জুমবাংলা ডেস্ক : ব্রহ্মপুত্র দিয়ে চলবে বড় আকারের জাহাজ। ওপরে দৃষ্টিনন্দন স্টিল আর্চ সেতু। জাহাজ চলাচল হবে বাধাহীন, পানিপ্রবাহ থাকবে স্বাভাবিক। কারণ নদে থাকবে না সেতুর পিলার। ব্রহ্মপুত্রের দুই পাড়ে দুটি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে এই সেতু। দেশে প্রথমবারের মতো নির্মিত হতে যাচ্ছে দীর্ঘতম স্টিল আর্চ সেতু। এর কাজ শেষ হলে ময়মনসিংহে যানজট নিরসন ও কয়েকটি জেলার যোগাযোগ সহজ হবে। এতে সুফল পাবেন ব্যবসায়ীরা। তবে কাজ শুরু হওয়ার দীর্ঘসূত্রতায় প্রকল্পের সময় ও খরচ বাড়বে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
ময়মনসিংহ নগরী সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর পাটগুদামে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু মোড়ের যানজট নিরসনের জন্য নির্মাণ করা হবে একটি স্টিল আর্চ সেতু। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবারের আদলে সেতুটি নির্মাণ করা হবে। ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ‘ময়মনসিংহে কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ’ নামে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি।
ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর পাটগুদাম এলাকায় একমাত্র সড়ক সেতু দিয়ে যাতায়াত করে জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের মানুষ। মানুষ ও গাড়ির চাপ বাড়ায় যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে বিভাগীয় শহরটি। যানজট নিরসনে ২০১৮ সালে নতুন সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই বছরের ২ নভেম্বর নগরীর সার্কিট হাউজ ময়দানে জনসভার আগে কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে স্টিল আর্চ সেতুটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
সেতুর নির্মাণকাজের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। সওজ জানিয়েছে, স্টিল আর্চ সেতু নির্মাণ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার ৫০ কোটি টাকা। সেতুর নির্মাণকাজের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খাতে বরাদ্দ ৬০ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৬৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি লাইন অপসারণ ও পুনঃস্থাপনে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৭১ লাখ টাকা বরাদ্দ।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাইপাস মোড় থেকে শুরু হবে মূল সেতুর সংযোগ সড়ক, যা সেতুর অন্য প্রান্ত চায়না মোড় পর্যন্ত ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। সংযোগ সড়ক মূল সেতুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগেই পড়বে ২৫০ মিটার রেলওয়ে ওভারপাস। এরপরই সংযোগ সড়ক মিলবে ৩২০ মিটার দীর্ঘ মূল স্টিল সেতুর সঙ্গে। সেতুতে ২০২ মিটার র্যাম্পসহ ভারী যান চলাচলের জন্য চার লেন এবং মোটরসাইকেল ও হালকা যান চলাচলের জন্য দুটি লেন থাকবে।
এরই মধ্যে প্রকল্প এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ কাজ প্রায় শেষের পথে। তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটির কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগের কাজ চলছে। ঠিকাদার নিয়োগ শেষে আগামী জুনের পর থেকেই সেতুটির দৃশ্যমান কাজ শুরু করা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক আবুল বরকত মো. খুরশিদ আলম। তিনি বলেন, দেশে ছোট একটি স্টিলের আর্চ সেতু আছে। সেটি নড়াইলের কালনায়। তবে ব্রহ্মপুত্রে ব্যালেন্স স্টিল আর্চ সেতুটিই হবে দীর্ঘতম। মূল সেতুটি হবে ১ হাজার ১০০ মিটার। এর মধ্যে স্টিল আর্চ পদ্ধতির হবে ৩২০ মিটার। বাকিটুকু হবে পিসিআই গার্ডার পদ্ধতিতে।
আবুল বরকত মো. খুরশিদ আলম বলেন, সেতুটির পাশে হবে একটি ওয়াচ টাওয়ার। থাকবে দৃষ্টিনন্দন পার্ক। সড়কে চলা ড্রাইভার ও দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হবে নানা ব্যবস্থা। ২০২৫ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
কথা হয় সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল বাশার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, ব্রহ্মপুত্র নদে পিলারবিহীন দৃষ্টিনন্দন সেতুটি নির্মাণ হলে এ জনপদের চিত্র পাল্টে যাবে।
দ্য ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি শংকর সাহা বলেন, ব্রহ্মপুত্রে মাত্র একটি সেতু। যানজটে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় জ্বালানি খরচ বাড়ে, পরিবহন করা পণ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নতুন সেতু হলে এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।