তারেক মাহমুদ : চট্টগ্রামের মানুষ দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর বেশি নির্ভরশীল। তবে এসব পেঁয়াজের দাম বেশি। দুই মাস ধরে খাতুনগঞ্জে পাকিস্তান ও মিসরীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এর মধ্যে তুলনামূলক দাম কম ও ঝাঁজ বেশি থাকায় পাকিস্তানি পেঁয়াজের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে সাধারণ ক্রেতাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জে দুই মাস আগে পাইকারিতে মিসরীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে পাইকারিতে দাম কমে পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৮৩ টাকা ও মিসরের পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ আকারভেদে ৯৮ থেকে ১০২ টাকায়, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি থাকায় এসব পেঁয়াজে আগ্রহ নেই সাধারণ ক্রেতাদের।
নগরের নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘বর্তমানে মুদির দোকান থেকে প্রতি কেজি মিসরীয় পেঁয়াজ ৯০ থেকে ৯২ টাকায় এবং পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৯০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ কিনতে গেলে কেজিপ্রতি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা গুনতে হয়। এর চেয়ে পাকিস্তানি পেঁয়াজের ঝাঁজ ভালো, দামও কেজিপ্রতি ২০ টাকা কম। এটাই বেশি কিনছি।’
নগরের ষোলশহর এলাকার আল আমিন স্টোরের মালিক মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম একই থাকায় কয়েক মাস আগেও মানুষ ভারতীয় পেঁয়াজ বেশি কিনেছিলেন। বর্তমানে পাকিস্তানি পেঁয়াজের দাম কমে আসায় মানুষ এখন এদিকেই ঝুঁকেছেন। তাই আমিও এখন পাকিস্তানি পেঁয়াজ বেশি রাখছি।’
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ‘পাকিস্তান, চীন, মিসর, থাইল্যান্ড থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলে থাকেন আমদানিকারকরা। তবে এ বছর সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ এসেছে পাকিস্তান থেকে। ভারতীয় পেঁয়াজ দেখতে সুন্দর ও ঝাঁজ থাকায় এ পেঁয়াজের প্রতি মানুষের আগ্রহ ছিল। কিন্তু দাম কমে আসায় ও ঝাঁজ বেশি থাকায় পাকিস্তানি পেঁয়াজ ওই জায়গা দখল করে নিয়েছে।’
খাতুনগঞ্জে বেশির ভাগ সময় দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে থাকে। গত দুই মাস ধরে বৃহত্তর বাজারটিতে আসতে শুরু করে চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক ও মিসরের পেঁয়াজ। সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে আসা পেঁয়াজের বস্তায় দুই থেকে তিন কেজি ওজনের পাথর পাওয়া যাচ্ছে- এমন গুজব চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাকিস্তানি পেঁয়াজের বস্তায় কোনো পাথর পাওয়া যায়নি। এটা গুজব। তবে মিসর ও তুরস্ক থেকে আসা পেঁয়াজের বস্তায় মাঝেমধ্যে পাথরের টুকরো পাওয়া যায়।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা আরও জানিয়েছেন, ২০২০ সাল থেকে চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক ও মিসর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়া যাচ্ছে। সেটা আবার সব কনটেইনার বা পেঁয়াজের বস্তায় নয়। বড়জোর একটা কনটেইনারে দুই থেকে তিনটি বস্তায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। এটা ইচ্ছাকৃত সেটাও বলা যাবে না। বিদেশের পাহাড়ি এলাকায় পেঁয়াজগুলো বস্তায় ভরা হয়। অনেক সময় ওই দেশি শ্রমিকদের গাফিলতি বা অসচেতনতার কারণে এমনটা হয়ে থাকে। কিন্তু এতে করে ব্যবসায়ীদের তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। একটি মহল বিষয়টিকে বাড়িয়ে বলে গুজব ছড়াচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ শুধু খাতুনগঞ্জে নয়, দেশের অন্যান্য পাইকারি বাজারেও বিক্রি হচ্ছে। অন্য কোথাও থেকে অভিযোগ এল না। সম্প্রতি চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি বাজারে একটি পেঁয়াজের বস্তায় কিছু পাথর পাওয়া যায়। এটাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের গুজব সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা মোটেও কাম্য নয়।’
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়ার বিষয়টি আমরাও শুনেছি। আমরা নিজেরাও অবাক। কারণ পণ্যভর্তি একটি কনটেইনার যখন বিদেশ থেকে আমাদের বন্দরে আসে, আমরা কনটেইনার খুলে ওই পণ্যের গুণগতমান, পরিমাণ সবকিছু যাচাই করে দেখি। আমরা যখন পরীক্ষা করেছি, তখন আমাদের হাতে কোনো পাথর পড়েনি। এ রকম কিছু পেলে আমরাই সেটা আটকে দিতাম। তবে আমরা এখন থেকে পণ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে আরও বেশি কঠোর হব।’ সূত্র : খবরের কাগজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।