জুমবাংলা ডেস্ক : কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ধরে উখিয়ার থাইংখালী বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার পূর্বে রহমতের বিল এলাকা। সেখান থেকে মাত্র ৫০০ মিটার পূর্বেই মিয়ানমারের সীমান্ত ঢেঁকিবনিয়া। কয়েক দিন ধরেই অস্থিতিশীল মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত পরিস্থিতি। ওপারের দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে তুমুল লড়াইয়ে নেমেছে আরাকান আর্মিসহ বেশ কয়েকটি জাতিগত স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী।
টানা ৫ দিন বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে তুমুল গোলাগুলির পর গতকাল (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে বন্ধ হয় সাময়িক সময়ের জন্য। প্রায় তিন ঘণ্টার বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয় দু’পক্ষে সংঘর্ষ। এরপর থেকে রাতভর কিছু সময় বাদে বাদেই কানে এসেছে গোলাগুলির শব্দ। এতে আতঙ্কে ঘুম হারাম হয়ে গেছে এপারের বাসিন্দাদের, থমকে গেছে সেখানকার স্বাভাবিক জীবনযাপন।
রহমতের বিলের পাশের এলাকায় আনজুমান পাড়া বটতলী গ্রাম। সেই গ্রামের বাসিন্দা শামীম মোস্তফা জানান, গুলির শব্দে কান ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। লোকজন ভয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।
কান থেকে হাত নামাতেই পারছেন না বেওলা খাতুন (৬০)। ওপাশ থেকে আসছে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ। গত শুক্রবার থেকে টানা পাঁচ দিন এভাবে কাটছে বেওলা খাতুনের। তার ঘর থেকে আধা কিলোমিটার দূরে মিয়ানমার সীমান্তের ঢেঁকিবনিয়া। বেওলা খাতুন বলেন, পাঁচ দিন ধরে কিছুক্ষণ পরপর গুলি শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। মঙ্গলবার ঘরের চালে এবং পুকুরে গুলি এসে পড়ে। এরপর ছেলের বউ ও নাতি-নাতনিদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরিস্থিতি বুঝে বেওলা খাতুনও চলে যাবেন।
এদিকে ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে পেরে না উঠে সীমান্তের এই পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্য, কাস্টমস অফিসার ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ২৬৪ জন সশস্ত্র সদস্য। তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে বিজিবি।
তার ওপর ওপারের সংঘাতে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা জেগেছে এপারে। যদিও বিজিবির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের ঘটনা এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
নবনিযুক্ত বিজিবি মহাপরিচালকের সর্বশেষ লাইনটা অবশ্য বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্তের বাসিন্দাদের আতঙ্ক কাটাতে পারছে না। কারণ, সীমান্ত ঘেঁষে জান্তাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে এ সংঘর্ষ চলার কারণে বাংলাদেশে এসে পড়ছে মর্টারশেল ও গুলি। সোমবার মর্টার শেল বিস্ফোরিত হয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের জলপায়তলী সীমান্তে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন।
সীমান্তে বিজিবির কঠোর অবস্থান এবং প্রশাসনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগেও স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখেমুখে বিরাজ করছে আতঙ্ক। অনেকেই ঘর ছেড়ে সীমান্ত থেকে দূরবর্তী আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। সবার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ, কখন গুলি এসে গায়ে পড়ে!
কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তের মতো একই অবস্থা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে। সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, দিনের মতো রাতেও গুলি বর্ষণ হওয়ায় নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। এর আগে ২৯ ও ৩১ জানুয়ারি ঘুমধুম সীমান্তের ওপার থেকে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সে সময় মর্টার শেল ও গোলার অন্তত চারটি অংশ তুমব্রু, কোনারপাড়া ও পশ্চিম ঘুমধুমে এসে পড়ে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।