জুমবাংলা ডেস্ক: হাতে জমানো কিছু পুঁজি থাকলে পাইকারি ব্যবসা শুরু করা একটি লাভজনক উপায়। পাইকারি ব্যবসাতে যেমন খুচরো ব্যবসা থেকে প্রাথমিক পুঁজি বেশি লাগে তেমনই লাভও হয় বেশি। জেনে নিন পাইকারি ব্যবসা আসলে কী এবং কিছু লাভজনক পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া। উত্পাদকদের থেকে পাইকারি হারে পণ্য সংগ্রহ করে তা খুচরো ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন পাইকারি ব্যবসায়ী।
পাইকারি ব্যবসায়ীকে প্রাথমিকভাবে ভাল পরিমাণ মাল কিনতে হয়, সেই মাল গুদামে সংরক্ষিত করতে হয় ও প্রয়োজন মতো তা খুচরো ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।
১. কাপড়ের পাইকারি ব্যবসা: কাপড়ের পাইকারি ব্যবসা করতে চাইলে হাতে ৮-১০ লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করা ভাল। তবে তা নির্ভর করবে আপনি কী ধরনের ব্যবসা করতে চাইছেন তার ওপর। এটি একটি লাভজনক পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া। থান কাপড়ের ব্যবসা যেমন করতে পারেন তেমনই করতে পারেন শাড়ি বা পোশাকের পাইকারি ব্যবসা। বাংলার শাড়ি যেহেতু জগত্খ্যাত, শাড়ির পাইকারি ব্যবসায় লাভ ভাল হবে। তাঁতিদের থেকে পাইকারি মূল্যে শাড়ি কিনে স্থানীয় দোকানদারদের তা বিক্রি করুন। এছাড়া অন্যান্য রাজ্যের খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছেও সাপ্লাই করতে পারেন।
২. চালের পাইকারি ব্যবসা: আরও একটি লাভজনক পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া হল চালের পাইকারি ব্যবসা। চাল এমন একটি জিনিস যার চাহিদা সারা বছরই একইরকম থাকে। আমাদের রাজ্যে চালের উত্পাদনও ভাল। তাই চালের পাইকারি ব্যবসা করে প্রচুর আয় করার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে এই ব্যবসা শুরু করতে হলে বিভিন্ন ধরনের চাল ও তার বাজারমূল্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। চালের মিল থেকে চাল কিনে তা খুচরো ব্যবসায়ীদের বিক্রি করুন। চাল কেনার পাশাপাশি চাল পরিবহনেও ভাল পরিমাণ টাকার প্রয়োজন, সুতরাং ব্যবসা শুরুর আগে সেই হিসেবটাও মাথায় রাখবেন।
৩. স্টেশনারি পণ্যের পাইকারি ব্যবসা: স্টেশনারি পাইকারি ব্যবসার বাজার দিন দিন বাড়ছে। ফলে এই পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া থেকে ভাল লাভ করা সম্ভব। তবে এই ব্যবসায় মার্জিন কম থাকে। ব্যবসা চলে টার্নওভারের ওপর নির্ভর করে। প্রস্তুতকারকের থেকে একজন পাইকারি ব্যবসায়ী বা হোলসেলার ৩০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত মার্জিন পান।
তা থেকে খুচরো ব্যবসায়ীকে ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ অবধি মার্জিন দিতে হতে পারে। ফলে গড়ে আপনার মার্জিন দাঁড়াবে ৫-১০ শতাংশ। কোনও কোনও ব্র্যান্ড ৪৫ দিন পর্যন্ত ধারে জিনিস দেয়। এই পাইকারি পাইকারি ব্যবসায় সাফল্য পেতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জিনিস রাখার চেষ্টা করুন। খুচরো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলুন।
৪. মুদি সামগ্রীর পাইকারি ব্যবসা: এটি একটি লাভজনক পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া। মুদির দোকানে নিয়মিত বিক্রি আছে আর তাই তারা নিয়মিত মাল নেবে। তেল, মশলা, ডাল ইত্যাদি নানা পণ্যের ব্যবসা করতে পারেন। কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরের থেকে পাইকারি হারে জিনিস সংগ্রহ করে পৌঁছে দিন খুচরো ব্যবসায়ীর কাছে। কোন কোম্পানির কোন পণ্যের কীরকম চাহিদা সে বিষয় জেনে নিন। নতুন পণ্য সম্পর্কে খোঁজ রাখুন।
