জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, এনবিআরের সাম্প্রতিক আন্দোলন নিয়ে কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল আচরণ করলে ভয়ের কিছু নেই। তবে কেউ যদি বড় ধরনের সীমা লঙ্ঘন করে থাকেন, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হতে পারে। সোমবার রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টম হাউস পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় কাস্টমস হাউসে স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতার জন্য তিনটি সফটওয়্যার উদ্বোধন করেন তিনি।
চেয়ারম্যান জানান, বদলি বা অবসরজনিত ঘটনাগুলো সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের অংশ। যদি এসব ঘটনা এনবিআরের ইচ্ছায় ঘটত, তাহলে মাত্র পাঁচজন কর্মকর্তার বদলি হতো না।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছিল অনেকের, কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সীমিত সংখ্যক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, এনবিআর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে দেখেনি বরং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সামলাচ্ছে।
সম্প্রতি আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে সাময়িক শাটডাউন হওয়ার ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মন্তব্য করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, রাজস্ব কর্মকর্তারাই এই প্রতিকূলতার মধ্যেও রাজস্ব আদায় করেছেন।
এতে প্রমাণিত হয়, সংকট সত্ত্বেও কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ফলে রাজস্ব আদায় নিয়ে যে আশঙ্কা ছিল, তা কেটে যাবে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
শুল্ক-কর পরিশোধ পদ্ধতিতে এনবিআর বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতদিন করদাতাদের কর ও শুল্ক পরিশোধ করতে হতো আলাদা ব্যবস্থায়, যা সরাসরি কোষাগারে জমা পড়ত না।
এখন থেকে করদাতারা যেকোনো সময় যেকোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে অনলাইনে শুল্ক-কর পরিশোধ করতে পারবেন।
এর ফলে পণ্য খালাস সহজ হবে এবং রাজস্বও সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা পড়বে। বর্তমানে ঢাকা ICD, চট্টগ্রাম এবং পানগাঁও কাস্টম হাউসে এই ব্যবস্থা চালু আছে এবং আগামী সপ্তাহেই এই পদ্ধতি শতভাগ কার্যকর হবে।
প্রবাসীদের ভোগান্তি দূর করতে একটি নতুন সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যাগেজ রুলসের আওতায় আনা পণ্যগুলো সহজে খালাস করা যাবে। এবারের ব্যাগেজ রুলসে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এখন থেকে প্রবাসীরা বছরে ১০ ভরি পর্যন্ত স্বর্ণ বিনা শুল্কে আনতে পারবেন। পাশাপাশি একেকজন প্রবাসী বছরে একটি করে মোবাইল ফোন আনতে পারবেন শুল্ক ছাড়াই।
তবে বিএমইটি কার্ডধারীরা দুটি মোবাইল আনতে পারবেন বিনা শুল্কে। এসব কাজও সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে, ফলে হয়রানি কমবে এবং প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ হবে।
কাস্টমস হাউসে যেসব পণ্য বিভিন্ন সময়ে আটক করা হয়, সেগুলোর হিসাব-নিকাশে স্বচ্ছতা আনার জন্য ‘ডিটেনশন মেমো’ পদ্ধতিও অটোমেটেড করা হয়েছে। এখন থেকে কীভাবে এসব পণ্যের অ্যাসেসমেন্ট হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হবে। এতে করে আটকের পেছনের কারণ ও প্রক্রিয়া যথাযথভাবে নথিভুক্ত থাকবে।
চেয়ারম্যানের বক্তব্যে স্পষ্ট, এনবিআর এখন আরও আধুনিক, স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান, দায়িত্বশীল আচরণ বজায় রাখলেই তাদের জন্য কোনো ঝুঁকি থাকবে না। তবে সীমা অতিক্রমকারীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।