পুরুষ প্রাণী করে থাকে গর্ভধারণ, বিষয়টি আজগুবি নয় একেবারেই। এই আচরণ করা প্রাণীটির নাম সি হর্স বা হিপোক্যাম্পাস। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের অগভীর সমুদ্রে এই প্রাণীটিকে দেখতে পাওয়া যায়। সি হর্সের মুখ আর গলা ঘোড়ার মতো। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ভঙ্গিমা, আঁকড়ে ধরার ক্ষমতাযুক্ত বাঁকানো লেজ দেখলেই সমীহ জাগে মনে।
এটি Actinopterygii পরিবারভুক্ত একটি মেরুদণ্ডী প্রাণী। মাছ বলা হয়, কারণ এরা মাছের মতোই কানকোর মাধ্যমে শ্বাসকার্য চালায়। তাই ইচ্ছা করলে সি হর্সকে ঘোড়া-মাছ বলতে পারেন, মাছের সঙ্গে মিল না থাকলেও। এদের চারটি পাখনা আছে। লম্বা লেজের পিছন দিকে একটি, পেটের ঠিক নীচে একটি, অন্য দু’টি চোয়ালের দুই পাশে। সি হর্স প্রতি সেকেন্ডে ৫০ বার পাখনাগুলি নাড়তে পারে। পাখনা থাকলেও সি হর্স অন্যান্য মাছের মতো দ্রুত চলাচল করতে পারে না গঠনগত কারণে।
সি হর্সের স্ত্রী প্রাণীটি নয়, পুরুষ প্রাণীটিই গর্ভধারণ করে। সারা প্রজনন ঋতু পুরুষ সি হর্স কাটায় এক প্রেমিকাকে নিয়েই। এমনিতে এরা খুব ভীতু। সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকে। এই বুঝি কেউ খেয়ে ফেলল। ভালো সাঁতারও কাটতে পারে না। ফলে দূরে গিয়ে সঙ্গী বা সঙ্গিনী খোঁজা কঠিন। তাই সঙ্গী বা সঙ্গিনী কাছে বিশ্বস্ত থাকে সি হর্সেরা।
প্রজনন ঋতুতে অনেক বেশি শাবকের জন্ম দিতে পারে। প্রত্যেকদিন নিয়ম করে তারা সোহাগ জানায় একে অপরকে। সোহাগ জানায় আদর করে, নাচ দেখিয়ে, রঙ পরিবর্তন করে। সারাদিনের জন্য আলাদা হয়ে যাওয়ার আগে, কিছুক্ষণ তারা একসঙ্গে একটু ঘুরেও নেয়, গালে গাল লাগিয়ে।
সি হর্স দম্পতি দুজন একই ঘাসকে আঁকড়ে নিজেদের নোঙর করে। তারপর একে অপরকে পেঁচিয়ে শুরু হয় সঙ্গম। উভয়ের শরীরে কম্পন দেখা দেয়। স্ত্রীটি তার ‘ওভিপজিটর’ নালি ঢুকিয়ে দেয় পুরুষের ‘ব্রুড পাউচ’ নামের থলিটির মধ্যে। মাত্র ৬ সেকেন্ডের মধ্যে স্ত্রী সি হর্স তার পুরো ডিম্বাণু ঢেলে দেয় পুরুষের থলির মধ্যে। থলির ভেতর থাকে সমুদ্রের জল। পুরুষটি এবার সেই জলের ভেতর শুক্রাণু ছেড়ে দেয়।
শুক্রাণুর সঙ্গে ডিম্বাণুর মিলন হয়। তৈরি হয় ভ্রূণ। স্ত্রী সি হর্সের শরীর স্লিম হয় পুরুষ সি হর্সের পেট ফুলতে থাকে। এসময়, সঙ্গীকে ছেড়ে দূরে যায় না স্ত্রী সি হর্স। বরং অপেক্ষা করে কখন তার পুরুষ সঙ্গী সন্তান প্রসব করবে। আবার প্রেম ফিরবে দুজনের জীবনে। একবার মিলনে আবদ্ধ হলে এরা কখনই একে অন্যকে ছেড়ে যায় না।
প্রজাতি ভেদে ৯ থেকে ৪৫ দিন গর্ভধারণ করে পুরুষ সি হর্সরা। পুরুষটি গর্ভধারণ কালে ৩৩% বেশি অক্সিজেন নেয়। বেশি খাবার খায়। পুরুষটির গর্ভধারণকালে স্ত্রী সি হর্স প্রতিদিন সকালে একবার করে পুরুষ সঙ্গীকে দেখতে আসে। আদর করে, খাবার খুঁজে নিয়ে এসে পুরুষটিকে খেতে দেয়।
ডিমগুলো থলিতে নিয়ে পুরুষ সি হর্স খুব সাবধানে চলাফেরা করে। কোনও জলজ উদ্ভিদ বা পাথরের উপর বসে কাটিয়ে দেয় দিন ও রাতের বেশিরভাগ সময়। থলির ভেতর বাড়তে থাকা ছানাগুলোর যাতে কোনো কষ্ট না হয়। পুরুষের শরীর থেকেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি আর অক্সিজেনই নিয়ে বাড়তে থাকে সি হর্সের ছানাপোনারা। বাবা সি হর্সের উদর ক্রমশ বড় হতে থাকে।
ব্রুড পাউচে থাকা শিশু সি হর্সগুলি প্রসবের উপযোগী হয়ে গেলে, পুরুষ সি হর্স সন্তান প্রসব করে। প্রজাতি ভেদে ১০০ থেকে ১০০০টি পর্যন্ত সন্তান প্রসব করে পুরুষ সি হর্সেরা।
সন্তানদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুরুষ সি হর্স প্রসব করে রাতের অন্ধকারে। তবুও প্রসব করা শিশু সি হর্সগুলির মধ্যে মাত্র ০-০.৫% বাচ্চা পূর্ণবয়স্ক হতে পারে। খাদক প্রাণী, জলের স্রোত, উষ্ণতা বাকি শিশু সি হর্সগুলির আয়ু কেড়ে নেয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।