৫. ব্যাগের পাইকারি ব্যবসা:এই পাইকারি ব্যবসার আইডিয়াটি লাভজনক কিন্তু এতে প্রয়োজন বেশি পরিমাণ পুঁজি । তবে একবার ব্যবসা চালু হয়ে গেলে লাভ ভাল হবে। নির্মাতাদের সঙ্গে যোগযোগ করে জেনে নিন পাইকারি মূল্য। কোন এলাকার কোন দোকানে সেই ব্যাগ দিলে লাভ হবে তা হিসেব করে নিন। ব্যাগের মানের দিকে নজর দিন, তাহলেই তা বাজারে চলবে।
৬. টি-শার্টের পাইকারি ব্যবসা: তুলনামূলকভাবে কম পুঁজিতে এই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। আমাদের পড়শি দেশ বাংলাদেশে টি-শার্ট তৈরির বহু কারখানা রয়েছে, যেখানে স্বল্পমূল্যে বিশ্বমানের টি-শার্ট তৈরি হয়। উপযুক্ত অনুমতি নিয়ে সেখান থেকে পাইকারি হারে টি-শার্ট এনে আপনার স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারেন। সঠিক পদ্ধতিতে এগোতে পারলে এই পাইকারি ব্যবসার আইডিয়াটি থেকে ভাল পরিমাণ লাভ হবে।
৭. ঘড়ির পাইকারি ব্যবসা: এই পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে দুইভাবে এগোতে পারেন, ব্র্যান্ডেড লাক্সারি ঘড়ির পাইকারি ব্যবসা ও নন-ব্র্যান্ডেড ঘড়ির পাইকারি ব্যবসা। ব্র্যান্ডেড লাক্সারি ঘড়ির ব্যবসা করার জন্য প্রয়োজন বেশি পরিমাণে মূলধন। দামি ব্র্যান্ডেড ঘড়ির প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি রেজিস্টার্ড কোম্পানি থাকা প্রয়োজন, প্রয়োজন একটি সুলিখিত বিজনেস প্ল্যান।
সরাসরি প্রস্তুতকারক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করুন ও সম্পর্ক স্থাপন করুন। এরপর বিভিন্ন ঘড়ির দোকানের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ও ঘড়ি অর্ডার দেওয়ার আগে ঘড়ির দোকানের সঙ্গে চুক্তি করুন। নন-ব্র্যান্ডেড ঘড়ির পাইকারি ব্যবসা করতে পুঁজির লাগবে কম, তবে এক্ষেত্রে ঘড়ির পাইকারি বাজার সম্পর্কে ভাল করে জেনে নিতে হবে। জেনে নিতে হবে কোন প্রস্তুতকারক কোম্পানির থেকে ঘড়ি নিলে লাভ হবে, কাদের ঘড়ির বিক্রি ভাল, বা কাদের ঘড়ির বাজার তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।
৮. থ্রি-পিস বা চুড়িদারের পাইকারি ব্যবসা: বাঙালি মহিলাদের মধ্যে বর্তমানে সবথেকে জনপ্রিয় পোশাক থ্রি-পিস বা চুড়িদার। পশ্চিমবঙ্গের যেকোনও জেলাতেই এই পোশাকের চাহিদা রয়েছে ও সেই চাহিদা বাড়ছে। ফলে থ্রি-পিসের ভাল পাইকারি বাজার রয়েছে এবং এটি একটি লাভজনক পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া। বিভিন্ন দামের ও মানের থ্রি-পিস পাওয়া যায় এবং প্রতিটির নিজস্ব বাজার রয়েছে।
আপনি কোন বাজারে ব্যবসা করতে চাইছেন সেটা প্রথমেই ঠিক করে নিতে হবে। তার ওপরই বাকি ব্যবসার গতি নির্ভর করছে। এর ওপরই নির্ভর করছে আপনার কত পুঁজি লাগবে, কোথা থেকে এমনি মাল সংগ্রহ করবেন ও কোন দোকানে তা সরবরাহ করবেন। যেকোনও পাইকারি ব্যবসা করতে গেলেই পাইকারি মার্কেট সম্পর্কে ভাল ভাবে জানাবোঝা তৈরি করে নেওয়া প্রয়োজন। ভাল করে ব্যবসার পরিকল্পনা করে ও সেই পরিকল্পনা যাচাই করে তবেই ব্যবসায় নামুন।
পাইকারি ব্যবসায় যেহেতু বেশি পরিমাণ পুঁজি প্রয়োজন ফলে একবার বিনিয়োগ ডুবে গেলে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হতে পারে। ব্যবসার পরিকল্পনা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হলে বিভিন্ন ঋণপ্রকল্পের থেকে ঋণ নিয়েও ব্যবসা শুরু করতে পারেন। উপরে উল্লিখিত পাইকারি ব্যবসা আইডিয়াগুলি ছাড়াও আরও বহু লাভজনক পাইকারি ব্যবসা রয়েছে। আপনার জন্য ও যে বাজারে আপনি কাজ করতে চাইছেন তার জন্য উপযুক্ত ব্যবসাটি বেছে নিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।