বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : তাপ প্রবাহে পুড়ছে গোটা দেশ। গত দুই সপ্তাহের টানা তাপপ্রবাহে মানুষের জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে৷ বিশেষ করে কংক্রিটের নগরী ঢাকা যেন ফুটন্ত কড়াইতে রূপ নিয়েছে৷ রাস্তায় নামলেই মিলছে তার প্রমাণ। তাপপ্রবাহের কারণে মুহূর্তেই ঘামে শরীর যাচ্ছে ভিজে৷
তবে রাস্তায় অস্বস্তি হলেও বাসায় গিয়ে স্বস্তিতে থাকতে অনেকেই ছুটছেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসির) দোকানে। এক সময়ের উচ্চবিত্তের বিলাসিতা এসি এখন মধ্যবিত্তের প্রয়োজনীয়তায় রূপ নিয়েছে৷ তাই কিস্তি কিংবা নগদে হোক মানুষ ভিড় করছে এসির দোকানে। সাধ্যমতো পছন্দের কোম্পানির এসিও কিনছেন। তবে এসি কিনলেও ঠিক সময়ে লাগাতে পারছেন না।
কারণ এই গরমে এসির চাহিদা বাড়লেও সংকট রয়েছে টেকনিশিয়ানের৷ সংশ্লিষ্ট এসির শোরুমগুলোর ব্রাঞ্চ ইনচার্জ কিংবা দায়িত্বরত কর্তাব্যক্তিরা এমনটি জানিয়েছেন। এদিকে টেকনিশিয়ান সংকট থাকায় এসি কিনেও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। ফলে অনেকেই এসি কিনে ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন।
ঢাকার ইস্কাটন এলাকার বাসিন্দা আজাহার উদ্দিন । চলমান গরমে কিছুটা স্বস্তি পেতে সম্প্রতি একটি এসি কিনেছেন। তবে নিজের ঘরে সেই এসি বসাতে না পেরে এক প্রকার হতাশ হয়েছেন।
তিনি বলেন, স্থানীয় একটি ইলেকট্রনিকসের দোকান দুইদিন আগে একটি এসি কিনি।কেনার সময় বিক্রেতা দুই দিনের মধ্যে টেকনিশিয়ানরা তার বাসায় গিয়ে এসিটি বসিয়ে দিয়ে আসবেন এমনটি আশ্বাস দেন। কিন্তু চারদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও টেকনিশিয়ান আসেননি। আমাদের এখনও তাদের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’
ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি মুঠোফোনে ওই দোকানের ম্যানেজার কাছে বিলম্বের কারণ জানতে চান। তখন ম্যানেজার বলেন, তীব্র গরমে এসির চাহিদা অনেক বেড়েছে। তাই টেকনিশিয়ানরা সময়মতো কাজ করে দিতে পারছেন না। ফলে জমে যাওয়া কাজের কারণে তারা সময়মতো এসি বসাতে পারছেন না।’
এই গরমে টেকনিশিয়ানের সংকট রয়েছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরাও৷ একটি এসি বসাতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। আবার অনেকে বহুতল ভবনে এসি বসান। ফলে রোদে অনেক টেকনিশিয়ান রোজ কাজ করে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন। ফলে সময় বেশি লাগছে।
এ বিষয়ে বাংলামোটরে ওয়ালটন প্লাজার ব্রাঞ্চ ইনচার্জ মো. হান্নান পারভেজের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ঈদের পর থেকে প্রতিদিন এই ব্রাঞ্চে গড়ে ১০ থেকে ১২টি এসি বিক্রি হচ্ছে। অন্য সময় যেখানে মাসেই বিক্রি হতো চার থেকে পাঁচটি এসি। সেখানে গরম যতই বাড়ছে ততই আমাদের শোরুমগুলোতেও বাড়ছে ক্রেতার সংখ্যা। ফলে টেকনিশিয়ানদের কাজের চাপ অনেক বেড়েছে। তাই আমরা এসি বিক্রির আগেই ক্রেতাদের কাছে ‘এসি’ লাগাতে সময় লাগবে এমনটি বলে নিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা এমন কথা বলেই এসি বিক্রি করছি। কারণ গত কয়েকদিনে টেকনিশিয়ানরা দম ফেলানোর সময় পাচ্ছেন না। অনেকে রোজ কাজ করার কারণে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তাই আমরা সময় নিয়ে নিজস্ব টেকনিশিয়ান দিয়ে এসি লাগিয়ে দিচ্ছি। ‘
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ওয়ালটন, সিঙ্গার, মিনিস্টার, ইলেক্ট্রোমার্ট, ট্রান্সকম, এসকোয়্যার,বাংলাদেশ, বাটারফ্লাই, র্যাংগ্স, ইলেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল, ভিশন, এলজিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসি উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, রোজার ঈদের পরে মূলত এ মৌসুমের এসি বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে এক সপ্তাহ ধরে বিক্রি বেশি বেড়েছে।
কোম্পানিগুলোর ব্রাঞ্চ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ব্র্যান্ডভেদে প্রতিটি এসির দাম ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকা বেড়েছে। তবে কেউ কেউ দাম বাড়ায়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দেড় বছর ধরে ডলার–সংকটের কারণেই মূলত এসির দাম বেশি বেড়েছে।
রাজধানীর ইলেক্ট্রোমার্ট পল্লবী শোরুমে মিরপুর-১৩ বাসিন্দা তন্ময় রহমান ইনভার্টার দেড় টনের একটি এসি ক্রয় করেন। তিনি বলেন, প্রচন্ড গরমে ফ্যান দিয়েও বাসাতে থাকা যায় না। এর চেয়েও বড় বিষয় বাসায় ছোট বাচ্চারা থাকায় এসি কেনা তাগিদটা বেশি। তাই ইনভার্টার দেড় টনের এসিটা কিনলাম। তবে এসি কিনলেও তা ফিটিং করতে সময় লাগবে পাঁচদিনের মতো। তাই আমি হতাশ।
কেন এত সময় লাগবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার জানিয়েছেন লোকবল সংকটের কথা। দিন যাচ্ছে এসির চাহিদা বাড়লেও দক্ষ টেকনিশিয়ান চাহিদা বাড়ছে না। তাই সময় লাগছে।
রাজধানীর মিরপুরে এসি ও ফ্রিজ মেরামতের দোকানের মালিক খলিলুর রহমান বলেন, দাবদাহ শুরু হওয়ার পর থেকে এসি টেকনিশিয়ানের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন নতুন এসি বসানোর কাজের অর্ডার নিয়ে আসেন। এছাড়া অন্তত তিন থেকে চারজন মেরামতের কাজ নিয়ে আসেন।’
‘কিন্তু আমাদের পর্যাপ্ত কর্মী নেই, তাই আমরা প্রতিদিন মাত্র দুই থেকে তিনটি এসি বসাতে পারি। তাই বাকিগুলো আমরা পর্যায়ক্রমে বসানোর সময় ঠিক করি। কোনও কোনোটার জন্য চার দিন বা তারও বেশি সময় পরে বসানোর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।’
তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও টেকনিশিয়ানের এত চাহিদা আগে কখনো দেখেননি। সূত্র : দেশ রূপান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।