স্পোর্টস ডেস্ক : ফুটবল মানেই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দ্বৈরথ। দুই দলের মুখোমুখি খেলা হোক বা না হোক কথার লড়াইয়ে মেতে থাকবে সমর্থকরা। ল্যাতিন আমেরিকার এই দুই প্রতিবেশির প্রতিদ্বন্দ্বীতার প্রভাব কেবল আমাদের দেশেই নয়, গোটা পৃথিবীতেই পড়ে। দুই দলের খেলার সময় দুই ভাগে বিভক্ত হয় সারা পৃথিবী। দেশ দুইটির সমর্থনে বিভক্ত হয় পরিবারের সদস্যরা, বিভক্ত হয় প্রিয়জনরাও।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা অফিসিয়াল (ফিফার অনুমোদিত) ফুটবলের লড়াইটা ২০ সেপ্টেম্বর ১৯১৪ সাল থেকে শুরু হলেও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল তারও প্রায় ৯০ বছর আগে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮২৫ সালে সিসপ্ল্যাটাইন ভূখন্ড নিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মেতেছিল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। প্রায় তিন বছর তাণ্ডবের পর ব্রিটিশ এবং ফরাসিদের মধ্যস্ততায় রণাঙ্গণ ছেড়েছিল তারা। দেশ দুইটির যুদ্ধ থামলেও কমেনি উত্তেজনা। যার স্পষ্ট প্রভাব পড়ে ফুটবল মাঠেও।
বর্তমান সময়ে ল্যাতিন আমেরিকার দেশ দুইটির ফুটবলারদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখা গেলেও মাঠের লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলে না। যার প্রমাণ দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে। বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার হিসেব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত দল দুইটি ১০৫ বার মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে আর্জেন্টিনার ৩৮ জয়ের বিপরিতে ৪১টি ম্যাচ জিতেছে ব্রাজিল। এছাড়াও ড্র হয়েছে ২৬টি ম্যাচ। এই ম্যাচগুলোতে আর্জেন্টিনা মোট গোল করেছে ১৬০ আর ব্রাজিল ১৬৩।
বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সংস্থার তথ্য অনুযায়ী মোট ১১৪ বার ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয়েছে। এই হিসেবেও ব্রাজিলই এগিয়ে। তাদের ৪৬ জয়ের বিপরিতে আর্জেন্টিনার জয় ৪২। ড্র এর সংখা ২৬ই।
মুখোমুখি লড়াইয়ে গোলের ব্যবধানে ব্রাজিল এগিয়ে থাকলেও প্রথম ম্যাচটি যেমন আর্জেন্টিনা জিতেছিল তেমনই আবার সেলেসাওদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ গোলের প্রথম জয়ও আলবিসেলেস্তের।
চলুন জেনে নেই দুই দলের সর্বোচ্চ গোল হজমের ম্যাচের ইতিহাস
১৯৪০ সালের ৫ মার্চ রোকা কাপে (ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মধ্যে আয়োজিত একটি বিশেষ সিরিজ। এটাকে কোপা জুলিও রোকা কাপও বলা হতো।) মুখোমুখি হয় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। সেবার শিরোপার লাইড়াইটি ছিল তিন ম্যাচের। যেখানে প্রথম ও শেষ ম্যাচটি জিতে আলবিসেলেস্তেরা
এই সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ব্রাজিলকে ৬-১ গোলে হারায় আর্জেন্টিনা। যা আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোল হজমের ম্যাচ। আর্জেন্টিনার ঐতিহাসিক এল ভিজো গ্যাসোমেট্রোতে (বর্তমানে স্টুডিও গ্যাসোমেট্রো নামে পরিচিত) অনুষ্ঠিত হয়েছিল ম্যাচটি। সাত গোলের এই ম্যাচে হ্যাট্রটিক করেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড কার্লোস ডেসিডেরিও পিউসেল। বাকি তিল গোলের মধ্যে দুইটি করেন হারমিনিও মাসান্তোনিও। ঐতিহাসিন ম্যাচটির অপর গোলটি ছিল এমিলিও বাল্ডোনেডোর। ব্রাজিলের পক্ষে এক মাত্র গোলটি করেন জাইর।
খেলা শুরুর মাত্র তিন মিনিটের মাথায় গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। প্রথ গোলটি করেন মাসান্তোনিও। এরপর ৩৭, ৫৭ ও ৭৯ মিনিটের মাথায় পর পর তিনটি গোল করেন পিউসেল। এক মিনিটের ব্যবধানে ৮০ মিনিটের মাথায় নিজের দ্বিতীয় ও দলের চতুর্থ গোলটি করেন মাসান্তোনিও। খেলা শেষ হওয়ার ঠিক চার তথা ৬৮ মিনিটে শেষ গোলটি করেন বাল্ডোনেডো।
পাঁচ বছর পর আবারও রোকা কাপের আয়োজন করে দেশ দুইটি। এবার আর্জেন্টিনাকে আথিতেয়তা দেয় ব্রাজিল। জিতে নেয় রোকা কাপের শিরোপা। সেই সঙ্গে প্রতিশোধ নেয় পাঁচ বাছর আগের ৬ গোলে পরাজয়েরও। রোকা কাপের ওই আসরে প্রথম ম্যাচে হারে ব্রাজিল। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। ১৯৪৫ সালের ২০ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক ওই ম্যাচে এবার আর্জেন্টিনাকে ৬ গোলে হারায় ব্রাজিল। বিপরিতে অবশ্য আর্জেন্টিনা গোল করে দুইটি। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটিও জিতেছিল ব্রাজিল।
৮ গোলের ওই ম্যাচে ব্রাজিলের হয়ে দুই গোল করেন অ্যাডমির। এছাড়াও চিকো, জিজিনহো, লিওনিডাস ও হেলেনো ডি ফ্রেইতাস একটি করে গোল করেন। আর্জেন্টিনার হয়ে পেনাল্টি থেকে একটি গোল করেন অ্যাডলফো আলফ্রেডো পেডেরনেরা। আলবিসেলেস্তের দ্বিতীয় গোল আসে রিনালদো ফিওরামন্টি মার্টিনো।
রোকো কাপে এরপর আর কখনো আর্জেন্টিনার কাছে শিরোপা খোয়ায়নি ব্রাজিল। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ শিরোপা (৭) ব্রাজিলের দখলে। তিনটি জিতেছে আর্জেন্টিনা। একটি শিরোপা দুই দল যৌথভাবে জিতে। অবশ্য ১৯৭৬ সালের পর রোকো কাপের আর আয়োজন হয়নি।
বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের গ্রুপ পর্বের সূচি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।