জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে হওয়া চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে রাজনীতিক নেতৃত্বকে ৫০ শতাংশ দায়ী বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) জিল্লুর রহমান। এছাড়াও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও এক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ দায় রয়েছে। বাকি অন্যান্য এক শতাংশ কারণে চাঁদাবাজি এখনও বন্ধ হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর লালমাটিয়ায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ (বিআইএসআর) ট্রাস্ট অফিসে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে চাঁদাবাজি প্রতিরোধ’ শীর্ষক বিশেষ সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ডিআইজি জিল্লুর রহমান বলেন, পুলিশের কর্তারা চাইলেই চাঁদাবাজি অর্ধেক বন্ধ করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখতে হবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের।
অনুষ্ঠানে তিনি চাঁদাবাজির বিভিন্ন দিক ও ধরণ এবং তার সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করে বলেন, ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজি করা পক্ষের হাতবদল হয়েছে মাত্র, কিন্তু বন্ধ হয়নি। এত এত টাকা লুটপাটের খবর, সব টাকা তো আর পাচার হয়ে যায়নি। স্পেশাল টিম গঠন করে লুটপাট করা টাকা খুঁজে বের করা যেতো। রাজনৈতিক নেতারা আন্তরিক হলেই চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব বলেও তিনি দাবি করেন।
বর্তমানে সাইলেন্ট চাঁদাবাজি হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সমাজের অনেকেই পুলিশকে দোষারোপ করে। পুলিশ একাই যে করছে তা না। এখানে অনেকেই জড়িত। আমাদের সমাজের সকল নাগরিককে ভালো হতে হবে। যারা চাঁদা দেয় তারাও উৎসাহিত করেছে পুলিশদের। একটি জেলার এসপি সৎ হলে সেখানে অর্ধেক দুর্নীতি কমে যাবে। পুলিশের ইমেজটাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। কোনও অনুষ্ঠানে গেলে বলে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। আসলে আইন প্রণয়নের দরকার নাই। বিদ্যমান আইনের সঠিক ও সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলেও সমাধানের দিকে অনেকাংশে ধাবিত হতো। আমাদের নিজেদের আত্মশুদ্ধি ও সংস্কার দরকার।
র্যাবের মতো এলিট ফোর্স বিলুপ্ত না করে তা রাখার দরকার আছে বলে মন্তব্য করে পুলিশের এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের পক্ষে একা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা নয়।
অনুষ্ঠানের মডারেটর বিআইএসআর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সমাজবিজ্ঞানী ড. খুরশিদ আলম গবেষণাপত্রের বরাত দিয়ে বলেন, আমরা পূর্বের এক গবেষণায় পেয়েছিলাম যে চাঁদাবাজির ৭৫% ভুক্তভোগীই অভিযোগ দায়ের করেন না। মাত্র ২৫% ভুক্তভোগী রিপোর্ট করেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, আমাদের মধ্যে সহনশীলতা ও ভীতি কাজ করে। তবে ব্যক্তির এই আচরণের কারণে সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েছে। চাঁদাবাজির মতো অপরাধের অভিযোগ দায়ের হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারতো।
প্রত্যেকটি নির্মাণাধীন সাইটে মনিটরিং কমিটি রাখতে পারলে এই সংকট নিরসন সম্ভব বলে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশিষ্টজনদের নিয়ে মনিটরিং ব্যবস্থা সক্রিয় করতে পারলে চাঁদাবাজদের রুখে দেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ পুলিশের একার পক্ষে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। সেক্ষেত্রে সাবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে পুলিশকে আরও স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমার অভিজ্ঞতায় একদিন এক থানায় দেখেছি, মোবাইল ছিনতাইকে চুরি হিসেবে অভিযোগ দায়ের করানো হচ্ছে। এমন আচরণ পরিবর্তন না হলে, মানুষ ভরসা ফিরিয়ে আনতে পারবে না এবং অভিযোগ দায়ের করাও কমে আসবে।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ক্রাইম) মো. মামুন অর রশিদ, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের আইন ও মানবাধিকার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সালেহ আকরাম, ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট জিয়া চৌধুরী, ডেইলি স্টারের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মোহাম্মদ জামিল খান, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও বিআইএসআর ট্রাস্টের উপদেষ্টা মো. নাজমুল হক।
এছাড়াও এই সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বিআইএসআর-এর গবেষকরাসহ এনজিও কর্মীরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।