রিয়াদ তালুকদার : আগামী ৫ ও ৬ নভেম্বর দুদিনের অবরোধকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির পাঁয়তারা হচ্ছে। এতে লিপ্ত আছে বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতারা, এমন দাবি করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সূত্র।
তারা বলছে, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে গানপাউডার সংগ্রহ করার পর তা দিয়ে বোমা বানানোর জন্য বরিশালসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক সংগ্রহ করে আসছিলেন বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল ও যুবদলের শীর্ষ নেতারা। পরে রাজধানীর চকবাজার এলাকায় বিএনপি ছাত্রদল-যুবদল নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ মদদে বোমা তৈরি ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়ে আসছিল।
সূত্র আরও বলছে, পেট্রোল বোমা ও হাতবোমা তৈরি করে তা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের অনেকেই বিভিন্ন পদ পেয়েছেন। নাশকতা সৃষ্টি, গাড়িতে আগুন ও বোমা তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগেও অনেকেই গ্রেফতার হয়েছিল। তারাই আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, কেন্দ্রীয় যুবদলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সাইদুল হাসান মিন্টুকে গ্রেফতার করার পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আশপাশে অবরোধ ও হরতালকেন্দ্রিক আতঙ্ক ও ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে ককটেল ও বোমা নিক্ষেপের দায়িত্ব ছিল তার। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বোমা তৈরি করতে কারিগর রাখা হয়েছে।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে, দুই কারিগরের এক জন চকবাজার থানার ২৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাশার। অন্যজন চকবাজার থানা বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মাসুদ।
গতকাল শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর চকবাজারের একটি বাসা থেকে অভিযান চালিয়ে বোমা তৈরির কারিগর মাসুদ ও বাশার নামে দুজনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা বলে দাবি করেছেন। তারা আরও জানিয়েছেন যে তাদের নেতা সাঈদ হোসেন মিন্টু, রবিউল ইসলাম নয়ন ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। ২০১৩-১৪ ও ১৮ সালেও একইভাবে বোমা তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন তারা। গ্রেফতারের সময় চকবাজারের সেই বাসা থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ ৮ কেজি গানপাউডার উদ্ধার করা হয়। বিস্ফোরণের জন্য রেডি আছে, এমন ২৩টি হাতবোমা, কাচের বোতল, তারকাঁটা ও একোরিয়ামের পাথর উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার অভিযুক্তদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৩-১৪ ও ২০১৮ সালে যখন অস্থিতিশীল পরিবেশ ছিল, তখন তাদের কিছুটা ডিমান্ড ছিল। চলতি বছরের আগস্টের দিকে তাদের আবার ডিমান্ড শুরু হয়। আগস্টের পর থেকে তারা বোমা বানানো শুরু করেন। তাদের বানানো বোমা দিয়ে ২৭ ও ২৮ অক্টোবর এবং অবরোধের দিনগুলোয় বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দাবি করেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানান, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে যেসব বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল, তাদের দায়িত্বে ছিলেন সাইদ হাসান মিন্টুসহ জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন। গ্রেফতার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের আর কোনও পরিকল্পনা রয়েছে কি না, তারা ছাড়া ৫ ও ৬ নভেম্বরের অবরোধকে কেন্দ্র করে আর কোনও জায়গায় কারিগর রয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখা হচ্ছে।
জানতে চাইলে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, গ্রেফতার দুজনের তৈরি করা হাতবোমাগুলো অন্য কারও হাতে গিয়েছে কি না, কোথাও সরবরাহ করেছে কি না, সেই সঙ্গে ৫ ও ৬ নভেম্বর অবরোধকে ঘিরে কী ধরনের পরিকল্পনা তাদের ছিল, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গেছে, তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ৮ কেজি গানপাউডার দিয়ে আরও ৩০০-এর মতো বোমা বানাতে সক্ষম ছিল। আর সেগুলো বিস্ফোরণ করার কথা ছিল ৫ ও ৬ নভেম্বরে। এ ছাড়া অন্য কেউ বোমা বানাচ্ছে কি না, এসব বিষয় আমরা তদন্ত করে দেখছি। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।