আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণভবনের উদ্দেশে লংমার্চের আদলে রাজ্য সচিবালয় অভিমুখে ‘নবান্ন অভিযানের’ ডাক দিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার্থীরা।
চলতি মাসের ২৭ তারিখ ‘পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র সমাজ’ ব্যানারে ‘নবান্ন অভিযান’ করবেন। এতে থাকবে না কোনো দলীয় পতাকা। তাতে কোনো রুট বলা হয়নি। অর্থাৎ শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল আসতে পারে। আর এতেই প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। আর এই কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপির বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী।
কলকাতার আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরইমধ্যে তদন্ত ভার নিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।
গত দুই সপ্তাহের জনসাধারণ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলন করেছেন দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে। শুধু কলকাতা নয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো সংগঠনের তরফে চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ মিছিল।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) স্বাস্থ্য ভবন ঘেরাও কর্মসূচির পর একইদিন বিজেপির বাংলার থানা ঘেরাও কর্মসূচি নিয়েছিল। সেখানেও পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধ্বস্তি। এমন সময় ডাক এলো রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্ন ঘেরাও কর্মসূচির।
বিক্ষোভ দমনে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য। কোনোভাবে যদি জমায়েত থামানো যায়। কিন্তু তাতে সম্মতি দিল না আদালত। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ টন্ডন জানিয়ে দিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হতেই পারে। অর্থাৎ এই প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে কোনো আপত্তি করল না হাইকোর্ট।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার ছাত্র সমাজের মিছিলের অনুমতি দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানিয়েছিলেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে কোনোভাবেই আটকানো যাবে না, প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে আদালত এও বলেছিল, প্রয়োজনে রাজ্য সরকার অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে।
বিজেপি, সিপিএমের ছাত্র ও অন্যান্য শাখা সংগঠনের সদস্যরা প্রতিদিন কলকাতাসহ রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করছে। রাজনৈতিক দলের পতাকা ত্যাগ করে সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে সিপিএমের শাখা সংগঠনগুলো টানা মিছিলে কার্যত রাজ্যকে গণপ্রতিবাদের দিকে নিয়ে গেছে। সাধারণ মানুষও অংশ নিয়েছে এই প্রতিবাদে।
শেখ হাসিনা সরকার পতনে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় যেভাবে এক দফার ডাক দেওয়া হয়েছিলো তেমনই সিপিএম, বিজেপি, আইএসএফ এবং কংগ্রেস স্লোগান দিচ্ছে ‘দফা এক দাবি এক/ মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগ’। এই স্লোগান এখন পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসহ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। উদ্বুদ্ধ হয়েছে রাজ্যের একাংশের মানুষ।
কয়েক মাস আগে শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ষাট শতাংশের কাছাকাছি মানুষ তৃণমূলকে ভোট দেয়নি। বিশেষ করে শহর অঞ্চলের শিক্ষিত সচেতন মানুষের ভোট পায়নি তৃণমূল। সেই মানুষগুলোই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের পতন চেয়ে আন্দোলনে সামিল হচ্ছেন।
বুধবার দুপুরে আরজিকর মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এমনকি কলকাতার বিভিন্ন আইটি সংস্থায় কর্মরতরাও মিছিল করেন সল্টলেকে। জোব চার্নকের কলকাতার ইতিহাসে তার সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত এ ধরনের লাগাতার মিছিল বিক্ষোভ প্রতিবাদ গত ১৩ দিনে প্রথম ঘটেছে ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় আগেই দুই দফায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে দেখে অনেকেই সরকার ফেলার চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের সরকার জনগণের নির্বাচিত সরকার।’
পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, সব পরিবারের থেকে একজন করে নবান্ন অভিযানে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সেখানে যাবো। এটা কোনো দলের ডাক নয়। সকলেই বুঝতে পারছেন সব সমস্যার মাথা মুখ্যমন্ত্রী। তাকে বলবো, ২৬ তারিখের মধ্যে পদত্যাগসহ সব ব্যবস্থা নিয়ে রাখুন যাতে ২৭ তারিখ গুলি চালাতে না হয়।
ছাত্রদের ডাকা অরাজনৈতিক নবান্ন অভিযান ঘিরে নড়ে চড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে শাসক দল তৃণমূলও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।