জুমবাংলা ডেস্ক : ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ব্যাপক আনন্দ-উল্লাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আনন্দ শোভাযাত্রা।
সোমবার সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে চারুকলা অনুষদ থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়, যা শাহবাগ মোড় হয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয়।
এবারের শোভাযাত্রায় সাতটি বড়, সাতটি মাঝারি ও সাতটি ছোট মোটিফসহ মোট ২১টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়। এরমধ্যে অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’, যা শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া সবার নজর কেড়েছে। এই মোটিফের মাধ্যমে বাংলাদেশে দীর্ঘসময়ের ফ্যাসিবাদী শাসনের চিত্র তুলে ধরা হয়।
এবারের শোভাযাত্রায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত আবু সাঈদের ‘প্রতীকী মোটিফ’ রাখার প্রাথমিক চিন্তা ছিল। তবে পরিবারের অনুরোধে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে প্রশাসন। আবু সাঈদের প্রসারিত দুইহাত না থাকলেও আনন্দ শোভাযাত্রায় স্থান পেয়েছে মুগ্ধের প্রতীকী পানির বোতল। এটি দ্বারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এছাড়া ‘৩৬ জুলাইয়ের’ মোটিভও বানানো হয়েছে।
আনন্দ শোভাযাত্রায় ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এতে ফিলিস্তিনের পতাকা ও প্রতীকী মোটিফ যেমন- তরমুজের ফালি ব্যবহৃত হয়। এই মোটিফের পাশে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা যায়।
মাঝারি মোটিফের মধ্যে সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, রঙিন চরকি, তালপাতার সেপাই, তুহিন পাখি, পাখা, ঘোড়া ও লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস ছিল।
এছাড়া ছোট মোটিফগুলোর মধ্যে ছিল ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, বাঘের মাথা, পলো, মাছের চাই, মাথাল, লাঙল এবং মাছের ডুলা।
এবারের শোভাযাত্রায় বিশেষ স্থান করে নিয়েছে বাংলার প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পটচিত্র। পট বা বস্ত্রের ওপর এই লোকচিত্র আঁকা হয়। চারুকলায় এবার ১০০ ফুট দীর্ঘ লোকজ চিত্রাবলির পটচিত্র আঁকা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের ১৮টি ইন্ডিয়ান হরিয়ানা ঘোড়া শোভাযাত্রায় আনা হয়েছিল।
‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ স্লোগানকে সামনে রেখে এবারের আনন্দ শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, কৃষক ও রিকশাচালক প্রতিনিধি, নারী ফুটবলার এবং ২৮টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এবারের বর্ষবরণ অন্যবারের চেয়ে একটু আলাদা। গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটাই প্রথম বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন। ফ্যাসিস্ট ও ফ্যাসিবাদমুক্ত বর্ষবরণ উৎসবে মাতোয়ারা দেশবাসী। এক নতুন চেতনায় বর্ষবরণ আয়োজনের প্রচেষ্টা চলছে দেশজুড়ে।
পটচিত্রে আকবর, বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ১৯৫২ ও ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত আবু সাঈদ, বেহুলা লখিন্দর, বনবিবি এবং গাজীরপট আঁকা হয়েছে। প্রত্যেকটি চিত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে বাঘ এবং বাঘের রং।
এর আগে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ।
বিছানায় সুখ না পেয়ে চরম সিদ্ধান্ত নিলেন স্বামী, ভুলেও বাচ্চাদের সামনে দেখবেন না
১৯৮৯ সালে চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বের হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এই শোভাযাত্রা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পায় এই শোভাযাত্রা। তবে এবার বর্ষবরণের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম বদলে রাখা হয় আনন্দ শোভাযাত্রা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।