জুমবাংলা ডেস্ক : ফেনীর সোনাগাজীতে শুষ্ক মৌসুমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে খালে পানি ধরে রাখার জন্য সম্প্রতি খাল খনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। খাল খনন করে মাটিগুলো খালপাড় ও আশপাশের জমিতে রেখে দেয়। গত কয়েক দিন ধরে একদল দুর্বৃত্ত খালপাড়ে লাল পতাকা টাঙিয়ে উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়নের ‘সোনাগাজী ডাঙি’ খালের তিন কিলোমিটার এলাকার মাটি লুটে নিচেছ।
এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা জেলা প্রশাসক, ইউএনও, পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী এবং জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে গত শুক্র ও শনিবার মাটিগুলো রক্ষার অনুরোধ করেন। তবে ইতিমধ্যে প্রভাবশালী দুর্বৃত্তরা রাতের আধাঁরে শত শত ট্রাক মাটি লুট করে নিয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ‘সোনাগাজী ডাঙি’ খালের পূর্বাংশ এস্কেভেটর দিয়ে খনন করে খালের পাড়েই খননকৃত মাটিগুলো স্তুপ করে রাখায় হয়। হঠাৎ করে গত দুদিন ধরে রাতের বেলায় চর চান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল লোক খালের মাঝখানে বাঁধ দিয়ে এস্কেভেটর দিয়ে খালের পাড়ের মাটিগুলো লুটের প্রস্তুতি নেয়।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাতে মাটিগুলো লুটের জন্য এলাকার লোকজনকে ভয়ভীতি দেখাতে একদল সন্ত্রাসী মহড়া দেয়। এতে গ্রামবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। দু’দফা পুলিশের জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন দিলে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীদের ভয়ে উদ্বিগ্ন গ্রামবাসী নিরুপায় হয়ে শুক্রবার ও শনিবার রাতে জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসানকেও বিষয়টি মোবাইলে অবগত করেন।
সোনাগাজী ডাঙি খালের উপকণ্ঠের চর চান্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুর নবী, সাইদুল হক, নুরুল আমিন, গবী আলম, মাঈন উদ্দিন, আলমগীর হোসেন, শাহাব উদ্দিন, শাহ জাহান, ফুলওয়ারা বেগম, ফাতেমা বেগম, সুইটি আক্তার, বিউটি আক্তার ও নুরুল ইসলামসহ স্থানীয় অন্তত ২০ জন লোক এসব অভিযোগ করেছেন।
নুর নবী বলেন, সম্প্রতি পাউবোর পক্ষ থেকে খালটি খনন করা হয়। খালটি খননের ফলে বিপু্ল পরিমাণ গাছগাছালির ক্ষতি হয়েছে। এরপরও খালের পাড়ে রাখা মাটিগুলো লুটে অন্যত্র বিক্রি করে দিলে জমির মালিকরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তদুপরি তাদের ফসলি জমি, পুকুর পাড় ও বসতবাড়ির ভিটিগুলো ভেঙে খালে পড়ে যাবে।
সাইদুল হক বলেন, প্রশাসনসহ সর্বমহলে অভিযোগ করার পরও মাটি দস্যুদের রেখে যাওয়া এস্কেভেটর ওই স্থান থেকে সরানো হয়নি। মাটি নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি।
এ ব্যাপারে চর চান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, আমি মাটি লুটের সাথে জড়িত নই। যারা অভিযোগ করেছেন তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। আমি কোন মাটি কারবারের সঙ্গে জড়িত নই।
জানতে চাইলে ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, খননকৃত মাটি অন্যত্র বিক্রির সুযোগ নাই। যদি মাটি বিক্রি করতে হয় পাউবো কর্তৃপক্ষ বিধি মোতাবেক নিলামে বিক্রি করতে পারবে। একটি সিন্ডিকেটের মাটি লুটের পাঁয়তারার বিষয়টি গ্রামবাসীর কাছ থেকে শুনেছি। আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, ব্যক্তিগতভাবে কেউ খালের মাটি লুটের সুযোগ নাই। পানি উন্নয়ন বোর্ড খালের মাটি নিলামে দিতে পারবে। এছাড়া সরকারের কোনো উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করতে পারেবেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার বলেন , ‘সোনাগাজী ডাঙি’ খালের মাটি আশ্রায়ন প্রকল্পের জন্য স্থানীয় চেয়্যারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুপারিশ নিয়ে একটি আবেদন করেছেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের অনুমতি সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।