যশোরের অভয়নগরে বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীকে মারধর, বালুতে পুঁতে ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বুধবার (৩০ জুলাই) অভয়নগর থানায় অভিযোগ দিতে গেলে তা নেওয়া হয়নি। পরদিন বৃহস্পতিবার স্থানীয় আর্মি ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী আসমা খাতুন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর নাম শাহনেওয়াজ কবীর টিপু, তিনি নওয়াপাড়ার জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজ নামে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন– অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির (পদ স্থগিত) সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনি এবং নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
আসমা খাতুনের অভিযোগে জানা যায়, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুকে কৌশলে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির পদস্থগিত সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির অফিসে ডেকে নিয়ে যান সৈকত হোসেন হিরা নামে এক ব্যক্তি। এ সময় আসাদুজ্জামান জনি ব্যবসায়ীকে মারধর ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা দাবি করেন। এরপর সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে আসাদুজ্জামান জনির প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ২ কোটি টাকা পাঠান। টাকা পেয়ে ওইদিন ব্যবসায়ী টিপুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপু গ্রামের বাড়ি উপজেলার চলিশিয়া থেকে মোটরসাইকেলে বাজারে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে হাসপাতাল গেট পার হলে সৈকত হোসেন হিরা তার গতিরোধ করেন। এরপর বেলা ৩টা পর্যন্ত তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ভুক্তভোগীর পরিবার জানতে পারে, তাকে আসাদুজ্জামান জনির ‘কণা ইকো পার্কে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই সময় বাদী সেখানে গেলে আসাদুজ্জামান জনি, সম্রাট হোসেন ও নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর, বুক পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে বালু চাপা দিয়ে আরও ২ কোটি টাকা দাবি করেন। ব্যবসায়ী টিপু বাধ্য হয়ে তার ম্যানেজারকে ফোন করে টাকা দিতে বলেন। এরপর পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ ও সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা পাঠান। ওই সময় মফিজ আরও ১ কোটি টাকার চেক আদায় করে জনির নামে কেনা তিনটি ও দিলীপ সাহার নামে আরেকজনের নামে কেনা তিনটিসহ মোট ছয়টি ১০০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে সই নিয়ে কাউকে কিছু বললে প্রাণনাশের হুমকি দেন।
আসমা খাতুন তার লিখিত অভিযোগের বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ৩০ জুলাই বিকালে অয়নগর থানায় গেলেও ওসি অভিযোগটি গ্রহণ করেননি। সে কারণে পরদিন স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে জমা দিই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালে কয়েক দফা ফোন দেওয়া হয় নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (পদস্থগিত) আসাদুজ্জামান জনিকে। কিন্তু প্রথমদিকে ফোন খোলা থাকলেও পরে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে, বিষয়টি জানতে পেরে তিনি তার ফেসবুক পেজে একটি বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘বুকে হাত দিয়ে শপথ করে বলছি, আমি সকল ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিশোধ নেবোই নেবো। আমার সৃষ্টি একদিনে না, দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পর আজ আমার এই পরিচিতি, কেউ চাইলে কাচের টুকরার মতো ভেঙে ফেলতে চাইবে, আর আমি সেটা নীরবে মাথা পেতে নেবো– এমনটা আমিও নই। ৫ তারিখের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমাকে নিয়ে যারা যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে; আমি ওয়াদা করছি সকল ষড়যন্ত্রকারীদের শিকড় পর্যন্ত উপড়ে ফেলবো ইনশাআল্লাহ। আমার রাজনৈতিক সকল সহ-যোদ্ধাদের নিকট আমার একটাই মেসেজ, কেউ অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়াবে না। সব সময় সততার সঙ্গে বুকের সিনা টানটান করে সামনের দিকে এগোতে থাকো। নিশ্চয়ই আমরা একদিন আমাদের সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাবো এবং সকল বাজে মন্তব্যকে পেছনে ফেলে, আল্লাহ ভরসা। সবশেষে, ইট মারলে পাটকেলটি তাকে খেতেই হবে, যদি সেই পর্যন্ত আমার হায়াত থাকে আমিন।’
ঘটনার বিষয়ে জানতে নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেছেন, ‘সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে জনির বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সে এখন আমাদের কেউ না।’
জানতে চাইলে অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম বলেন, ‘তিনি আমার কাছে কোনও অভিযোগ দেননি।’ অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ওসি মন্তব্য করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।