আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল : মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম ঘেঁষেই রয়েছে একটি রোড। যেখানে আলো আঁধারের খেলায় জমে ওঠে তরুণ তরুণীদের আড্ডা। দিনে দিনে রোডটি পরিচিত হয়ে উঠেছে লাভ রোড হিসেবে। রোজ সন্ধ্যা নামলেই আড্ডাবাজদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। এই আড্ডায় যারা আসেন তাদের একটা বড় অংশই প্রেমিক প্রেমিকা। তবে তাদের পাশাপাশি বন্ধু, পরিবার পরিজন নিয়েও অনেকেই আড্ডা দিতে আসেন এখানে। সন্ধ্যার অন্ধকারে সড়ক বাতির আলোতে গাছের ছায়া কিংবা ল্যাম্প পোস্টের নিচে সারি সারি দোকান। সেই সাথে এসব দোকানে বাজতে থাকা গান সব মিলিয়ে সন্ধ্যা নামলে আড্ডায় সতেজ হয়ে ওঠে প্রাণ।
সময়ে সময়ে নানা নাম ছিল এই রোডের। কখনো নাম ছিল স্টেডিয়ামমুখী রোড, কারও কারও কাছে মিরপুর কলেজের রাস্তা তো আবার অন্য কারও কাছে চম্পা-পারুল স্কুল ঘেঁষা রোড। তবে সব নাম হারিয়ে গিয়েছে লাভ রোডের কাছে। দোকানের সাইনবোর্ড কিংবা মানুষের মুখে মুখে লাভ রোডের পরিচয় সর্বত্র।
এক সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায় একদল তরুণ আড্ডা দিচ্ছে। তাদের মধ্যে সন্ধ্যার অন্ধকারে চায়ের কাপ হাতে জমে উঠেছে তর্ক। তর্কের যদিও নির্দিষ্ট কোনো বিষয় থাকে না। একটা ইস্যুতে শুরু হওয়ার পর তা কোথায় যে চলে যায় তা নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই। এই রোডেই দেখা হয় মেহেদী মারিয়ে দম্পতির সঙ্গে। সদ্য বিবাহিত এই দম্পতি মাত্রই শেষ করেছেন পড়াশোনা। সরকারি চাকরীর প্রস্তুতি নিতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন সনি সিনেমা হল সংলগ্ন এলাকায়। মারিয়ে বলেন, প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যার পর এখানে আসি। কখনো বন্ধুরাসহ, আবার এমন অনেকদিন আছে যখন কেবল আমরা দুজন আসি। একা কিংবা দলবদ্ধ যেভাবেই আসেন না কেন আড্ডার সঙ্গীর অভাব হয় না পাশ থেকে বলছিলেন মেহেদী। তিনি বলেন, এই আড্ডার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আড্ডার একটা দারুণ মিল আছে। এখানে যারা আসে তাদের বেশীরভাগই সম বয়সী। যেন মিনি ক্যাম্পাস।
অবশ্য মেহেদীর কথার সত্যতাও মেলে। একটু দূরেই দেখা যায় ৪-৫ জন তরুণ তরুণী মিলে গান গাচ্ছেন। মাঝখানে বসে একজন গান গাচ্ছেন, বাকি সবাই সুরে বেসুরে তাল মেলাচ্ছেন। এরকম অনেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন এখানে। তাদের আড্ডায় প্রাণ জোগাচ্ছে আশেপাশে থাকা ফুডকোর্ট। ফুচকা-চটপটি থেকে পিৎজা-স্যান্ডউইচ, লাচ্ছি-শরবত থেকে চা-কফি সবই মেলে এসব ফুডকোর্টে। কেউ চাইলে ভারি কিছুও খেতে পারেন। কাবাব, গ্রিল ও বার্গার মেলে এই সড়কে।
পছন্দের মানুষকে নিয়ে মিরপুর ১০ থেকে এসেছেন মোস্তারিনা জেরীন মুভি। তিনি বলেন, দিনে দিনে এই সড়কে মানুষের আনাগোনা বাড়ছে। দেখুন যখন কেউ রেস্টুরেন্টে আড্ডা দিতে যায়, তখন খাবার খাওয়ার পাশাপাশি চিল্লানো যায় না। গলা ছেড়ে গান গাওয়ার সুযোগ ও নেই। কিন্তু এসব সীমাবদ্ধতা এই রোডে আগতদের পোহাতে হয় না। এখানে খাওয়ার সঙ্গে আড্ডা দুটোই মেলে। সময় নিয়ে তাড়াহুড়োও নেই। পাশাপাশি রেস্টুরেন্ট থেকে খাবারের দামও কম।
প্রেম ও আড্ডার জন্য এটা একটা উত্তম জায়গা বলে মনে করেন সাকিব। তিনি বলেন, এই শহরে আড্ডা দেওয়ার মতো জায়গা নেই। মন খুলে কথা বলার জন্য প্রত্যেক এলাকায় এরকম জায়গা গড়ে ওঠা দরকার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।