জুমবাংলা ডেস্ক : অনিয়মিত ও পক্ষপাতমূলক বর্তমান ভাইভা বোর্ড ও তার ফলাফল বাতিল ঘোষণাসহ চার দফা দাবি তুলেছেন বিমানের ক্রু পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা। তারা মনে করেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে অনিয়ম করা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে মেধার মূল্যায়ন না করে অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তবে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র এ বিএম রওশন কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হবে, আমরা সেভাবে কাজ করবো। এর বাইরে এখেই এ বিষয়ে আর কিছু বলা যাচ্ছে না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৪ অক্টোবর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ছেলে ৫০ ও মেয়ে ৫০ মোট ১০০ জন কেবিন ক্রু নিয়োগের সার্কুলার প্রকাশ করে। এর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ৮ মার্চ। মৌখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ১৭ মে। এ নিয়োগে সর্বশেষ মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৪০৩ জন। এর মধ্যে ২৫২ জন ছেলে আর ১২৪ জন মেয়ে। গত ২৭ মে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে বাংলাদেশ বিমান। এই ফলাফলে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে বলা হয়, মৌখিক পরীক্ষায় দায়সারা ও অসম্পূর্ণ মূল্যায়ন করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাইভা এক-দুই মিনিটে শেষ করে দেওয়া হয়েছে— যা যোগ্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে অপ্রতুল ও অগ্রহণযোগ্য। লিখিত পরীক্ষায় তুলনামূলকভাবে কম নম্বরপ্রাপ্তদের মেধা তালিকায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, যা সত্যিকারের মেধাবীদের প্রতি অবিচার। বিপুল অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কিছু প্রার্থীকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন অনুত্তীর্ণ প্রার্থী। তারা বলেন, সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ভাইভা গ্রহণের এখতিয়ার নেই। অথচ তিনি নিজের প্রভাব খাটিয়ে বোর্ড গঠন করে ভাইভা পরিচালনা করেছেন। বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতার জালিয়াতি পাওয়া সত্ত্বেও কিছু প্রার্থীকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কিছু প্রার্থীকে কোনও প্রশ্ন না করেই ভাইভায় উত্তীর্ণ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও বেআইনি। ভাইভা বোর্ডে সদস্য মনোনয়নে স্বচ্ছতা ছিল না এবং অডিও-ভিডিও রেকর্ড সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না।
উত্তীর্ণ না হওয়া শিক্ষার্থী মামুনুর রশীদ, বনক রহমান, রাসেল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমেরা যে মৌখিক পরীক্ষা দিতে এসেছি, তা মনে হয়নি। যাচ্ছেতাই একটা বিষয় ছিল। তারা যে পূর্বে থেকে পেইডকে নিয়োগ দেবে, সেটা আমরা বুঝতে পারি। ফলাফলে ওটাই আসলো।
তারা বলেন, ভাইভায় ডেকে অনেককে কিছু জিজ্ঞাসা না করেই বের করে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেককে বাবা-মায়ের নাম জিজ্ঞাসা করেই বের করে দেওয়া হয়েছে।
অনুত্তীর্ণ এই তিন প্রার্থী জানান, যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা আসলে কতটুকু মেধাসম্পন্ন তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।
তারা বলেন, এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আমরা বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনকে আমরা জানিয়েছি। রবিবার (১ জুন) তার কাছে লিখিত আকারে জানাবো।
তারা বলেন, আমরা চারটি দাবির কথা করছি। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— অনিয়মিত ও পক্ষপাতমূলক বর্তমান ভাইভা বোর্ড ও তার ফলাফল বাতিল ঘোষণা করতে হবে। নিরপেক্ষ, পেশাদার ও বহুমাত্রিক (মাল্টি ডিসিপ্লিনারি) সদস্য নিয়ে একটি নতুন ভাইভা বোর্ড গঠন করে পুনরায় মৌখিক পরীক্ষা নিতে হবে। অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভবিষ্যৎ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি-নির্ভর রেকর্ডিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও’র বক্তব্য
নিয়ম না থাকার পরও ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও লিখিত বক্তব্যে জানান, ‘পূর্বে অনেক নিয়োগ নিয়েই প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়ায় এবং তদবির থাকার প্রশ্ন বিভিন্ন মহল থেকে বিমানের ঊর্ধতন অথরিটির কাছে আলোচিত হয়েছে। কেবিন ক্রু-সহ অন্যান্য নিয়োগকে ‘নিয়োগ বাণিজ্য’ সহ সব ধরনের অনিয়ম রোধে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও নিয়মতান্ত্রিক করার জন্য পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ বোর্ড পুনর্গঠিত এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও-কে কেবিন ক্রু কমিটির প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। আলোচ্য নিয়োগে যারা লিখিত পরীক্ষায় এবং মৌখিক পরীক্ষা দুটো মিলিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন, তাদের মেধা তালিকা অনুসারে নিয়োগ প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। উল্লেখ যে, নিয়োগ পরীক্ষার মূল্যায়নে তিনটি কমিটি কাজ করে। একটি কমিটি লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে, আরেকটি কমিটি মৌখিকপরীক্ষার মূল্যায়ন করে। আর তৃতীয় কমিটি প্রথম দুটি কমিটির মূল্যায়ন করে কম্পাইল করে। অর্থাৎ লিখিত পরীক্ষার অংশগ্রহণকারীদের নম্বর মৌখিক পরীক্ষা কমিটির জানা সম্ভব নয়। এই তিন স্তরের মূল্যায়নের মাধ্যমে কার্যকরভাবে প্রকৃত মেধাবীদের মূল্যায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘একটি কুচক্রী মহল, যাদের কয়েকজনকে ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের নিয়োগ বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি হওয়ায়, পরিকল্পিতভাবে এধরনের মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং মানহানিকর প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।