জুমবাংলা ডেস্ক : ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে বিভিন্ন সংগঠনের ‘বয়কটের ডাক’ দেওয়ার মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের দর উল্লম্ফন দেখা গেছে। কোম্পানিটির শেয়ার দর শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকা স্টেক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
আজ সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ব্যাংকটির শেয়ারের দর শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮ টাকা ১০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। এর আগে দিনের শুরুতে শেয়ারটির দর ছিলো ৩৭ টাকা ৮০ পয়সা।
কোম্পানিটিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। দেশের ব্যাংক খাতের সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগ ৩৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ রয়েছে এই ব্যাংকে।
গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীতে এক সেমিানের জাতীয় শিক্ষাক্রমের সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ‘শরীফ থেকে শরীফা’ শীর্ষক গল্পের দুটি পৃষ্ঠা ছিড়ে ফেলে আলোচনায় আসেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে ওই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়। যদিও ব্র্যাংক বিশ্ববিদ্যালয় গণমাধ্যমকে বলছেন শিক্ষক আসিফ মাহতাব তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকরি করতেন।
ব্র্যাক ইউনির্ভার্সিটর শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে কেন চাকরিচ্যুত করা হয়েছে? তার বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পষ্ট অবস্থান কী? তা বিবৃতির মাধ্যমে জানানোর দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার দিনভর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে মানববন্ধন, বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা দাবি না মানলে সেমিস্টার ফি বন্ধ ও ক্লাস বর্জনের হুঁশিয়ারি দেন। দিন শেষে শিক্ষার্থীদের দাবি না মানায় সব বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের ব্র্যাক বয়কটের (প্রতিষ্ঠানটির সকল পণ্য ও সেবা) ডাক দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় স্থায়ী ক্যাম্পাসের মূল ফটকে আন্দোলনকারীদের পক্ষে মারুফ রহমান বলেন, আমরা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেছিলাম। কিন্তু আমাদের দাবিগুলো মেনে নেয়া হয়নি। তাই আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি সারাদেশ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক বয়কটের (প্রতিষ্ঠানটির সকল পণ্য ও সেবা) ডাক দিলাম।
গত শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক : বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দিতে গিয়ে ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক গল্প পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদ জানান শিক্ষক আসিফ মাহতাব।
তিনি বলেন, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে। এ সময় তিনি সবার সামনে ওই পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন।
এদিকে আসিফকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়টির মূলফটকে মানববন্ধনের ঘোষণা দেয় ‘ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস কমিউনিটি’। বেলা ১২টায় শিক্ষার্থীরা মেরুল বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে শত শত শিক্ষার্থী মানববন্ধনে অংশ নেন। মানববন্ধনে প্রতিবাদকারীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। প্ল্যাকার্ডে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি উল্লেখ করেন, ‘শরিফ থেকে শরিফা মানিনা মানবো না’, ‘আমাদের এই বাংলায় ট্রান্সজেন্ডারের ঠাঁই নেই’ ‘ট্রান্সজেন্ঠার আর হিজড়া এক না, এক না’, ‘নো টু এলজিবিটিকিউ’, ‘তোমার আমার বাংলায় ট্রান্সজেন্ডারের ঠাঁই নেই’, ‘নো টু রেইবো টেরোরিস্ট’, ‘ডাচ ব্র্যাক সাপোর্ট এলজিবিটিকিউ? উই ব্র্যাকিয়ানস ডোনট সাপোর্ট এলজিবিটিকিউ‘. উই ডো নোট প্রমোট এলজিবিটিকিউ‘, ‘সমকামিতার বিরুদ্ধে লড়াই করবো একসাথে‘ ‘আমার সোনার বাংলায় ট্রান্সজেন্ডারের ঠাঁই নেই‘ এসময় বিভিন্ন স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীর।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী একজন শিক্ষার্থী বলেন, আসিফ মাহতাব স্যারের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে। আন প্রফেশনালিজম দেখিয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়কে বলতে চাই, বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউ হোক আর ট্রান্সজেন্ডার হোক কোনো কিছুর ঠাঁই নেই।
ট্রান্সজেন্ডার সকল ধর্মের কাছে অবৈধ, বাংলাদেশের আইন অনুয়ায়ী এটা বৈধ না। যারা এটা বৈধতার জন্য কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা লড়াই করবো। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এর বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
এনিয়ে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভের পর বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে গল্পটির বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন।
ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে ব্র্যাক বয়কটের ডাক দিয়েছে ইসলামী রাজনৈতিক দল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি ইসলামী রাজনৈতিক দল। তাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।