জুমবাংলা ডেস্ক : সামাজিক দায়বদ্ধতা ও প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে অনুপ্রাণিত হয়ে বাড়ির আঙিনায় বস্তায় আদা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন কৃষক জাহিদুল ইসলাম। নিজ গ্রামসহ উপজেলা জুড়ে অন্তত ৫০০ পরিবারকে এ কাজে যুক্ত করেছেন তিনি।
কৃষক জাহিদুল ইসলামের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের বাহিরডাঙ্গা গ্রামে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) সরেজমিন ওই গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় শোভা পাচ্ছে বস্তায় লাগানো আদা গাছ। আগাছা পরিষ্কারসহ গাছের যত্ন নিচ্ছেন বাড়ির সদস্যরা।
জানা যায়, প্রত্যেক পরিবারে পাঁচ থেকে ৫০০ বস্তায় পর্যন্ত আদা চাষ করেছেন। প্রতি বস্তা থেকে এক থেকে দুই কেজি পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। আদা লাভজনক ফসল হওয়ায় অনেকে বস্তার পাশাপাশি বাড়ির পাশের ভিটা জমিতে রোপণ করেছেন। চলতি মৌসুমে ১০ টন আদা ঘরে তুলবেন বলে প্রত্যাশা করছেন তারা। যার বাজার মূল্য ৩০ লাখ টাকা। যা দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সাংসারিক জীবনে যোগান দেবে বাড়তি অর্থের।
তাদেরই একজন বাহিরডাঙ্গা গ্রামের নজরুল ইসলাম। তিনি ১৩ শতক জমিতে ২৫টি লাইনে আদা চাষ করেছেন। প্রতি লাইনে রোপণ করা হয়েছে ১৬০টি আদার চারা। পাশাপাশি একই জমিতে পেঁপে গাছ লাগিয়েছেন ১০০টি।
নজরুল জানান, প্রতিটি লাইন থেকে এক মণ আদা উৎপাদিত হবে। সে হিসেবে ২৫টি লাইনে আদা মিলবে অন্তত ২৫ মণ। প্রতি মণ ১২ হাজার টাকা হিসেবে যার মূল্য দাঁড়ায় তিন লাখ টাকা। এছাড়া পেঁপে আসবে ১০০ মণ। প্রতি মণ ৪০০ টাকা হিসেবে ৪০ হাজার টাকা ঘরে তুলবেন তিনি।
তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রথমত: ইউটিউবে বস্তায় আদা চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। ছোট বেলা থেকে কবিতা লেখার শখ ছিল জাহিদুলের। তারই ধারাবাহিকতায় আদার গ্রাম শিরোনামে একটি কবিতাও রচনা করেন তিনি।
যার শেষের কয়েকটি লাইন হলো-
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ইঞ্চি জমির ব্যবহার, বাস্তবায়ন করতে হবে গ্রামবাসী সবার।
গ্রামবাসী জাগো বাহে, আলসেমো না করি, আঙিনা উঠান পতিত জায়গায় আদা রোপণ করি।
আদা হল উচ্চ মূল্যের ফসল, কদর নাহি বুঝি, পতিত জায়গা ব্যবহার করে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, তথা স্মার্ট আদার গ্রাম গড়ি।
জাহিদুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান এবং এই কবিতা নিজের মধ্যে একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করে। এরপর বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য প্রতিবেশী-গ্রামবাসীসহ উপজেলা জুড়ে আমার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বস্তায় আদা চাষে উদ্বুদ্ধ করে তুলি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বস্তায় আদা চাষির সংখ্যা ৫০০ পরিবার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি পরিবারে পাঁচ থেকে ৫০০ বস্তায় আদা রোপণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বস্তার সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে প্রতি বস্তায় এক থেকে দুই কেজি আদা উৎপাদিত হয়ে থাকে। সে হিসেবে চলতি মৌসুমে অন্তত: ১০ টন আদা ঘরে তোলা সম্ভব। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩০ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা কাওসার মিশু বলেন, বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা করে জমির দরকার নেই। বাড়িতে সিমেন্টের বস্তায় ফলানো যেতে পারে আদা-হলুদসহ নানা সবজি।
এই পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বাড়ির উঠান, প্রাচীরের কোল ঘেঁষে বা বাড়ির আশেপাশের ফাঁকা জায়গা অথবা ছাদে যেখানে খুশি রাখা যায়। বিশেষ করে ছায়াযুক্ত জায়গাতে এই পদ্ধতিতে চাষ করতে পারেন। সাধারণত বাঁশবাগানের তলায় কোনও ফসল চাষ হয় না। ফলে জায়গাটা পড়েই থাকে। সেই বাঁশবাগানে বস্তায় আদা চাষ করতে পারেন।
বস্তায় চাষ পদ্ধতি: প্রথমে মাটির শুকনো ঢেলা ভেঙে চেলে নিতে হবে। যাতে ঝুরঝুরে হয়। বস্তায় মাটি যাতে ফেঁপে থাকে সেজন্যে ভার্মিকম্পোস্ট ও ছাই মেশাতে হবে। পরিমাণমতো যোগ করতে হবে গোবর সার। মাটি তৈরি হয়ে গেলে বস্তায় ভরে চাষের জন্যে বসাতে হবে ৭৫ গ্রামের একটি করে কন্দ। সামান্য পানি দিতে হবে। এরপর বস্তার ওপর ঢেকে দিতে পারলে ভালো হয়, তাতে মাটিতে আর্দ্রতা বেশিদিন থাকবে। অল্প দিনের মধ্যেই কন্দ থেকে গাছ বেরিয়ে আসবে।
আদা সংগ্রহ: জুন-জুলাই মাসে আদা লাগালে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে তোলার উপযুক্ত হয়ে যাবে। এক একটি বস্তায় তিনটি গাছ থেকে এক-দুই কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। আদা তুলে নেওয়ার পর সেখানে সবজি চাষ করা যেতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।