কালো বীজে চাষির সোনালি স্বপ্ন

Black Seed

জুমবাংলা ডেস্ক : রাজবাড়ীর বিভিন্ন অঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠে বাতাসে দোল খাচ্ছে সাদা ফুল। এসব ফুলের মাঝেই রয়েছে লুকায়িত ‘কালো সোনা’ খ্যাত পেঁয়াজের বীজ। আর কালো বীজেই রয়েছে চাষির সোনালি স্বপ্ন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কালো পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে এ জেলায়।

Black Seed

চাষিরা জানান, পেঁয়াজের দানা (বীজ) উৎপাদন অতি লাভজনক হলেও ঝুঁকিও রয়েছে শতভাগ। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে উৎপাদন ভালো ও লাভজনক হয়। আর বিরূপ হলেই মাথায় হাত পড়ে যায় চাষিদের।

জানা গেছে, পেঁয়াজ ও পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে রাজবাড়ীর মাটি ও আবহাওয়া অত্যন্ত উপযোগী। এ জেলার উৎপাদিত পেঁয়াজের বীজ গুণে ও মানে উৎকৃষ্ট। তাই সারা দেশের মধ্যে পেয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এ জেলা। দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ আসে এ জেলা থেকে। উৎপাদিত বীজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীতে ফরিদপুরী ও তাহেরপুরী জাতের বীজ আবাদ হয়ে থাকে। জেলায় চলতি বছর সদরে ৪২ হেক্টর, পাংশায় ৪৪ হেক্টর, কালুখালীতে ৪৪ হেক্টর, বালিয়াকান্দিতে ১০ হেক্টর ও গোয়ালন্দে ৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ হয়েছে। গত অর্থ বছরে ১৭২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ হলেও চলতি বছরে ২৯ হেক্টর জমিতে কম চাষাবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৫০০-৬০০ কেজি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদিত হলে এ বছর প্রায় ৮০ মেট্রিক টনেরও বেশি পেঁয়াজ বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন চাষিরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর ও বালিয়াডাঙ্গা এলাকায় ফসলি মাঠে জমি থেকে দুই ফুট উচ্চতায় সবুজ ডগায় গোলাকৃতি সাদা ফুল বাতাসে দোল খাচ্ছে। শেষ সময়ের পরিচর্যায় জমিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের পেঁয়াজ দানা চাষি মো. গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, ‘দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আমি পেঁয়াজ দানা চাষ করছি। এ বছর ছয় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষাবাদ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে পেঁয়াজের বীজ থেকে বাম্পার ফলনের আশা করছি।’

দৌলতদিয়া ইউনিয়নের তোরাপ শেখের পাড়া এলাকার পেঁয়াজের বীজ চাষি হুমায়ুন আহম্মেদ বলেন, ‘চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছি। এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করতে খরচ পড়ে ৫০-৬০ হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হয় দুই মণের বেশি যা দেড় লাখ টাকার অধিক বিক্রি করা যায়। আবহাওয়া ভালো থাকলে খরচ বাদে পেঁয়াজের বীজ চাষে লাভ হয় দ্বিগুণেরও বেশি। তাই এগুলো ‘কালো সোনা’ নামে খ্যাতি পেয়েছে।’

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, ‘এ উপজেলায় মোট পাঁচ হেক্টর জমিতে চাষিরা পেঁয়াজ দানা চাষাবাদ করেছে। কয়েকদিন ধরে রোদের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় আশঙ্কা রয়েছে পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন নিয়ে। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে চাষিরা অনেক লাভবান হবেন।’

স্ক্যান্ডাল ইস্যুতে প্রভাকে আইনি নোটিশ

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে রাজবাড়ী বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর হেক্টর প্রতি পাঁচ থেকে ছয় শ কেজি ফলন হবে। বীজের মানভেদে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে সেগুলো।’