প্রশ্ন: ফরজ, সুন্নত ও নফল নামাজে কি সিজদায় গিয়ে বাংলায় বা নিজ ভাষায় দোয়া করা যাবে?
উত্তর: ফরজ নামাজের সিজদায় গিয়ে তাসবিহ পড়া ছাড়া দীর্ঘ দোয়া প্রমাণিত নয়। নফল নামাজে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় গিয়ে দীর্ঘ দোয়া করেছেন।
হাদিসে সেই দোয়াগুলো বর্ণিত হয়েছে। আমাদের উচিত সেসব দোয়া মুখস্থ করে সিজদায় গিয়ে দোয়া করা।
নামাজের কিছু বৈশিষ্ট্য ও ভিন্নতা আছে। নামাজের বাইরে যা কিছু জায়েজ, নামাজের মধ্যে তার অনেক কিছুই নাজায়েজ। দোয়ার মধ্যে এমন কিছু বিষয় এসে যেতে পারে যেটা নামাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এজন্য নামাজের সিজদায় গিয়ে বাংলাতে দোয়া করার তুলনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো আরবি দোয়া করাই নিরাপদ।
মু‘আবিয়াহ ইবনুল হাকাম আস-সুলামী (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে সালাত আদায় করি। সালাতের অবস্থায় লোকজনের মধ্যকার এক ব্যক্তি হাঁচি দিলে জবাবে আমি ইয়ারহামুকাল্লাহ বলায় সবাই আমার প্রতি (রাগের) দৃষ্টিতে তাকালো। তখন আমি মনে মনে বললাম, তোমাদের মাতা তোমাদেরকে হারাক। তোমরা আমার দিকে এভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছো কেন?
মু’আবিয়াহ বলেন, সবাই রানের উপর সজোরে হাত মেরে শব্দ করতে থাকলে আমি বুঝতে পারি যে, তারা আমাকে চুপ করাতে চাইছে।
বর্ণনাকারী উসমানের বর্ণনায় রয়েছে: আমি যখন দেখলাম যে, তারা আমাকে চুপ করাতে চাচ্ছিলো, তখন (অনিচ্ছা সত্ত্বেও) আমি চুপ হলাম। অতঃপর রাসুলুল্ললাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত শেষ করলেন। আমার পিতা-মাতা তার জন্য কুরবান হোক ! তিনি আমাকে প্রহার করলেন না, রাগ করলেন না এবং গালিও দিলেন না।
তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: সালাতের অবস্থায় তাসবিহ, তাকবির ও কুরআন তিলাওয়াত ব্যতীত কোন কথা বলা মানুষের জন্য বৈধ নয়। অথবা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেরূপ বলার বললেন।
অতঃপর আমি রাসুলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললাম, হে আল্লাহ্র রাসুল! আমি সদ্য জাহিলিয়্যাত ছেড়ে আসা একটি সম্প্রদায়। আল্লাহ্ আমাদেরকে ইসলাম গ্রহণের তওফিক দিয়েছেন। আমাদের মধ্যেকার কতিপয় ব্যক্তি গণকের কাছে যায়। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তোমরা তাদের কাছে যাবে না।
বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, আমাদের মধ্যেকার কতিপয় লোক পাখি উড়িয়ে ভাগ্য নির্ণয় করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এটা তাদের মনগড়া কাজ, এরূপ (কুসংস্কার) যেন তাদেরকে তাদের কাজ থেকে বিরত না রাখে।
বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, আমাদের মধ্যেকার এমনও কিছু লোক আছে যারা রেখা টেনে ভাগ্য নির্ণয় করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: নাবীগণের মধ্যেকার একজন নবী রেখা টানতেন। সুতরাং কারো রেখা তার (নবীর) মত হলে সঠিক হতে পারে।
বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, আমার এক দাসী উহুদ ও জাওয়ানিয়ার আশেপাশে বকরী চরাচ্ছিলো। আমি দেখলাম, বাঘ এসে সেখান থেকে একটি বকরী নিয়ে গেছে। আমিও তো আদম সন্তান। কাজেই আমিও তাদের মত দুঃখ পাই। কিন্তু আমি তাকে জোরে একটি থাপ্পড় দিলাম।
এ কথাটি রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে গুরুত্ববহ মনে হওয়ায় আমি তাঁকে বললাম, আমি কি তাকে মুক্ত করে দিবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো। আমি তাকে নিয়ে আসলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন: আল্লাহ্ কোথায়? সে জবাবে বলল, আকাশে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি কে? সে জবাবে বলল, আপনি আল্লাহর রাসুল! তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- বললেন, তাকে মুক্ত করে দাও। কারণ সে ঈমানদার নারী।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৯৩০
উত্তর দিয়েছেন- মুফতি ইসহাক মাহমুদ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।