বিনোদন ডেস্ক : বক্স অফিসে তাঁর ছবি নিয়ে তেমন একটা হইচই হয় না বটে। তবে পায়েল রোহতগিকে নিয়ে শোরগোল কম নয়। হবে না-ই বা কেন? হামেশাই যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি! নিন্দকেরা অবশ্য বলেন, খবরে থাকার জন্যই এ সব বিতর্ক তৈরি করেন পায়েল। তবে তাঁদের কথায় পায়েল যে বিশেষ গুরুত্ব দেন, তেমন প্রমাণ মেলেনি। আরও এক বার বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন পায়েল। এ বার কঙ্গনা রানাউতের শোয়ে।
২০০২ সালে নায়িকা হিসাবে দেখা গিয়েছিল ‘ইয়ে ক্যায়া হো রাহা হ্যায়?’ তবে এখনও পর্যন্ত নায়িকা হিসাবে জায়গা পোক্ত করে উঠতে পারেননি। কিন্তু তাতে দমিয়ে রাখা যায়নি পায়েলকে। রাজনীতি হোক বা সামাজিক প্রেক্ষাপট, বলিউডি পার্টি অথবা খ্যাতনামী ব্যক্তিত্বের জন্মপরিচয়— সবেতেই নিজস্ব মতামত জাহির করেছেন পায়েল। তা-ও আবার প্রকাশ্যে। তাতেই বার বার উঠে এসেছেন শিরোনামে।
এতটা ‘খুল্লামখুল্লা’ কথাবার্তার জন্য কম বিপাকে পড়েননি পায়েল। কখনও তাঁর নামে থানায় নালিশ জমা পড়েছে। কখনও বা নেটমাধ্যম ব্যবহারে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে তাতেও দমানো যায়নি তাঁকে। বেফাঁস মন্তব্য করা বন্ধ করেননি এই প্রাক্তন মডেল।
তিন তালাক, কেরলের বন্যা থেকে শুরু করে সলমন খানের রিয়েলিটি শো ‘বিগ বস্’ অথবা জওহরলাল নেহরুর জন্মপরিচয়— সব কিছু নিয়েই নিজস্ব মতামত রয়েছে পায়েলের। এমন নয় যে বলিউডি জগতের লোকজনদের নিজস্ব মতামত জানানোয় বাধা রয়েছে। তবে পায়েল যখনই মুখ খুলেছেন, প্রায় সব সময়ই তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
নেটমাধ্যমে বহু বার রোষের মুখে পড়েছেন পায়েল। টুইটারে ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালের হায়দরাবাদ গণধর্ষণ-কাণ্ডকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে সপ্তাহখানেকের জন্য টুইটার ব্যবহার রুখে দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এক বার তো সলমন খানের রিয়েলিটি শো ‘বিগ বস্’ নিয়ে পায়েল মন্তব্য করেছিলেন, আমিশা পটেল, কোয়েনা মিত্র, রেশমি দেশাই এবং সিদ্ধার্থ শুক্লের মতো বেকার লোকজনই ওই শোয়ের প্রতিযোগী হয়েছেন। এমনকি, সে সময় তাঁর নিজের হাতের বিশেষ কাজ ছিল না বলেই ওই শোয়ে এসেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই তা নিয়ে কম শোরগোল হয়নি।
‘বিগ বস্’ নিয়ে বিতর্কের আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে কেরলের বন্যা নিয়েও নিজস্ব মতামত ছিল তাঁর। ঈশ্বরের রোষে পড়েই নাকি কেরলে বন্যা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। গো-হত্যা কেন বন্ধ করেনি কেরল সরকার? সে কারণেই নাকি ঈশ্বরের রোষে বন্যা হয়েছে কেরলে। পায়েলের এ হেন মন্তব্য যে সংবেদনশীল নয়, তা জানিয়ে দিয়েছিলেন টুইটার ব্যবহারকারীরা।
জওহরলাল নেহরু নাকি মোতিলাল নেহরুর বৈধ সন্তান নন! ২০১৯ সালে ফেসবুকে এমনই দাবি ছিল পায়েলের। তাঁর আরও দাবি, কমলা নেহরুর পরকীয়া সম্পর্কের জেরে জন্ম হয় জওহরলালের। এমনকি, মোতিলালের পাঁচ স্ত্রী ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন পায়েল।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে এমন মন্তব্যে কম হ্যাপা সামলাতে হয়নি পায়েলকে। যুব কংগ্রেসের এক নেতা পায়েলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করে বসেন। পরে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢ়রা এবং সনিয়া গাঁধীর কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল পায়েলকে। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর পায়েলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পর ন’দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। যদিও ১৭ ডিসেম্বর জামিনে ছাড়া পান পায়েল।
এ হেন বিপত্তিতে বার বার পড়েছেন পায়েল। তবে সতর্ক হননি তিনি। নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল নিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে কটূ মন্তব্য করে টুইট করার অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের জুনে পায়েলকে এক সপ্তাহের জন্য সাসপেন্ড করে টুইটার।
এ বার অবশ্য অন্য কারও সম্পর্কে নয়। নিজের সম্পর্কেই একটি ‘গোপন’ কথা ফাঁস করেছেন পায়েল। কঙ্গনা রানাউতের শো ‘লকআপ’-এ গিয়ে বলেছেন, কেরিয়ারে জোয়ার আনতে বশীকরণ করার চেষ্টা করেছেন তিনি। কার বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ পায়েলের?
সেই ব্যক্তির নাম অবশ্য প্রকাশ্যে আনেননি পায়েল। তবে তিনি বলেছেন, ‘‘এই ইন্ডাস্ট্রিতে ১৫ বছর কাটিয়ে ফেললাম। এক সময় ছিল আমার কেরিয়ার ভাল এগোচ্ছিল না। সে সময় আমি তন্ত্রমন্ত্র, পুজোআচ্চার সাহায্যে কেরিয়ারে এগোতে চেয়েছিলাম।’’
এমন কাজ যে কোনও তথাকথিত শিক্ষিত ব্যক্তির হতে পারে না, তা-ও স্বীকার করেছেন পায়েল। তবে তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি না কোনও শিক্ষিত মহিলা বা পেশাদার কেরিয়ারের সফল হতে গিয়ে এমন তন্ত্রমন্ত্র করবেন। যদিও বা করেন, তা গোপনই রাখবেন। তবে আমি বশীকরণ করার চেষ্টা করেছিলাম।’’
পায়েলের স্বীকারোক্তি, ‘‘দিল্লির এক পূজারী বলেছিলেন যে যাঁকে বশে আনতে চাই, তাঁর কথা চিন্তা করতে। অথবা তাঁর কোনও জিনিস এনে দিতে। আমি তেমন অনেক কিছুই করেছিলাম। এই ভয়ও ছিল যে আমার মা বা অন্যদের এ কথা জানালে লোকজন আমাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করবেন। ফলে এ কথা গোপন রেখেছিলাম।’’
তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক যে তিনি বশীকরণ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতে কেরিয়ারে কি উন্নতি হয়েছিল পায়েলের? এমনকি, তাঁর হবু জীবনসঙ্গী সংগ্রাম সিংহকে কি বশে আনতে চেয়েছিলেন? কঙ্গনার এ প্রশ্নের উত্তরে পায়েলের সাফ জবাব, ‘‘লোকজন যা ভাবার ভাবুন। আমি সংগ্রামের উপরে বশীকরণ বিদ্যা প্রয়োগ করিনি।’’ আর কেরিয়ার? পায়েল অবশ্য সরাসরি তা নিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।