জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের দশ ব্যাংকের গ্রাহকরা অনলাইনে শুল্ক কর পরিশোধ করতে পারছেন না। সেই সঙ্গে এসব ব্যাংকের পে অর্ডারও নিচ্ছেন না শিপিং এজেন্টরা। এমনকি অন্য ব্যাংকে ফান্ড (তহবিল) স্থানান্তর করতেও পারছেন না আমদানিকারকরা। এ অবস্থায় বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা।
পণ্য ডেলিভারি নিতে বিলম্ব হওয়ায় বন্দরে কনটেইনার জট বাড়ছে। শিপিং লাইনের কর্মকর্তা বলছেন, এসব ব্যাংকের পে অর্ডার ক্যাশ হবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। তবে তাঁরা অন্য ব্যাংকের পে অর্ডার গ্রহণ করছেন। সরকার থেকে এসব ব্যাংক নিয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পেলে পে অর্ডার নেবেন তাঁরা।
সাধারণত পে অর্ডার এবং রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্টের (আরটিজিএস) মাধ্যমে অনলাইনে নিজস্ব ব্যাংক হিসাব থেকে শুল্ক কর পরিশোধ করেন আমদানিকারকরা। শিপিং বিল, পোর্ট ডেমারেজসহ বিভিন্ন চার্জ ও ট্যারিফ পরিশোধ করা হয় পে অর্ডারের মাধ্যমে। কিন্তু আর্থিক ঝুঁকিতে থাকা এস আলমের সাত ব্যাংকসহ ১০টি ব্যাংকের গ্রাহকরা অনলাইনে শুল্ক কর পরিশোধে সমস্যায় পড়েছেন। এসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে আরটিজিএস করতে পারছেন না গ্রাহকরা।
এ অবস্থায় টাকা পাওয়া যাবে কি না সেই শঙ্কায় শিপিং বিল পরিশোধে এই ১০ ব্যাংকের পে অর্ডার নিচ্ছেন না শিপিং এজেন্টরা। ফলে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি ব্যাহত হচ্ছে।
গত ১৬ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কার্যক্রম সীমিত এবং এসব ব্যাংক থেকে ঋণপত্র (এলসি) খোলা নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে এস আলমের অরেকটি ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন শিপিং এজেন্টগুলো এ সাত ব্যাংক ছাড়াও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও সাউট ইস্ট ব্যাংকের পে অর্ডারও গ্রহণ করছেন না।
গত বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ শিপিং লাইন ও সিএনএফ এজেন্টের কয়েকটি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, এসব শিপিং লাইনের অফিসের প্রবেশমুখে লিখে রাখা হয়েছে এ ১০ ব্যাংকের নাম। এসব ব্যাংকের পে অর্ডার গ্রহণ করা হবে না বলে নির্দেশনাও দেওয়া হয়। তাই এসব ব্যাংক ছাড়া অন্য ব্যাংকের পে অর্ডারে লেনদেন করার অনুরোধ জানানো হয়। এসব ব্যাংকের মধ্যে আলোচিত শিল্প গ্রুপ এস আলমের রয়েছে সাতটি। তবে এস আলম গ্রুপের মালিকাধীন হলেও আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকের পে অর্ডার নিতে দেখা গেছে শিপিং লাইনগুলোকে।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এই প্রতিবেদক। তাঁরা জানিয়েছেন, এসব ব্যাংকের আর্থিক ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। আর এসব ব্যাংকের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা ধরনের বিধি-নিষেধও রয়েছে। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোনো শিপিং লাইন এসব ব্যাংকের পে অর্ডার কিংবা লেনদেনের ঝুঁকি নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কারণ পে অর্ডার নগদায়ন সম্ভব না হলে বিলের টাকা পাবেন না তাঁরা। তাই আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে অনেক শিপিং লাইন দুর্বল ব্যাংকের পে অর্ডার নিচ্ছে না।
সিএনএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের বন্দরবিষয়ক সম্পাদক লিয়াকত আলী হাওলাদার বলেন, ‘হঠাৎ করে শিপিং লাইনগুলো বার্তা দিল, তারা ১০ ব্যাংকের পে অর্ডার নেবে না। অথচ সরকার এসব ব্যাংক বাতিল করেনি। এখনো এসব ব্যাংক শিডিউল ব্যাংক হিসেবে আছে। আমাদের অনেক সিএনএফ এজেন্টের একটি মাত্র ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে। অথবা দুটি ব্যাংকে হিসাব খোলা আছে। দেখা গেল এসব ব্যাংকের পে অর্ডার তারা নিচ্ছে না। অথচ তারা কোনো যৌক্তিক কারণও দেখাচ্ছে না। আমাদের ধারণা, তারা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে, ভাবছে এই পে অর্ডারগুলো ক্যাশ হবে না। এখন আমরা যদি সঠিক সময়ে পেমেন্ট করতে না পারি, কাস্টমের পেমেন্ট না পেলে পণ্য ছাড় করতে দেবে না। তখন পণ্য নিতে পারব না। ফলে বন্দরে জট হবে।’
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘ওই সব ব্যাংকের সঙ্গে যারাই জড়িত, সবার মনে একটা আশঙ্কা আছে। তাঁরা (শিপিং লাইনের মালিকরা) ভাবছেন, যদি ব্যাংকে টাকা না থাকে তাহলে পে অর্ডার ক্যাশ হবে কিভাবে! সরকার যদি এসব ব্যাংকের বিষয়ে নিশ্চিয়তা দিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রদান করে, তখন শিপিং লাইনগুলো যেমন আশা পাবে, তেমনি আমদানিকারকদেরও অনিশ্চিয়তা কাটবে।’ সূত্র : কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।