আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নতুন বছরের শুরুতে নরেন্দ্র মোদি লাক্ষাদ্বীপ সফর করেন। ওই অঞ্চলের পর্যটনশিল্প নিয়ে প্রচার চালানোই ছিল তাঁর সফরের উদ্দেশ্য। মোদির লাক্ষাদ্বীপে যাওয়া নিয়ে এক ধরনের মজাই করেছেন দেশটির তিন মন্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোদিকে নিয়ে কটাক্ষ করে পোস্ট দেওয়ায় সম্প্রতি বরখাস্ত হতে হয় তাঁদের। বরখাস্ত হওয়া মালদ্বীপের তিন মন্ত্রী হলেন মারিয়াম শিউনা, মালশা ও হাসান জিহান। নতুন উত্তেজনার শুরু এখানেই।
নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ দিয়ে নতুন করে ভারত–মালদ্বীপ উত্তেজনা শুরু হলেও এর প্রারম্ভিকা রচিত হয়েছিল মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জুর নির্বাচনী প্রচারের সময়, যেখানে তিনি ভারতবিরোধী বার্তা দিয়েছিলেন। সেই বিতর্ক এখন এসে ঠেকেছে লাক্ষাদ্বীপে।
মালদ্বীপের উত্তরে অবস্থিত লাক্ষাদ্বীপ নিয়ে মোদির ভাবনা বোঝা গেছে নতুন বছরে তাঁর সফরের পরপরই। আরব সাগরের এই দ্বীপ এলাকাকে পর্যটনে আরও এগিয়ে নিতে চাইছেন তিনি। অন্তত মালদ্বীপে যেন আর না যেতে হয়!
Since the last 9 years we have worked to enhance Lakshadweep's progress and our resolve only got stronger! pic.twitter.com/hn0otKPuxC
— Narendra Modi (@narendramodi) January 4, 2024
মোদি ছবি ও ভিডিও শেয়ার করার পর ভারতীয়দের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়। তবে মালদ্বীপের সঙ্গে নতুন করে উত্তেজনা শুরুর পর সবাই যেন হুমড়ি খেয়ে পড়তে থাকেন দ্বীপটিতে। একদিনে প্রায় লাখোবার সার্চ দেওয়া হয়েছে এই দ্বীপের খোঁজে।
ভারতের সবচেয়ে বড় অনলাইন ট্রাভেল কোম্পানি মেকমাইট্রিপ জানিয়েছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে লাক্ষাদ্বীপে বুকিং বেড়েছে সাড়ে ৩০০০ শতাংশ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, লাক্ষাদ্বীপের দুটি দ্বীপে ২০২৬ সালের মধ্যে আধুনিক সুযোগ–সুবিধা সম্বলিত দুটি রিসোর্ট বানানোর ঘোষণা দিয়েছে টাটা। বাড়ানো হয়েছে ফ্লাইট।
তবে যত যাই করা হোক না কেন, মালদ্বীপের মতো এত দ্বীপের জায়গায় যে পরিমাণ পর্যটক যেতে পারবে, লাক্ষাদ্বীপে সেটি কখনোই সম্ভব নয়—এমনটাই বলছেন পর্যটনবিশারদেরা। এর প্রধান কারণ লাক্ষাদ্বীপের ছোট আকার ও এখানকার ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্র।
এখানকার স্থানীয়রা বলছেন, এখানে যে ট্যুরিজম চালু হবে তাতে তারা স্টেকহোল্ডার থাকতে চান। রাতারাতি পর্যটনস্পট হয়ে গেলে এখানকার মানুষেরা, যারা প্রধানত মাছ শিকার, নারিকেল চাষ করে খায়; তাদের জীবিকায় আঘাত আসবে।
মালদ্বীপে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে ভারত: চীনা সংবাদমাধ্যম মালদ্বীপে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে ভারত: চীনা সংবাদমাধ্যম
লাক্ষাদ্বীপের ৭০ হাজার বাসিন্দার প্রতিনিধিত্বকারী এমপি ভারতীয় ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির পিপি মোহাম্মেদ ফয়জাল বলেন, পরিবহন, আবাসন ও অবকাঠামো এখানে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে দ্বীপে থেকেছেন, এর নাম বাঙ্গারাম। এখানে থাকার জন্য মাত্র ৩৬টি রুম আছে।
