জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীতে সবচেয়ে সস্তাখ্যাত কারওয়ানবাজারেও যখন এককেজি গরুর মাংসের দাম উৎসব উপলক্ষে এরই মধ্যে ছুঁয়ে ফেলেছে ৮০০ টাকা; ১১ শতাংশ ছুঁই ছুঁই খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে ব্যয় সংকোচন নীতির ভীষণ চাপে যখন প্রায় ওষ্ঠাগত সাধারণ মানুষের প্রাণ তখন ‘নিষিদ্ধ’ কথায় দেশজুড়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে মাংস উৎপাদনকারী গরুর জাত ব্রাহমা।
এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ব্রাহমা গরু বাংলাদেশে নিষিদ্ধ নয়। তবুও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে মূল ধারার গণমাধ্যম; সবখানেই বেশ সরব ব্রাহমাকে অবৈধ আর নিষিদ্ধ বলে প্রমাণে বা নিজের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে। সেখানে ব্রাহমাকে নিষিদ্ধ বলতে যতটা আগ্রহ সেখানে এই জাতের লালন-পালন ও বিপণন বাড়লে কতটা কম দামে গরুর মাংস কিনতে পারা যাবে সেই হিসাব নিকাশের ধার ধারছে না যেন কেউ।
দীর্ঘদিন ধরে কেন এই বিতর্ক চলে আসছে তা জানার জন্য সরকারি আইন-কানুন দেখার পাশাপাশি অভিজ্ঞজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ ইমরান বলেন, ‘ব্রাহমা দেশে নিষিদ্ধ বা আনা যাবে না- সরকারের কোনো নীতিমালায় এমনটা বলা নেই।’
সংগঠনটির দাবির ভিত খুঁজবো। তার আগে ব্রাহমা সম্পর্কে জেনে নেই খানিকটা। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য, ২০ থেকে ২৪ মাসে একটি দেশি গরুর মাংস উৎপাদন ক্ষমতা যেখানে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ কেজি সেখানে ব্রাহমা থেকে পাওয়া যায় ১০ গুন বা তারও বেশি। অর্থাৎ, প্রাপ্ত বয়স্ক (২০-২৪ মাস) গরুর মাংস উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে ৭০০-৮০০ কেজি। এর আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ। এই জাত উন্নয়নে ১৮৫৪ সাল থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ব্রাহমা কি সত্যিই নিষিদ্ধ বাংলাদেশে?
প্রথমেই দেখতে চাই কী আছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতি আদেশ। ৩৪ এর ‘ক’ ধারায় ব্রাহমার হিমায়িত সীমেন ও এমব্রায়ো আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার।
বেসরকারি পর্যায়ে গবাদিপশুর প্রজনন কার্যক্রম পরিচালনার সংশোধিত নীতিমালাতে সীমেন আমদানি ও ব্যবহারে শর্ত জুড়ে দেয়া থাকলেও কোথাও উল্লেখ নেই ব্রাহমা নিষিদ্ধের কথা। ২০০৭ সালের জাতীয় প্রাণিসম্পদ নীতিমালাতেও বৈধতা আছে ব্রাহমার।
এবার দেখা যাক প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের বিফ ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের প্রথম ধাপের মধ্যবর্তী মূল্যায়ন প্রতিবেদন; যা প্রকাশ করা হয় ২০১৮ সালে। ২০১৩ সালে হাতে নেয়া ২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের ৩৮টি জেলার ৮০টি উপজেলায় চালানো ওই প্রকল্প মূল্যায়নের ৭ম অধ্যায়ে, ব্রাহমার লালন-পালনকে উৎসাহিত করার সুপারিশ করেছে আইএমইডিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। প্রকল্প চলাকালীন সময়ে সেইসময়ের প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মো. আইনুল হক ওই প্রকল্পের মধ্যবর্তী মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ব্রাহমা জাতের গরুর লালন পালন কতোটা বা কেন দরকার, এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে এরইমধ্যে একটি টেকসই, লাভজনক এবং অধিক মাংস উৎপাদনকারী গরুর কোন জাত না থাকায় চাহিদার তুলনায় প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন অত্যক্ত কম ছিল। দেশ এরইমধ্যে মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এখন প্রয়োজন এর ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখা।’
ওই প্রকল্প পরিচালক এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সাবেক পরিচালক এসএমএ সামাদ জানালেন, ব্রাহমা বাংলাদেশ নিষিদ্ধ- এমন তথ্য নেই তার কাছে। তিনি বলেন, বিগত পাঁচ-ছয় বছরে নতুন কোনো আইন হয়েছে কি না আমার জানা নেই। আগের আইনে এটা নিষিদ্ধ না।
এবার প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের কাছে জানতে চাওয়া হয় ব্রাহমা গরু বাংলাদেশে নিষিদ্ধ কি-না। উত্তরে তিনি বলেন, ‘ব্রাহমা গরু এ দেশে আনা নিষিদ্ধ এমন কিছু লেখা নেই।’
তবে নিষিদ্ধ না হলে কেন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এই জাতকে? জবাবে ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, ‘আমাদের প্রাধান্য দেশি জাত, হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান। আমাদের এসব গরু থাকতে অন্য দেশের গরুর দরকার নেই।’
দেশে যখন গরুর মাংসের দাম চলে যাচ্ছে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে, তখন সহজলভ্য করতে কী করা দরকার? তা জানতে চাইলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কে বি এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ভোক্তাদরে কম দামে মাংস দিতে চাইলে মাংসাল জাতের দিকে চলে যেতে হবে। এটা শুধু গরু না, ছাগল-ভেড়ার ক্ষেত্রেও।
ব্রাহমা ঘিরে এত আলোচনা-সমালোচনার শুরু ২০২১ সালে ঢাকার বিমানবন্দরে। সাদিক অ্যাগ্রোর আমদানি করা ১৮টি গরু জব্দ ও খালাসে হাইকোর্টের দেয়া আদেশে মিথ্যা ঘোষণায় ওই চালান আমদানির কথা বলা হলেও নিষিদ্ধ বলা হয়নি ব্রাহমাকে। সূত্র : সময় সংবাদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।