লাইফস্টাইল ডেস্ক : চলতি বছরসহ তিন বছরে ১৩ লাখ মানুষকে পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে (স্থায়ীভাবে বসবাসের ভিসা) কানাডায় নেয়া হবে। অভিবাসীদের দেশ কানাডায় প্রতিবছর গড়ে তিন থেকে চার লাখ মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এসে বসবাস করেন। কেউ আসেন সরাসরি পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ভিসা নিয়ে, কেউ শিক্ষার্থী হিসেবে পড়তে এসে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি নিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি নিয়ে এই দেশে থেকে যান। অনেকে নিজ দেশে বিভিন্ন সমস্যার কারণে রিফিউজি হিসেবে কানাডায় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। কেউ ভিজিট ভিসায় এসে চলে যান। আর অনেকে আসেন ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে। ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কয়েক বছর কাজ করার পর তারা নাগরিকত্ব লাভ করে।
উন্নত জীবনযাপন, চাকরি বা পড়াশুনার জন্য কানাডা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় দেশ। জীবন মানের বিবেচনায় কানাডা অবস্থান শীর্ষ তিনে। কানাডা বিশ্বের অভিবাসিদের এক নম্বর পছন্দনীয় দেশ হিসেবে এরই মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। আয়তনের তুলনায় দেশটিতে জনসংখ্যা কম এবং রাজনৈতিক বন্ধুত্বপূর্ণ সংস্কৃতির কারণে সেখানে বসবাসকারীরা নিরাপদ ও সুখী জীবনযাপন করেন। এজন্য পৃথিবীর বহু দেশ থেকে মানুষ কানাডা যাওয়ার চেষ্টা করে। দেশটিতে বর্তমানে ৩ কোটি ৮২ লাখ মানুষ বসবাস করে। যাদের মাথাপিছু আয় ৫২ হাজার ৮০ ডলার। দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) হচ্ছে প্রায় ২ হাজার বিলিয়ন ডলার।
উন্নত বিশ্বের দেশসহ অনেক বিদেশি মানুষ কানাডায় অভিবাসী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন পূরণে অনেক সময় অবৈধ উপায় অবলম্বন করে নানা হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হয়। তবে অবৈধ পথে না গিয়ে বৈধভাবে কানাডা যাওয়ার নানা উপায় রয়েছে। বৈধভাবে বাংলাদেশিদেরও কানাডা যাওয়ার বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে। কানাডা যাওয়ার সবচেয়ে সহজ এমন ১০টি উপায় নিচে দেয়া হলো।
এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রাম
নতুন অভিবাসীদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সব থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থায়ীভাবে কানাডায় বসবাসের জন্য একটি পথ হল হল এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রাম। এটি একটি সহজ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনি কানাডায় অভিবাসন ও কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারেন। প্রতি বছর হাজারো অভিবাসন প্রত্যাশীরা কানাডায় এক্সপ্রেস এন্ট্রির মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজের সুযোগ পাচ্ছেন।
এক্সপ্রেস এন্ট্রিতে আবেদন করার জন্য দুই ধাপের প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রথম ধাপ হল আপনার প্রোফাইল জমা দেওয়া। আর এর জন্য আপনার যে সব কাগজ পত্র প্রয়োজন সেগুলো হলো ইংরেজি ভাষা পরীক্ষার ফলাফল ( আইএলটিএস), শিক্ষাগত যোগ্যটার প্রশংসাপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন এবং পাসপোর্ট। এর পর মূল্যায়ন শেষে আপনি একটি আমন্ত্রণ পত্র পেয়ে যেতে পারেন। আমন্ত্রণপত্র পাবার পর আপনাকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এগুলো হচ্ছে রেফারেন্স লেটার, বিস্তারিত পরিচয়পত্র, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এবং মেডিকেল পরীক্ষার ফলাফল।
ফ্যামিলি ক্লাস স্পন্সরশিপ
কানাডার অভিবাসন নীতিমালায় একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে পরিবারের সদস্যের আমন্ত্রণে সেখানে যাওয়া যাকে বলে ফ্যামিলি রিইউনিফেকেশন। এর মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা স্থায়ীভাবে বসবাসের আমন্ত্রণ জানাতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারীকে কানাডার নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। যাকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে সে হতে হবে স্বামী বা স্ত্রী, ২২ বছরের কম বয়সী সন্তান। তবে বাবা-মা ও দাদা-দাদিকে সুপার ভিসা ক্যাটাগরির আওতায় কানাডায় নেয়া যায়।
