আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ২০২৪ সালের নভেম্বরে কানাডার ইমিগ্রেশন, রিফিউজিস এবং সিটিজেনশিপ (IRCC) ভিজিটর ভিসা প্রদান নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। আগের তুলনায় এবার মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদিত হবে না। এর পরিবর্তে আবেদনকারীর প্রয়োজন এবং ব্যক্তিগত পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে, ভিসা প্রদান করা হবে। এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হলো আরও সুনির্দিষ্ট এবং কাস্টমাইজড নীতিমালা তৈরি করা, যা ভ্রমণকারীর উদ্দেশ্য এবং আর্থিক পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। আসুন জেনে নিই, এই নতুন নীতির বিশদ বিবরণ।
মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসার মূল ধারণা:
কানাডার মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রযোজ্য থাকে এবং এই ভিসা থাকলে একজন ভ্রমণকারী সেই সময়ে একাধিকবার কানাডায় প্রবেশ করতে পারেন। এটি সাধারণত ১০ বছর পর্যন্ত বৈধ থাকে, অথবা পাসপোর্ট বা বায়োমেট্রিক তথ্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর্যন্ত কার্যকর থাকে। তবে, নতুন নীতির অধীনে ভিসা কর্মকর্তারা নির্ধারণ করবেন, আদৌ মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা দেওয়া হবে কিনা।
মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসার পরিবর্তন:
আগের নিয়ম অনুযায়ী, যদি একজন ভ্রমণকারীর ভিসা অনুমোদিত হতো তবে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাল্টিপল-এন্ট্রি হিসেবে অনুমোদিত হতো। এখন থেকে মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা পেতে হলে আবেদনকারীর প্রয়োজন, ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং আর্থিক সামর্থ্য যাচাই করা হবে।
ভ্রমণের উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভরশীলতা:
নতুন নীতিতে ভিসা প্রদান প্রক্রিয়ায় ভ্রমণের উদ্দেশ্য বড় ভূমিকা পালন করবে। ভিসা কর্মকর্তারা ভ্রমণের উদ্দেশ্য দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন, একক-প্রবেশ (সিঙ্গেল এন্ট্রি) বা মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা প্রয়োজন কিনা। যদি ভ্রমণটি একটি নির্দিষ্ট ইভেন্টের জন্য হয়, যেমন কনফারেন্স, প্রশিক্ষণ, বা অন্য কোনও এককালীন কার্যক্রম, তবে একক-প্রবেশ ভিসা প্রদান করা হতে পারে। এটি মূলত স্বল্পমেয়াদী ভ্রমণকারীদের জন্য প্রযোজ্য, যারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কানাডা ত্যাগ করবেন।
যারা নিয়মিত কানাডা ভ্রমণ করেন, যেমন পরিবারের সাথে দেখা করতে বা ব্যবসার কাজে যান, তারা মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসার জন্য বিবেচিত হতে পারেন। তবে, এটি আর আগের মতো স্বয়ংক্রিয় নয়, এবং নিয়মিত ভ্রমণের প্রমাণ থাকতে হবে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, আর্থিক স্থিতিশীলতা ভিসা অনুমোদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আবেদনকারীর আর্থিক স্থিতি নিশ্চিত করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে হবে।
আবেদনকারীর নিজস্ব অর্থায়নের প্রমাণ থাকতে হবে, যাতে বারংবার ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ দেয়া যায়। যদি পরিবারের কোনো সদস্য কানাডায় অবস্থান করে এবং ভ্রমণের খরচ বহন করতে ইচ্ছুক হন, তবে তাদের মধ্যে সম্পর্কের প্রমাণ এবং ওই ব্যক্তির আর্থিক সামর্থ্য নিশ্চিত করতে হবে।
ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীদের ক্ষেত্রে, নিয়োগকর্তার কাছ থেকে ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং অর্থায়নের প্রমাণ হিসেবে একটি চিঠি থাকা প্রয়োজন। এছাড়াও, কানাডায় ভ্রমণকারীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কিছু বিষয় বিবেচনা করা হয়, যা ভিসা অনুমোদনে সাহায্য করে।
যদি আবেদনকারীর নিজ দেশে একটি স্থায়ী চাকরি বা পরিবার থাকে, তবে তা মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসার অনুমোদনে সহায়ক হতে পারে। এটি প্রমাণ করে যে আবেদনকারী কানাডায় অবস্থানের চেয়ে নিজ দেশেই থাকতে বেশি ইচ্ছুক। আগে ভ্রমণকারীরা ভিসা শর্তাবলী মেনে চলেছেন কিনা এবং কোনো ভিসা প্রত্যাখ্যানের ইতিহাস আছে কিনা তা যাচাই করা হবে। যদি আবেদনকারীর নিজ দেশে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়, তবে তার জন্য ভিসার মেয়াদ কমিয়ে দেওয়া হতে পারে।
২০২৪ সালের এই পরিবর্তনগুলো কানাডার ভিসা নীতির আরও কঠোর এবং নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে। আগের তুলনায় এখন আবেদনকারীর ভিসা অনুমোদনের জন্য আরও বেশি প্রমাণ এবং তথ্য প্রদান করতে হবে। নতুন নীতি অনুযায়ী, আবেদনকারীকে তার ভ্রমণের উদ্দেশ্য, আর্থিক স্থিতি এবং দেশের সাথে সম্পর্ক স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।