কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী খায়রুল ইসলাম। সোমবার (২৫ আগস্ট) আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তার আফ্রিদিকে সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হকের আদালতে তোলা হয়।
এর আগে, রোববার রাতে বরিশাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি পুলিশ। গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলার আসামি তিনি।
শুনানিতে আদালতকে তার আইনজীবী খায়রুল ইসলাম জানান, মামলার ঘটনার সঙ্গে আসামির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বাদীর অভিযোগ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পুলিশের নির্বিচার গুলিতে ভিকটিম নিহত হন। এখানে আসামির কোনো ভূমিকা নেই। গত বছরের ১১ নভেম্বর এ মামলার বাদী এভিডেভিড দিয়ে বলছে তথ্যগত ভুলের কারণে তার নাম যোগ হয়েছে। তাকে এ মামলায় খালাস দিলে বাদীর কোনো বাধা নেই। এ কারণে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই।
শুনানিতে এই আইনজীবী আরও জানান, আফ্রিদি কিডনি জটিলতায় ভুগছেন, তার চিকিৎসা চলমান। অতিরিক্ত হাঁটাচলায় তার প্রস্রাবে ব্লাড আসে। এ ছাড়া তার ওয়াইফ (স্ত্রী) প্রেগনেন্ট। মানবিক বিবেচনায় তার জামিন মঞ্জুর করা হোক।
বাদীর আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল, ঢাকা মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন, ঢাকা বারের সিনিয়র সহসাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান মুকুল রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।
শুনানিতে বাদীপক্ষ বলেন, এই আসামি মামলায় এজাহারভুক্ত। তাকে মিডিয়া সন্ত্রাসী দাবি করে বলেন, এই আসামি লাইভে এসে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের ওপর নারকীয় হত্যাকাণ্ড করতে উৎসাহিত করেন। তাকে রিমান্ডে নিলে জানা যাবে, কারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত, কার কী নির্দেশনা ছিল। কারা অর্থদাতা ও অস্ত্রদাতা। এই আসামি ডিবির হারুনের সঙ্গে একাধিক লাইভ করেছেন।
পরে আসামি পক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন আফ্রিদি। আন্দোলনের সময় ছাত্রদের পক্ষে তার একাধিক পোস্ট আছে। এসময় এজলাসে ফের হট্টগোল শুরু হয়। আসামি পক্ষের আইনজীবী খালেদা জিয়ার সঙ্গে আফ্রিদির বাবা নাসির উদ্দিন সাথীর ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘আসামির আলাদা রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই। তার বাবা ব্যবসায়ী। কোনো রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি নেই। আফ্রিদির কিডনিতে জটিলতা আছে জানিয়ে তাকে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের কাছে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা চাওয়া হয়। এরপর আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
শুনানির পর আদালত থেকে বেরিয়ে তৌহিদ আফ্রিদির আইনজীবী খায়রুল ইসলাম বলেন, আমরা বিজ্ঞ আদালতে বলেছি যে, তৌহিদ আফ্রিদি একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। শারীরিকভাবে সে অসুস্থ। সে লিভার এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে সুস্পষ্ট আছে, যদি কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হয়, মহিলা হয়, প্রতিবন্ধী হয় তাহলে তার রিমান্ড দেওয়া যাবে না। তার অসুস্থতার সমস্ত কাগজপত্র আমরা বিজ্ঞ আদালতে দিয়েছি।
শুনানি শেষে এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে আফ্রিদিকে পেটে হাত দিয়ে খুড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায়। হাজতখানার সামনে দেখা যায় তার পা খালি। ভিড়ে জুতা খুইয়েছেন তিনি।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানাধীন পাকা রাস্তার ওপর আন্দোলনে অংশ নেন মো. আসাদুল হক বাবু। ঘটনার দিন দুপুর আড়াইটায় আসামিদের ছোঁড়া গুলি আসাদুলের বুকে ও ডান পাশে লাগে। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় নাসির উদ্দিন ২২ নম্বর ও তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদি ১১ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।