মাওলানা নোমান বিল্লাহ : বাংলাদেশে কারও ওপর কোরবানি ওয়াজিব হোক আর না হোক যাদের সুযোগ হয় কোরবানি করে থাকেন। প্রত্যেকেই চান কোরবানির ঈদ যেন আনন্দময় হয়। তাই নিজের জমানো টাকা থেকে কোরবানি করে থাকেন।
ঠিক সেই জায়গা থেকে কেউ কেউ মৃত আত্মীয়স্বজনের নামেও কোরবানি দিতে চান। তখন প্রশ্ন আসে মৃত ব্যক্তির নামে কোরবানি করা যাবে কি না।
এখানে দুটি বিষয় লক্ষণীয়। এক. আল্লাহ তাআলার নামেই শুধু কোরবানি হয়। তাই বাকি সবার ক্ষেত্রে বলতে হবে ‘পক্ষ থেকে’। যেমন, এই কোরবানি আমার পক্ষ থেকে বা মো. মামুনের পক্ষ থেকে। দুই. মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি দেয়া শুদ্ধ। এর বিনিময়ে সওয়াব পাবেন মৃত ব্যক্তি।
কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার পক্ষ থেকে দান করলে যেমন সেই দানের সওয়াব পাবে তেমনই কোরবানি করলেও তার সওয়াব পৌঁছবে ইনশাআল্লাহ।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (রা.) এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসুল, আমার মা হঠাৎ ইন্তেকাল করেছেন। কোনো অসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয় তিনি কোনো কথা বলতে পারলে অসিয়ত করে যেতেন। আমি যদি এখন তার পক্ষ থেকে সদকা করি তাতে কি তার সওয়াব হবে? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। (বুখারি ১৩৩৮, মুসলিম ১০০৪)।
নিজের ওপর কোরবানি ওয়াজিব, প্রথমে তার পক্ষ থেকে দেয়ার নিয়ত করবে। এরপর মৃত ব্যক্তিকে সওয়াব পৌঁছানোর নিয়ত করবে। এতে করে এক কোরবানি দিয়ে নিজের কোরবানিও আদায় হবে, আবার মৃতকে সওয়াবও পৌঁছানো হবে। এটাই নিরাপদ ও উত্তম পদ্ধতি।
হজরত আয়েশা (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) কোরবানির ইচ্ছা করলে দু’টি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধূসর বর্ণের ও খাসিকৃত মেষ ক্রয় করতেন। অতঃপর এর একটি উম্মতের যারা আল্লাহর তাওহিদের ও তার নবুওয়ত প্রচারের সাক্ষ্য দেয়, তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মদ (সা.) ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন। (ইবনে মাজাহ ৩১২২)
তবে কতিপয় আলেমের মতে, মৃত ব্যক্তির অসিয়ত ছাড়া এমনিতেই তার নামে নফল কোরবানির নিয়তে কোরবানি দিলে কোরবানিদাতা ব্যক্তির নিজের ওয়াজিব কোরবানিটিও আদায় হয়ে যাবে। তবে প্রথম সুরতটিই অধিকতর নিরাপদ। (রদ্দুল মুহতার ৯/৪৮৪)
কোনো মৃত ব্যক্তির নামে দেয়া কোরবানির গোশত নিজেরাও খেতে পারবেন, আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবেন। তবে মৃত ব্যক্তি কোরবানি করার অছিয়ত করে থাকলে, সেই কোরবানি তার ত্যাজ্য সম্পদের তিন ভাগের এক ভাগ থেকে দেয়া ওয়াজিব এবং এর গোশত নিজেরা খেতে পারবেন না। গরিব-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে।
মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পদ না থাকলে, কোরবানি দেয়া ওয়াজিব নয়। নিজের সম্পদ থেকে দিলে তা নফল হিসেবে গণ্য হবে এবং সেটার গোশত নিজেরা খেতে পারবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।