উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে নদ-নদীতে বৃদ্ধি পাওয়া বন্যার পানি শুক্রবার থেকে কমতে শুরু করেছে। ফলে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা। তবে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।
শুক্রবার হঠাৎ দুধকুমার নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কমতে শুরু করেছে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র নদসহ অন্য নদ-নদীর পানিও।
এদিকে পানি কমলেও তিস্তা নদী অববাহিকায় ৪টি ইউনিয়নে শতাধিক পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছেন। জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন এবং উলিপুর উপজেলার থেতরাই ও বজরা ইউনিয়নে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
বজরা ইউনিয়নের কালপানি বজরা ও সাধুয়াদামারহাট গ্রামে তীব্র ভাঙন শুরু হওয়ায় লোকজন বাড়ি সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াই পিয়ার চর গ্রাম তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনে মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
এই গ্রামের কৃষক বাহার আলী বলেন, দুই একর আবাদি জমি কয়েক দিনের ভাঙনে তিস্তা গিলে খেয়েছে। ভাঙন এখন বাড়ি ছুঁই ছুঁই করছে। শেষ সম্বল বাড়ি ভেঙে গেলে দুই মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় বসতে হবে। এসব কষ্টের কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, জরুরিভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনা রক্ষার চেষ্টা শুরু হয়েছে।
বজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাইয়ুম সর্দার জানান, ভাঙন প্রতিরোধে বজরা ইউনিয়নে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ শুরু না করায় চলতি সপ্তাহে ৬টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে।
১০টি বাড়িসহ একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হুমকিতে রয়েছে। এর মধ্যে কালপানি বজরা ও সাধুয়াদামারহাট গ্রামের শাহজাদি, আশরাফুল, হান্নান, মুকুল, মজিদা ও রোসনার বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে।
সাতালষ্কার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনোয়ারা বলেন, কাল যে রাস্তা দিয়ে স্কুলে গেছি, আজ সেই জায়গা নদীগর্ভে চলে গেছে। যে কোনো সময় দুটি স্কুল নদীগর্ভে চলে যেতে পারে।
সাধুয়াদামারহাট গ্রামের ফুলবাবু জানান, নদী আমার ২ বিঘা জমি খেয়েছে। আমার মতো মোফাজ্জল ও আশরাফুলের বসতবাড়ি নদীতে চলে গেছে। সরকারিভাবে আমরা নদী ভাঙন রোধে কাজ চাই।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার সাহা বলেন, আমি ভাঙনকবলিত বজরা ও থেতরাই ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছি। জনপ্রতিনিধিদের তালিকা তৈরির জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে ৩২০টি শুকনা খাবার প্যাকেট রয়েছে। এছাড়াও জিআরের চাহিদা প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে দুধকুমার নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলে সেই পানি প্রবেশ করলেও শুক্রবার থেকে আবার কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার পানি ১৬ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তবে পানি কমলেও জলাবদ্ধতার কারণে নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের কাস ইউনিয়নের ফান্দের চরে ৪ থেকে ৫টি নিচু বাড়িতে পানি উঠেছে বলে স্থানীয়রা জনিয়েছেন।
একইভাবে ওই উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের কুটি বামনডাঙ্গা চরে নিচু এলাকায় অবস্থিত দুটি বাড়িতে পানি উঠছে বলে স্থানীয় যুবক আশরাফুল ও কাদের জানিয়েছেন।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিব্বির আহমেদ জানান, আমরা বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ খবর নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত বাড়ি তলিয়ে যাওয়ার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে কিছু নিচু বাড়ি জলবন্দি রয়েছে বলে জেনেছি। তিনি জানান, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ও নদী ভাঙন বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন সরকার বলেন, প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের কাছে ২ হাজার ৫শ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৪৪০ মেট্রিক টন জিআর চাল মজুত রয়েছে।
ক্যাশ টাকা রয়েছে ১৪ লাখ। তালিকা পেলেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ দিয়ে দিব। তারপরও প্রতি উপজেলায় ৩২০ প্যাকেট করে শুকনো খাবার সরবরাহ করা আছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।