জুমবাংলা ডেস্ক : সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ রাজশাহীর একটি টেন্ডারকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান রুবেল এক ঠিকাদারকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল ও শাসিয়েছেন। এ ধরনের একটি অডিও রেকর্ড ইতোমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মী এবং ঠিকাদারদের কাছে পৌঁছে গেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
রুবেল রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানা বিএনপির সদ্য সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক।
আর দরপত্র জমা দিয়ে গাছ কেনা ঠিকাদার হলেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার শাহজাহান আলী। যদিও ঠিকাদার শাহজাহানও বিএনপির রাজনীতি করেন। তিনি মান্দা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি এবং ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্য।
সোমবার দুপুরের ৯ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনে রুবেল অশ্লীল ভাষাও প্রয়োগ করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। জুমবাংলার পাঠকদের জন্য ভাইরাল সেই অডিওর কথোপকথন তুলে ধরা হলো:
কথোপকথনে বিএনপি নেতা রুবেল বলেন, ‘রোডসে আর টেন্ডার সাবমিট করবেন না।’ ঠিকাদার শাহজাহান আলী ফোন ধরতেই এ কথা বলেন রুবেল।
শাহজাহান প্রশ্ন করলেন, কেন?
রুবেল এবার বললেন, ‘কারণ আমরা নিজেরাই খাইতে পাচ্ছি না। আমার কথা হলো- আপনি ভাই টেন্ডার-মেন্ডার দিয়েন না, আমার অনুরোধ থাকল। আমরা ১৭ বছর খাইতে পারিনি। এখন আমরা খাব।’
রুবেল ঠিকাদার শাহজাহানকে বলেন, ‘আপনি এই কাজগুলা কইরেন না, জাস্ট সমস্যা হবে।’
শাহজাহান বলেন, ‘আপনারা যদি নিষেধ করেন, তাহলে বিষয়টা কেমন হয় না?’
রুবেল বলেন, ‘এখন এমন অবস্থা হয়েছে, মান্দার লোক শুনলেই চার-পাঁচটা থাপ্পড় মারবে।’
শাহজাহান বলেন, ‘মান্দার লোক তো আরও টেন্ডার করছে।’
জবাবে রুবেল বলেন, ‘একটার পর একটা অপমান হবেই, দেখবেন। আপনাকে আমি বললাম ভাই ব্যক্তিগতভাবে। মাথায় রাইখেন।’
শাহজাহান জানতে চান, ‘কী করলে অপমান হবে না সেইটা বলেন।’ রুবেলের সাফ জবাব, ‘টেন্ডার না দিলেই অপমান হবেন না।’
টেন্ডার তো হয়েই গেছে, শাহজাহান এ কথা জানালে এরপর অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন বিএনপি নেতা রুবেল। তিনি বলেন, ‘আপনাকে এতবার ফোন দিলাম। আপনি ফোনই ধরেন না। তাহলে কি করব বলেন?’
শাহজাহান এ সময় ভদ্রভাবে কথা বলার অনুরোধ করেন।
রুবেল বলেন, ‘আপনাকে ফোন করলাম যে এটা উইথড্র করা লাগবে, আপনি ফোনই ধরেননি।’
শাহজাহান বলেন, ‘উইথড্র কেউ না করলে আমি কেন করব ভাই?’
রুবেল বলেন, ‘এটা আমরা মীমাংসা করতাম। শোনেন ভাই, এখন ডিজিটাল যুগ। কাউকে গোপনে টাকা দিয়ে কোনো ব্যবসা হবে না। ওপেন আপনাকে আসতে হবে। আপনি ভচ করে লিয়্যা চলে যাবেন আর আমরা….কাটব?’
শাহজাহান বলেন, ‘আপনি টেন্ডার করবেন, করে নিবেন আপনি।’
শাহজাহান বলেন, ‘নিজের এলাকাতে এখন কুইত্তাও ভাগ দেয় না, জানেন? কুইত্তাও বলছে যে, তোর এলাকা তুই খা, আমার এলাকা আমি খাই।’
এ সময় শাহজাহান রুবেলের দলীয় পরিচয় জানতে চান। তখন রুবেল বলেন, ‘বিএনপির আমি সভাপতি, রাজপাড়া থানার।’
যদিও রাজপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। রুবেল সভাপতি পরিচয় দেওয়ার পর শাহজাহান জানান, তিনিও ছাত্রজীবনে ছাত্রদল করেছেন। এখন বিএনপি করেন।
রুবেল বলতে থাকেন, ‘আপনি তো রেকর্ড করছেন আমি জানি না? রেকর্ডিং কইরে আমার…কাটবেন?’
শাহজাহান অস্বীকার করলে রুবেল বলেন, ‘কথা বলার আগেই বলেছে কলটা রেকর্ড হচ্ছে। আমি শুনতে পাইনি?’
প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে শাহজাহান বলেন, ‘আপনি পদে থেকে এ ধরনের কথা বলতে পারেন?’
রুবেল বলেন, ‘আপনি যে কোনো কথাই শুনছেন না।’
শাহজাহান বলেন, ‘আপনি বলবেন একবার, হারুন (রুবেলের এলাকার আরেক ঠিকাদার) বলবে আরেকবার। আমরা কয়জনাকে টাকা দিব রে ভাই? আমি বিধি মোতাবেক কাজ পেয়েছি। আপনাদের দাবি থাকলে মানতে চেয়েছি। এখন আপনি বলছেন দেন, হারুন বলতেছে দেন। তাহলে কয়জনাকে দিব? আমার কয় টাকা লাভ হবে একটা লটে?’
রুবেল বলেন, ‘আমি টাকা চাইনি, আপনাকে আসতে বলেছিলাম।’
শাহজাহান জানতে চান, তাহলে কেন ডেকেছিলেন?
রুবেল বলেন, ‘যারা যারা পার্টি আসছে, সবার সঙ্গে বসে একটা সিস্টেম করতাম।’
এভাবেই বিএনপি নেতা রুবেলের ৯ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড কথাবার্তা চলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সওজ রাজশাহীর বৃক্ষপালনবিদের কার্যালয় থেকে ৯টি লটে গাছ বিক্রির জন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে অংশ নেন শাহজাহান আলী। দরপত্র জমা দেওয়ার দিন রুবেলসহ কিছু ঠিকাদার ও তাদের লোকজন সওজ অফিসেই অবস্থান নেন যাতে তাদের বাইরে কেউ দরপত্র জমা দিতে না পারেন।
তবে শাহজাহান আলী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে রাখা বাক্সে দরপত্র জমা দেন। এতে তিনি প্রায় ৬ লাখ টাকায় দুটি লটের গাছ পান। টাকা জমা দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে তাকে বৃক্ষপালনবিদের কার্যালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঠিকাদার শাহজাহান আলী বলেন, ‘ওদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। সড়ক অফিসও ওই এলাকায়। ওদের অনেক কথাই থাকে। আমাকে ফোন করে বলেছে। আমার তো কিছু করার নেই।
বিএনপি নেতা রুবেল বলেন, ‘অনেক ছেলেপিলে থাকে। তাদেরও দাবি-দাওয়া থাকে একটা কাজ হলে; কিন্তু শাহজাহান দেখা করেনি। তাই ফোন করে দুইটা কথা বলেছি। এটা ঠিক হয়নি।’
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘অডিওটা ভাই অমিট (ডিলিট) করে দেন। নিউজ-টিউজ করিয়েন না ভাই।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।