জুমবাংলা ডেস্ক : জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও কার্ড প্রিন্ট সেবার নামে ঘুস লেনদেন হাতেনাতে ধরেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল।
বৃহস্পতিবার জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও ইসির আশপাশে এলাকায় ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে দুই দালালকে আটক করেছে ওই দল। দালালদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় নির্বাচন ভবনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য এসআই আউয়াল ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সিনিয়র অপারেটর কলিন্স নামের দুজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া দুদক প্রতিনিধি দল ঘুস লেনদেনে জড়িত অন্যদের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গেছে। শিগগিরই এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দুদকে জমা দেবে বলে জানিয়েছেন অভিযানে অংশ নেওয়া দুদক কর্মকর্তারা। এদিকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ দুদকের দলকে জানিয়েছে, এনআইডি সেবায় জড়িত ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। শিগগিরই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, ২২ নভেম্বর দৈনিক যুগান্তর এ ‘এনআইডি সেবায় হয়রানি : ঘুস লেনদেনের বিশাল নেটওয়ার্ক ইসিতে’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে অংশ নেন দুদকের উপ-পরিচালক আতিকুর রহমান, সহকারী পরিচালক আসিফ আল মাহমুদ, স্বপন কুমার রায় ও মেহেদী মুসা জেবিন। তারা পরিচয় গোপন করে ইসির আশপাশের কম্পিউটার দোকানগুলোতে কয়েকটি এনআইডি সংশোধন করিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন। ওই সময়ে দালালরা এনআইডির তথ্য সংশোধনের ধরন অনুযায়ী তিন হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা দাবি করেন।
অভিযানে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তার স্ত্রীর এনআইডি কার্ড টাকার বিনিময়ে আধা ঘণ্টায় প্রিন্ট করে দেয় দালালেরা। ওইসব আলোচনার সময় মেহেদী হাসান মিরাজ ও জাকির নামের দুই দালালকে আটক করা হয়। আরেক দালাল টের পেয়ে মোবাইল ফেলে পালিয়ে যায়। তাদের হোয়াটস অ্যাপে এসএমএসে টাকার বিনিময়ে বিভিন্নজনের এনআইডি সেবা দেওয়ার তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে দুদক প্রতিনিধি দল।
বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চালানো দুদকের অভিযানের সময় নির্বাচন কমিশন ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে তারা বৈঠকও করেন।
অভিযানের বিষয়ে দুদক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্যরা ছদ্মবেশে সেবাগ্রহীতা সেজে তথ্য সংগ্রহ করে। টিমের সদসরা নির্বাচন কমিশন অফিসের আশপাশের কম্পিউটার দোকানদার এবং ভ্রাম্যমাণ দালাল চক্র অর্থের বিনিময়ে কাজ করিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সত্যতা পায়।
এ সময় দুজন দালালকে হাতেনাতে ধরা হয় এবং উক্ত অফিসের দুজন কর্মচারী জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অভিযানকালে জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নির্বাচন কমিশন হতে একটি তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে কমিশন ও প্রকল্পের কয়েকজন কর্মচারীর জড়িত থাকার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। দুদকের এনফোর্সমেন্টে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে টিম কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
অভিযান চলাবস্থায় দুদকের উপ-পরিচালক আতিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ঘুস লেনদেনের বিশাল নেটওয়ার্ক ইসিতে এরকম একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে চার সদস্যের একটি টিম নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে অভিযান করেছি। আমাদের দু’জন সেবাপ্রার্থী হিসাবে পাশের কম্পিউটার দোকানগুলোতে সমস্যার কথা বলে যে এনআইডি সংশোধন করতে হবে। তারা তাদের কাছে একটি অ্যামাউন্ট দাবি করে। এটা আমাদের অভিযানে সত্যতা পাওয়া যায়। লেনদেনের কিছু অভিযোগ আছে সেগুলো যাচাই করে আমরা প্রতিবেদন দাখিল করব।
তিনি বলেন, ঘুস লেনদেনের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। কম্পিউটারের দোকান, আনসার, দালাল, পুলিশ সদস্য থেকে শুরু করে কমিশনের কর্মকর্তারাও জড়িত আছেন।
এ অভিযানের বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর বলেন, দুদক কর্মকর্তারা কয়েকজনের নাম দিয়েছেন। আমরা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেব।
তিনি বলেন, আমাদের একটি বড় সমস্যা হচ্ছেÑআমরা আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করতে পারিনি। কমিশনের অনুমতি নিয়ে লোকবল কম নিয়ে হলেও ৫-১০ দিনে বা এক মাসে হাজার হাজারে আবেদন নিষ্পত্তি করতে পারব না। আমি আশা করছি, শিগগিরই দেখতে পাবেন আমরা একটি ক্রাশ প্রোগ্রামের পরিকল্পনা করেছি। আগামী তিন মাসের মধ্যে এটা উলেখযোগ্য উন্নতি দেখতে পাবেন।
এনআইডি মহাপরিচালক বলেন, অতিরিক্ত লোকবল নেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, এ সময়ের মধ্যে তিন লাখ ৭৮ হাজার আবেদনই নিষ্পত্তির চেষ্টা করব। যাতে দুর্নীতি করার সুযোগই কমে আসে। সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।