নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরামর্শে ন্যাশনাল ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দেয়া প্রসঙ্গে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, এটা অর্থনীতির জন্য ভালো দিক যে, দুটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা একসাথে বসে কাজ করেছে।
বুধবার অর্থবছরের শেষার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর এই কথা বলেন।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, একটি ব্যাংক যখন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত থাকে তখন এর সেকেন্ডারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকে বিএসইসি। নানা অনিয়মের কারণে সংস্থাটি ব্যাংকের এজিএম স্থগিত করে দেয়। এরপর বোর্ড ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করায় আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। দুটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা একসাথে বসে কাজ করেছে, এটা অর্থনীতির জন্য ভালো দিক। আগে কেউ কারো ছায়া মাড়াতো না। এখন আমরা একসাথে কাজ করছি। এটা ইতিবাচক বিষয়।
গত ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরামর্শে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পর্ষদ ভেঙে দেয়ার পেছনে ৮টি সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেছেন গভর্নর।
আব্দুর রউফ তালুকদার তার আদেশে বলেছেন, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক ঋণনিয়মাচার ও বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে ঋণ অনুমোদন প্রদান করা, পর্ষদ কর্তৃক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ করা, পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যাবহার করে ব্যাংকের শেয়ার একই পরিবারে কেন্দ্রীভূত করা, পরিচালক নির্বাচন/পুনর্নিবাচন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি, পর্ষদের গোচরে পরিচালকগণ কর্তৃক আর্থিক অনিয়ম সংঘটন, পর্ষদের নীতি-নির্ধারণী দুর্বলতার কারণে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি, ব্যাংকিং সুশাসন ও শৃঙ্খলা বিঘ্ন করার মাধ্যমে ব্যাংক কোম্পানি ও আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে পর্ষদ কর্তৃক সম্পৃক্ত থাকায় বিএসইসি’র সুপারিশের প্রেক্ষিতে পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের এসব কর্মকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১–এর ৪৭ (১) এবং ৪৮ (১) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও জনস্বার্থে ন্যাশনাল ব্যাংকের বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশে বলা হয়।
মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘ধারাবাহিক ভাবে মনিটরিং পলিসিতে নীতি সুধহার বাড়ানো হচ্ছে এতে পুঁজিবাজার থেকে আমানত ব্যাংকে আসার কথা, কিন্তু সেভাবে আসেনি। আর ফ্লোর প্রাইজ বহাল থাকার কারণে তারল্য সংকট রয়েছে পুঁজিবভাজারেও। কিন্তু এই মুদ্রানীতি কারণে পুঁজিবাজারে কোন ধরণের প্রভাব ফেলবে কি না’, এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান জানেন।
২০২২ সালের জুন মাসের ১১ তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের পদ ছেরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে যোগদেন আব্দুর রউফ তালুকদার। গভর্নর হিসেবে তিনি যোগদানের পর পরই বিএসইসি থেকে জানানো হয়, সচিব হিসেবে থাকাকালীন সর্বদা পুঁজিবাজারবান্ধব নেতৃত্ব প্রদান করেছেন তিনি। দেশের পুঁজিবাজারের ক্রমবর্ধমান বিকাশে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। আব্দুর রউফের যোগ্য ও কুশলী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আরও ঘনিষ্ঠ ও নিবিড় সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে। সংস্থা দুটি দেশের অর্থনীতিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও, পুঁজিবাজারে বন্ড কেনাবেচা করার জন্য যে সেকেন্ডারি মার্কেট চালু হচ্ছে, সে মার্কেটের উন্নয়নে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
২০২২ সালের ৪ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেছিলেন, আমরা চাই, ভালো ভালো কোম্পানিগুলো বন্ড নিয়ে আসুক। তারা বন্ড ইস্যু করুক। সেকেন্ডারি মার্কেটটা প্রাণবন্ত করুক। সেকেন্ডারি মার্কেট প্রাণবন্ত করার জন্য এবং নতুন বন্ড আনার জন্য যে ধরনের নীতি সহায়তা করা দরকার বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা সবসময় করবে।
পাশাপাশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে ছাড় দিয়ে বন্ড, ডিবেঞ্চার ও ইসলামিক শরীয়াহ ভিত্তিক সুকুকে করা বিনিয়োগ এক্সপোজারের অন্তর্ভূক্ত না করার বিষয়েও বিশেষ ভূমিকা রাখেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
এছাড়াও বিএসইসি চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন বিষয়ে ইতিবাচক আশ্বাস দিয়েছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।