Recently, I had the opportunity to be among the people of Lakshadweep. I am still in awe of the stunning beauty of its islands and the incredible warmth of its people. I had the opportunity to interact with people in Agatti, Bangaram and Kavaratti. I thank the people of the… pic.twitter.com/tYW5Cvgi8N
— Narendra Modi (@narendramodi) January 4, 2024
দিনে সৈকতে ঘুরে রাতে এসে থাকার জন্য বেশি জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রতিটা দ্বীপেই একই চিত্র। মালদ্বীপের সঙ্গে তুলনা করলে যা নেহায়েত কম বললে ভুল বলা হবে। তুলনাই চলে না। কেননা মালদ্বীপে শত শত জায়গার খোঁজ মিলবে। সেসব জায়গায় মিলবে আধুনিক সব সুযোগ–সুবিধাও। এর মধ্যে রয়েছে রিসোর্ট, হোটেল ও গেস্টহাউস।
মোহাম্মেদ ফয়জাল বলছেন, ‘সৈকত, পানির নিচের পরিবেশ ও পানিতে সময় কাটানোর মতো সব সুযোগ লাক্ষাদ্বীপ দিতে পারবে। এ দিক থেকে মালদ্বীপের বিকল্প হয়তো হতে পারে লাক্ষাদ্বীপ। কিন্তু অবকাঠামোগত দিক থেকে এখনো লাক্ষাদ্বীপ মালদ্বীপের চেয়ে অনেক পিছিয়ে।’
সমস্যা শুধু এই অবকাঠামোতে সীমাবদ্ধ নয়। এখানে আরও জটিল কিছু ইস্যু রয়েছে।
৩৬টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত ভারতের সবচেয়ে ছোট স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপের ৯৬ শতাংশ বাসিন্দা মুসলিম। এ কারণে এখানে প্রায়ই উত্তেজনা দেখা যায়। যেমনটি দেখা গিয়েছিল ২০২১ সালে। ওই সময় লাক্ষাদ্বীপের প্রশাসক হিসেবে বিজেপি নেতা প্রফুল প্যাটেলকে নিয়োগ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
প্যাটেল এসেই বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্ত নেন। স্কুলের খাবার মেনু থেকে মাংস বাদ দেন তিনি। এ ছাড়া প্রশাসনকে সব ক্ষমতা দেওয়ার আইনের খসড়াও করেন। এ নিয়ে মন্তব্য জানতে প্যাটেলের কার্যালয়, লাক্ষাদ্বীপের কালেক্টর এবং সেখানকার পর্যটন ও তথ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিবিসি। তবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এখানকার জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়েই সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে হবে।
ভারতীয় সমুদ্র বিশারদ রোহান আর্থার বলেন, লাক্ষাদ্বীপকে নিয়ে দীর্ঘ সময়ের পরিকল্পনা হাতে নিলে এখানকার প্রবাল, লেগুন ও সৈকত মাথায় রাখতে হবে। ঠিক রাখতে হবে এখানকার বাস্তুতন্ত্র।
আমরা ছোট বলে ধমক দেওয়ার লাইসেন্স আপনাদের নেই: মুইজ্জুআমরা ছোট বলে ধমক দেওয়ার লাইসেন্স আপনাদের নেই: মুইজ্জু
তবে সম্প্রতি ভারতের এই অংশে ভয়াবহ দাবদাহ অনুভূত হয়েছে বলে জানান রোহান। এল নিনোর প্রভাবে এমন দাবদাহ। আগামী বছরগুলোতে যা আরও ভয়াবহ হতে পারে।
বিশ্লেষকের বলছেন, লাক্ষাদ্বীপকে টেকসই পর্যটন এলাকা হিসেবে বানাতে চাইলে এখানে এমন অবকাঠামো নির্মাণ করা ঠিক হবে না, যাতে কার্বন নিঃসরণ বেড়ে যায়। এখানকার বাস্তুতন্ত্র ঠিক রেখে বাসিন্দানের অন্তর্ভুক্ত করেই সব প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া উচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।