্জাতিক মানের ফিনটেক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।
কর পরিশোধ ও সুদ আয়: অতিরিক্ত রাজস্ব উৎস
২০২৪ সালে বিকাশ সরকারকে কর বাবদ ১৮৯ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। একই সময়ে ব্যাংক সুদ থেকে আয় করেছে ১৯০ কোটি টাকা। এতে বোঝা যায়, বিকাশ শুধুমাত্র গ্রাহক সেবা থেকে নয়, আর্থিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতা থেকেও আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
ব্যবসায়িক উন্নয়নের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিকাশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরও বিস্তৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। প্রতিষ্ঠানটি দেশের গ্রামাঞ্চলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে প্রযুক্তিনির্ভর উপায় খুঁজছে। সাশ্রয়ী পরিষেবার মাধ্যমে আরও বেশি গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে চায় তারা। ক্যাশ আউট ফি ১৮.৫০ টাকা এবং ট্রান্সফার ফি ৫ টাকা করে নির্ধারণ করে তারা একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেকে অনন্য হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে বিকাশের অবদান
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিকাশের অবদান অগ্রগণ্য। দেশের মোবাইল ফিনটেক খাতে বিকাশের যাত্রা এবং অর্জন ভবিষ্যতের উদ্যোক্তাদের জন্য অনুপ্রেরণা। প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবনী উদ্যোগ এবং জনগণের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রচেষ্টা দেশের আর্থিক খাতকে আরও বিস্তৃত করেছে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
যদিও বিকাশ ইতোমধ্যেই অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছে, তবে সামনে রয়েছে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা, গ্রাহক সুরক্ষা, এবং রেগুলেটরি কাঠামোর চ্যালেঞ্জ। তবে বর্তমান সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবং বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনে মনোযোগ ধরে রাখলে, বিকাশ ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
বর্তমান সময়ে বিকাশ লাভের আয় বৃদ্ধি শুধু একটি কর্পোরেট সাফল্য নয়, এটি একটি জাতীয় অগ্রগতির প্রতীক। এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক – এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বকেয়া বিল পরিশোধে সাফল্য, পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহ আদানির
FAQs
- বিকাশ ২০২৪ সালে কত আয় করেছে?
বিকাশ ২০২৪ সালে মোট ৫,০৫৮ কোটি টাকা আয় করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২১% বেশি। - ২০২৪ সালে বিকাশের নিট মুনাফা কত ছিল?
২০২৪ সালে বিকাশ ৩১৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২০৪% বেশি। - বিকাশ কিভাবে আয় বাড়িয়েছে?
বিকাশ প্রযুক্তি, গ্রাহক অভিজ্ঞতা, এবং ডিজিটাল সেবার বিস্তার ঘটিয়ে আয় বৃদ্ধি করেছে। - বিকাশের মূল মালিক কারা?
ব্র্যাক ব্যাংক, মানি ইন মোশন, আলিপে সিঙ্গাপুর, আইএফসি এবং সফটব্যাংক বিকাশের মালিকানায় রয়েছে। - বিকাশ ভবিষ্যতে কি পরিকল্পনা করেছে?
বিকাশ গ্রামাঞ্চলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং আরও ব্যবহারকারী-বান্ধব পরিষেবা বিস্তারের পরিকল্পনা করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।