আগামী এক বছরে ফ্যামিলি প্রোগ্রামের অধীনে নেয়া হবে ৮৮ হাজার ৫০০ জন। ফ্যামিলি প্রোগ্রামের মধ্যে স্পাউজ, পার্টনার ও চিলড্রেন প্রোগ্রামে ৬৮ হাজার জন, প্যারেন্টস ও গ্রান্ড প্যারেন্টস ২০ হাজার ৫০০ জন, রিফিউজি অ্যান্ড প্রোটেক্টেড পারসন প্রোগ্রামে ৪৫ হাজার ৬৩০ জন, হিউম্যানিটেরিয়ান প্রোগ্রামে চার হাজার ২৫০ জন।
এছাড়া কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সবচেয়ে সহজ ও নিশ্চিত উপায় হচ্ছে কোনো কানাডার নাগরিককে বিয়ে করা। তবে এক্ষেত্রে যদি কোনো ভুয়া বা অসততার আশ্রয় নেয়া হয় তাহকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। বিয়ে করে কানাডায় যেতে চাইলে তাকে অন্তত দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়। এই দুই বছর তাকে সরকারি কর্তৃপক্ষ পর্যবেক্ষণ করে।
ক্যানাডিয়ান ইনভেস্টর ইমিগ্রেশন
ক্যানাডিয়ান ইনভেস্টর ইমিগ্রেশন বা উদ্যোক্তা/ বিনিয়োগকারী ভিসা তারাই পেয়ে থাকে যাদের অনেক অর্থ-সম্পদ থাকে এবং যিনি কানাডায় বিনিয়োগ করতে সক্ষম এবং তার আন্তর্জাতিক ব্যবসা রয়েছে। তাহলে তাকে এমন ভিসা দেয়া হতে পারে। ফেডারেল ইনভেস্টর প্রোগ্রাম ও কুইবেক প্রোগ্রাম এই দুটোর মাধ্যমে আবেদন করা যায়। বিপুল সম্পদের মালিককে এই ভিসা দেয়া হয় পাঁচ বছরের জন্যে।
এলএমআইএ ওয়ার্ক ভিসা
অনেক অভিবাসন প্রত্যাশী ওয়ার্ক ভিসায় আবেদন করে কানাডায় চাকরির অফার নিয়ে যান। এই ক্ষেত্রে তাকে ‘লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট এসেসমেন্ট’(এলএমআইএ) এর আওতায় আবেদন জমা দিতে হবে। এটি অপেক্ষাকৃত কঠিন প্রক্রিয়া। তবে এর মাধ্যমে কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া সহজ হয়।
প্রভিন্সিয়াল নমিনি প্রোগ্রাম (পিএনপি)
কানাডায় অভিবাসী হওয়ার ক্ষেত্রে পিএনপি এখন জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কানাডার প্রদেশ যেমন আলবার্টা, অন্টারিও, ব্রিটিশ কলাম্বিয়াসহ অন্যান্য প্রদেশের নিজস্ব অভিবাসন নীতিমালা রয়েছে। ফেডারেল নীতিমালার চেয়ে এই পদ্ধতিতে অনেক দ্রুত অভিবাসী হওয়া যায়। তবে এ ক্ষেত্রে কানাডায় যাওয়ার পর তাকে ওই নির্দিষ্ট প্রদেশেই বসবাস করতে হবে।
আইইসি
১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী যুবকরা ‘ইন্টারন্যাশনাল এক্সপেরিয়েন্স কানাডা’ (আইইসি) এর আওতায় চাকুরির অফার লেটার ছাড়াই কানাডা যেতে পারে। তবে এই সুবিধা যেকোনো দেশের নাগরিকের জন্য নয়। কানাডায় দক্ষ কর্মী নেয়ার জন্য বিশেষ ভিসার সুবিধা চালু রয়েছে। ৩৪৭টি পেশায় এই জনবল নিয়ে থাকে কানাডা। এর মধ্যে রয়েছে, হেয়ার স্টাইলিস্ট (নরসুন্দর), বিক্রয় কর্মী এবং প্রশাসনিক সহকারী।
স্ট্যাডি ভিসা
কানাডা যাওয়া আরেকটি সহজ প্রক্রিয়া ‘স্ট্যাডি ভিসা’। তবে এজন্য আপনাকে কানাডার কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রক্রিয়া আগেই সেরে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি সেখানে চাকুরি করতে পারবেন শুধুমাত্র যে স্টেটে আপনি পড়ালেখা করছেন সেই স্টেটে। এই সুযোগ পৃথিবীর সব দেশের জন্য রয়েছে।
ভ্রমণ ভিসা
ভ্রমণ ভিসায় কানাডা যাওয়া সহজ। তবে ভিসা পাওয়া একটু কঠিন। ছুটি কাটাতে বা ভ্রমণ করতে যারা কানাডা যেতে চান তাদের ভিসা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ভিসা প্রার্থীর কাছে জিজ্ঞেস করা কেন যেতে চান। দূতাবাসের যে কর্মকর্তা আপনার সাক্ষাৎকার নেবেন তার কাছে যদি মনে হয় ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও আপনার না ফেরার আশঙ্কা রয়েছে তাহলে আপনাকে ভিসা দেয়া হবে না।
ইকোনমিক প্রোগ্রাম
কানাডা সরকার আগামী এক বছরে ইকোনমিক প্রোগ্রাম মোট ১ লাখ ৯১ হাজার ৬০০ অভিবাসী নেবে। ইকোনমিক প্রোগ্রামের মধ্যে রয়েছে, ফেডারেল হাই স্কিলড প্রোগ্রামে ৮১,৪০০ জন, আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রামে ২,০০০ জন, ফেয়ার গিভার প্রোগ্রামে ১৪,০০০ জন, ফেডারেল বিজনেস প্রোগ্রামে ৭০০ জন, প্রভিন্সিয়াল নমিনি প্রোগ্রামে ৬১,০০০ জন ও কুইবেক স্কিলড ওয়ার্কার অ্যান্ড বিজনেস প্রোগ্রামে ৩২,৫০০ জন।
ব্যবসা
আপনার যদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকে এবং আপনি কানাডায় ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে কানাডা যাওয়া আপনার জন্য সহজ। তবে নিজে কানাডায় ব্যবসা করতে না চাইলে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কানাডার কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চুক্তি থাকলেও আপনি কানাডা যেতে পারবেন। এই প্রক্রিয়ার ভিসাকে নাফটা ভিসা বলা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।