জুমবাংলা ডেস্ক : ‘তুমি আমাকে আর পাবে না, আমি থেকে যাবো তোমার দীর্ঘনিশ্বাসে’- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন স্ট্যাটাস দেয়ার পর যশোরের মনিরামপুরে কলেজছাত্র অরণ্য মণ্ডলের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার পলাশী গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
অরণ্য মণ্ডল পলাশী গ্রামের অশোক মণ্ডলের ছেলে এবং পলাশী আদর্শ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, অরণ্য দুপুরের খাবার খেয়ে নিজ কক্ষে ঘুমাতে যায়। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেও সে ঘর থেকে বের হচ্ছিল না। এরপর পরিবারের লোকজন জানালা দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে অরণ্যকে ফ্যানের সঙ্গে কাপড় জড়িয়ে ঝুলে থাকতে দেখে। স্বজনরা উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত্যুর আগে অরণ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘অতঃপর তুমি একদিন টের পাবে, আমাকেই তোমার দরকার ছিল সবচেয়ে বেশি! তুমি টের পাবে-আমার মতো ভালোবাসা কেউ দিতে পারে নাই তোমাকে! তুমি টের পাবে-এই মানুষটা থাকলে তোমার জীবনে অশান্তি আর থাকত না! তুমি বহু কিছু টের পাবে, আমার অনুপস্থিতি তোমাকে অনেক কিছু উপলব্ধি করাবে! তখন আমরা একসাথে আর থাকবো না। তুমি আমাকে আর পাবে না! আমি থেকে যাবো তোমার দীর্ঘনিশ্বাসে!’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এইভাবে কি থাকার কথা ছিল? ছিল না তো! একটু তোমার সাথেই তো আজীবন থাকতে চেয়েছিলাম, রাখতে পারতে চাইলেই! তখন হয়তো এতো বুঝতে চাওনি, ব্যাপার নাহ! আমিও এখন বুঝি দাম দিতে গেলে নিজের ই দাম কমে যায়!’
প্রতিবেশী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘অরণ্য আমাদের এলাকার ছোট ভাই। এক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের এক মেয়ের সঙ্গে তার ফেসবুকে বন্ধুত্বের সূত্র ধরে প্রেম হয়। মেয়েটির সঙ্গে মাঝেমধ্যে মনোমালিন্য হলে, নিজের ফেসবুকে হতাশামূলক পোস্ট দিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি আমি তাকে ডেকে বুঝিয়েছি। মেয়েটির সঙ্গে অভিমানে অরণ্য আত্মহত্যা করতে পারে।’
মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম মেহেদী মাসুদ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অরণ্যের মরদেহ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তবে কী কারণে এ ঘটনা ঘটল, সেটা তারা জানতে পারেননি।
উল্লেখ্য, আত্মহত্যা কিংবা আত্মহত্যার চেষ্টাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন চিকিৎসকরা। বিশ্বের অনেক দেশেই আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকে এক ধরনের অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামসহ অনেক ধর্মেই আত্মহত্যাকে পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিশ্বের দেশে দেশে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর সারা বিশ্বে যে সব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে আত্মহত্যা ১৩তম প্রধান কারণ। প্রায় ২৭% থেকে ৯০% এরও বেশি সময় আত্মহত্যার সঙ্গে মানসিক অসুখের সম্পর্ক থাকে। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অনেক বেশি। পুরুষদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা নারীদের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।