ধর্ম ডেস্ক : নামাজের মতোই রোজা গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। এ মাসেই পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘রমজান মাস; যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে। যা মানুষের জন্য আদ্যোপান্ত হেদায়েত এবং সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি, যা সঠিক পথ দেখায়। সত্য ও মিথ্যার মধ্যে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে সে যেন এ সময় অবশ্যই রোজা রাখে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ থাকে বা সফরে থাকে তা হলে সে যেন অন্য সময়ে সমান সংখ্যা পূরণ করে…।’ (সুরা বাকারা : ১৮৫)
প্রত্যেক সুস্থ, বালেগ মুকিম মুসলমানের ওপরে রমজানের রোজা রাখা ফরজ। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ রোজা ভঙ্গ করলে তার জন্য কঠিন শাস্তির হুমকি রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা রোজা ফরজ হওয়ার ব্যাপারে কুরআনে বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)।
রোজা ভঙ্গকারীর ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, আবু উমামা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম আমার নিকট দুই ব্যক্তি আগমন করল। তারা আমার বাহুদ্বয় ধরে আমাকে এক দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে এলো। তারপর আমাকে বলল, আপনি পাহাড়ের ওপর উঠুন। আমি বললাম, আমি তো উঠতে পারব না। তারা বলল, আমরা আপনাকে সহজ করে দেব। আমি ওপরে উঠলাম। যখন পাহাড়ের সমতলে পৌঁছালাম, হঠাৎ ভয়ংকর আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি বললাম, এসব কীসের আওয়াজ? তারা বললেন, এটা জাহান্নামিদের আর্তনাদ। তারপর তারা আমাকে নিয়ে এগিয়ে চললেন। হঠাৎ কিছু লোক দেখতে পেলাম, যাদেরকে তাদের পায়ের মাংসপেশি দ্বারা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এবং তাদের মুখের দুই প্রান্ত ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি বললাম, এরা কারা? তারা বললেন, যারা ইফতারের সময় হওয়ার আগেই রোজা ভেঙে ফেলে’ (ইবনে খুযাইমা : ১৯৮৬)।
আরও ইরশাদ হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শরিয়তসম্মত কোনো কারণ ছাড়া এ মাসে একটি রোজা ছেড়ে দেবে, সে যদি এর বদলে সারা জীবনও সিয়াম পালন করে তবু তার পাপের খেসারত হবে না।’ (বুখারি)
অতএব রোজা ভঙ্গ করা এমন অন্যায় এবং পাপ যার ক্ষতিপূরণ অপূরণীয়। তবে রোজা ভঙ্গকারীর ব্যাপারে মাসআলা হচ্ছে বাহ্যিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে তার ওপর রোজার কাফফারা ওয়াজিব। আর তা পালন হবে এভাবে, প্রথমত গোলাম আজাদ করা (কিন্তু বর্তমানে এই প্রথা চালু না থাকায় এভাবে কাফফারা আদায় সম্ভব নয়)। দ্বিতীয় পর্যায়ে ওয়াজিব হচ্ছে, দুই মাস বিরতিহীন রোজা রাখা। তাও সম্ভব না হলে তৃতীয় পর্যায়ে ওয়াজিব হচ্ছে, ষাটজন মিসকিনকে পেটভরে দুবেলা আহার করানো। প্রথমটি না পারলে দ্বিতীয়টি। দ্বিতীয়টি না পারলে তৃতীয়টি। যেকোনো একটি তাকে আদায় করতেই হবে। অন্যথায় ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গের কাফফারা আদায় হবে না (সুরা মুজাদালাহ : ৩-৪; ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/৩১২)।
আসলে ইচ্ছাকৃত রোজা ভাঙা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টি আর ক্রোধকেই বাড়িয়ে দেয়। সে জন্য কেউ এমনটি করে থাকলে অন্তর থেকে তওবা করে যথাযথ কাফফারা আদায় করা কর্তব্য। তাতেই রোজাভঙ্গকারী তার ওপর আপতিত শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।