ধর্ম ডেস্ক : শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। মানুষকে জান্নাতের পথ থেকে বিভ্রান্ত করে জাহান্নামের পথে পরিচালিত করা তার একমাত্র মিশন। সে সর্বদা মানুষকে অশ্লীলতা, হিংস্রতা ও পাপ কাজে নিমজ্জিত করে রাখে; কিন্তু বছরের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে মহান আল্লাহর নির্দেশে শয়তানকে বন্দি করে রাখা হয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন রমজান উপস্থিত হয়, জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়।
জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুষ্ট শয়তানদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৮৫)
এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে মহান আল্লাহ পবিত্র রমজান মাসে শয়তানের কার্যক্রমকে সীমিত করে দেন। ফলে তখন মুমিনদের মধ্যে আমলের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
তারা বহু পাপ থেকে নিজেদের বিরত রাখার চেষ্টা করে। যথাসম্ভব আল্লাহর ইবাদতে সময় কাটানোর চেষ্টা করে।
তবে এর পরও কেন রমজান মাসেও পাপাচার হয় এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বিজ্ঞ ওলামায়ে কিরাম। কাজি ইয়াজ (রহ.) বলেন, রমজানে শয়তান শিকলে আবদ্ধ থাকার অর্থ আক্ষরিক ও রূপক উভয় অর্থেই হতে পারে।
রূপক অর্থে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, রমজানে শয়তানের ধোঁকা-প্রবঞ্চনার হার কমে যায়, অন্যায় কাজ কম হয় এবং মানুষের মধ্যে আল্লাহর বিধান পালনের প্রতি আগ্রহ প্রবল থাকে। এই অর্থে উল্লিখিত হাদিসে বাস্তব জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যার বাস্তবতা আমরা সবাই স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে থাকি। (ইকমালুল মুলিম : ৪/৬)
আর আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করা হলে হাদিসের অর্থ হলো, মানুষ পাপ করে দুই কারণে,
১. তার কুপ্রবৃত্তি ও বদ-অভ্যাসের কারণে;
২. শয়তানের প্ররোচনায়। রমজানে শয়তান বন্দি থাকলেও কুপ্রবৃত্তির কারণে মানুষ পাপ করে থাকে। (ফাতহুল বারি : ৪/১১৪)
এই হাদিসটি আল্লামা আইনি (রহ.) ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
তাঁর মতে, শয়তানকে ওই সব রোজাদার থেকে দূরে আবদ্ধ রাখা হয়, যারা রোজার আদব ও শর্ত সঠিকভাবে পালন করে। কিন্তু যারা সেসবের ধার ধারে না, তাদের থেকে শয়তানকে আবদ্ধ না-ও রাখা হতে পারে। (উমদাতুল কারি : ১০/২৭০)
কোনো কোনো হাদিস ব্যাখ্যাকারী বলেছেন, রমজানে সব শয়তানকে বন্দি করা হয় না, অতিরিক্ত দুষ্ট শয়তানকে বন্দি করা হয়। তাই অন্য শয়তানদের প্ররোচনায় মানুষ পাপ করে। (ফাতহুল বারি : ৪/১১৪)
যদি মব করেন, তাইলে আপনাদেরও ডেভিল হিসেবে ট্রিট করা হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
কারো কারো মতে, রমজানের আগে কৃত পাপের প্রভাবে মানুষ পাপ করে থাকে। যেমন একটি লোহা দীর্ঘক্ষণ আগুনে রাখার পর তা থেকে বের করা হলেও বেশ কিছুক্ষণ তার প্রভাব বাকি থাকে, একইভাবে গাড়ির চাকা দীর্ঘ সময় চলার পর থামানো হলেও কিছুদূর পর্যন্ত চলতে থাকে; ঠিক তেমনি ১১ মাসের পাপের প্রভাবে রমজানেও কারো কারো কাছ থেকে পাপ হয়ে থাকে।
আবার কেউ কেউ বলেছেন, রমজানে বন্দি থাকার কারণে শয়তানের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ বন্ধ থাকলেও পরোক্ষ হস্তক্ষেপ বন্ধ থাকে না। তাই মানুষ পাপ করে। (বিস্তারিত দেখুন : শরহুন নববী আলা মুসলিম : ৭/১৮৭, শরহুস সুয়ূতি আলা মুসলিম : ৩/১৮৩, মিরকাতুল মাফাতিহ : ৪/১৩৪১, ফয়জুল বারি : ৪/৩২৭)
আবু তাশফিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।