জুমবাংলা ডেস্ক : লক্ষ্মীপুরে মেঘনা নদীতে মার্চ-এপ্রিল মাছ শিকার থেকে জেলেদেরকে বিরত রাখতে সরকার ৮০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এরমধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের ২৬২৭ জনের নামে চাল বরাদ্দ এসেছে। কিন্তু প্রকৃত জেলেরা এ বরাদ্দ থেকে চাল পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (১১ মার্চ) দুপুরে চররমনী মোহন ইউনিয়নের ডা. আবদুল হক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়। এসময় প্রকৃত জেলেরা চাল না পাওয়ার অভিযোগ তুলে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন।
চররমনী মোহন ইউনিয়নের বাসিন্দা মুরশিদা বেগম, মাহবুব আলম, কাঞ্চন ও মো. বেলালের দাবি, নদীতে মাছ ধরেই তাদের সংসার চলে। নিষেধাজ্ঞাকালীন তারা নদীতে মাছ ধরতে যান না। এসময় তারা সরকারি সহায়তাও পান না।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তাদের আত্মীয়-স্বজনদেরকে জেলে কার্ড পাইয়ে দিয়ে চাল দেন। অন্য পেশার মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জেলে কার্ড দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
ক্ষুদ্ধ জেলেদের মধ্যে মুরশিদা বেগম তার স্বামী ছামু খাঁর জেলে কার্ড নিয়ে চাল নিতে আসেন। কিন্তু তিনি চাল পাননি। শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যের দেওয়া তালিকাভূক্ত কার্ডদারীদেরকে চাল দেওয়া হয়েছে। মুরশিদা বেগম বলেন, ‘কাল থেকে রোজা শুরু। ঘরে একমুঠো চাল নেই। নদীতেও যাওয়া যাবে না। আমার স্বামী অসুস্থ থাকায়, তার কার্ড নিয়ে আমি চাল নিতে এসেছি। মনে করেছি চাল পাবো। কিন্তু চালের তালিকায় আমার নাম নেই। অন্যান্য পেশার লোকজন দেখি চাল নিয়ে যাচ্ছেন।’
মুরশিদা বেগমের কান্নাজড়িত মলিন চেহারা দেখে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে দেখা যায়, কৃষক বজলুর রহমান ও সবজি বিক্রেতা মো. হোসেন চাল পেয়েছেন। এরমধ্যে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বজলুর রহমানের পরিচিত কয়েকজন জানান, বজলুর চররমনী মোহন এলাকায় কয়েক একর চাষাবাদকৃত জমি রয়েছে। তিনি সেখানে ফসল আবাদ করেন। একসময় তিনি জেলে থাকলেও এখন তিনি কৃষক। পুরনো কার্ড দিয়ে ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে তিনি সরকারি বরাদ্দের চাল পান।
এ বিষয়ে বজলুর ও হোসেনের বক্তব্য জানতে চাইলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।
জেলে কার্ড চাল নেওয়া মো. হোসেন মজুচৌধুরীর হাটের একজন সবজি বিক্রেতা। তার বাড়ি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় তিনি জেলে ছিলেন। পরে তিনি জেলে পেশা ছেড়ে দিয়ে সবজি বিক্রি করে আসছেন। তবে প্রতিবছর জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল পাচ্ছেন তিনি।
চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল বলেন, আমার ইউনিয়ন ৪২০০ জন তালিকাভূক্ত জেলে রয়েছে। এরমধ্যে ২৬২৭ জনের জন্য চাল বরাদ্দ এসেছে। বাকি জেলেরা চাল পাচ্ছে না। চাল বিতরণে কোন অনিয়ম হচ্ছে না।
সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সারোয়ার জামান বলেন, চালের কার্ড দেয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তারা যাচাই-বাছাই করে কার্ড দেয়। এটার দায়দায়িত্বও তাদের।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, জেলেদের মাছ শিকার থেকে বিরত রাখতে প্রধানমন্ত্রী দুই মাসের জন্য চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। জেলে কার্ডগুলো প্রতিনিয়ত সংশোধন করা হচ্ছে। অনেক জেলে আছে, তাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।