জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ের নেতৃত্বের প্রশ্নে বিতর্ক ও প্রস্তাবনা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে, তা আবারো দেশের রাজনীতিকে নতুন আলোচনার দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির আপত্তির মাধ্যমে এই আলোচনার মাত্রা আরও গভীর হয়েছে।
Table of Contents
প্রধান বিচারপতি নিয়োগে বিএনপির অবস্থান
প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আপিল বিভাগের সর্বজ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। তবে বিএনপির মতে, এই পদ্ধতি সীমাবদ্ধ এবং ভবিষ্যতে বিতর্কিত পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের ভাষ্যে উঠে এসেছে, সিনিয়র মোস্ট একজন নয় বরং শীর্ষ তিনজন বিচারপতির মধ্য থেকে নির্বাচন করার সুযোগ থাকা উচিত। এভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রধান বিচারপতির পদেও একটি গ্রহণযোগ্যতা ও বৈচিত্র্য আসবে বলে তারা মনে করেন।
বিএনপি আরও বলছে, অতীতে কিছু বিতর্কিত নিয়োগ বিচার বিভাগের উপর আস্থা ক্ষুণ্ণ করেছে। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অন্তত দুটি বা তিনটি বিকল্প রাখা উচিত যাতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান হিসাবে একজন উপযুক্ত ব্যক্তি নির্বাচন করা যায়।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও সাংবিধানিক ভারসাম্য নিয়ে বিএনপির প্রস্তাব
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভা যেন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সম্মিলিতভাবে পরিচালিত হয়। কিন্তু বিএনপি মনে করে, এতে প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্ব ক্ষুন্ন হবে। বিএনপির প্রস্তাব, প্রধানমন্ত্রীর হাতে সরকারের নীতিগত নেতৃত্ব থাকা জরুরি। এছাড়া, একজন ব্যক্তি যেন একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা না থাকেন সেই বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে তারা দ্বিমত পোষণ করেছে।
বিএনপির মতে, সংসদের বৃহত্তর দল থেকেই প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হওয়া উচিত। তবে পার্টির প্রধান এবং সংসদ নেতা আলাদা হলেও সমস্যা নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন নজির রয়েছে যেখানে প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা আলাদা ব্যক্তি, কিন্তু এতে কার্যকরভাবে সরকার চলতে পারে।
তাদের মতে, এই ভারসাম্য না থাকলে এক ব্যক্তির অতিমাত্রায় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হবে, যা গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য হুমকি হতে পারে।
বিচার বিভাগ ও সংসদীয় প্রক্রিয়ার আরও প্রস্তাবনা
সংবিধান সংশোধন ও গণভোট
বিএনপি মত দিয়েছে যে, সংবিধান সংশোধনের প্রতিটি বিষয়ে গণভোট বাধ্যতামূলক নয়। নির্দিষ্ট ধারার ক্ষেত্রেই গণভোটের প্রয়োজন হতে পারে এবং পরবর্তী সংসদে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ও নারী আসন
বিএনপি দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রস্তাবে একমত হয়েছে। তারা বলেছে নিম্নকক্ষে ৪০০ আসনের মধ্যে ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য। তবে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়ে তারা দ্বিমত প্রকাশ করেছে।
ন্যায়পাল ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা
ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়ে বিএনপি একমত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর দিকেও ইঙ্গিত করেছে তারা, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীকে উপেক্ষা করে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রাষ্ট্রপতির হাতে থাকা উচিত বলে মত দিয়েছে।
স্থানীয় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে সুপারিশ
বিএনপি বলেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না। তারা উপদেষ্টা মণ্ডলী গঠনের প্রস্তাব এবং প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে মণ্ডলী থেকে কাউকে মনোনয়নের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তারা একমত হলেও বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করে। কারণ সংবিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলতে শুধু পুলিশ নয়, বরং সশস্ত্র বাহিনীর তিনটি বিভাগকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সাংবিধানিক সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্যের গুরুত্ব
বিএনপি মনে করে, যেহেতু এটি একটি রাষ্ট্র পরিচালনার প্রশ্ন, তাই গভীরভাবে চিন্তা করে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আইন, বিচার ও সাংবিধানিক কাঠামো নিয়ে সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে অন্তত ন্যূনতম ঐকমত্য থাকতে হবে।
External Reference
আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন Wikipedia
এই আলোচনার প্রেক্ষিতে স্পষ্ট যে, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে একটি সুদূরপ্রসারী ঐক্যমত গঠনের জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আরও আলোচনার প্রয়োজন।
FAQs
- প্রধান বিচারপতি কে নিয়োগ দেন? রাষ্ট্রপতি নিয়ম অনুযায়ী প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেন, তবে রাজনীতি ও প্রশাসনের ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্য প্রক্রিয়াটি সংস্কার করা হচ্ছে।
- বিএনপির আপত্তির মূল কারণ কী? একক সিনিয়র মোস্ট বিচারপতিকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রধান বিচারপতি করার সুপারিশে ভবিষ্যতে বিতর্কের আশঙ্কা করছে তারা।
- দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের সুবিধা কী? এটি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে পর্যালোচনা এবং প্রতিনিধিত্বে বৈচিত্র্য নিশ্চিত করে, যা গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করে।
- সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে বিএনপির মত কী? সব ক্ষেত্রে গণভোট নয়, বরং নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাকে তারা সমর্থন করে।
- প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কেমন হওয়া উচিত? দুই দপ্তরের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত, যেন ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।