জুমবাংলা ডেস্ক : শীত হলো পিঠাপুলির কাল। বাড়িতে তো বটেই, রাস্তার মোড়ে, রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায় পিঠা। খুব সম্ভবত যে পিঠা নিয়ে অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে, সেটি ভাপা পিঠা। চালের গুঁড়ার সঙ্গে গুড়, নারকেল, লবণ, আদা—কত কিছু মিশিয়েই না ভাপা পিঠা তৈরি হয় আমাদের দেশে। কিন্তু গাজর ভাপা? এবার তারও দেখা পাওয়া গেল যশোরে।
যশোর শহরের খড়কি শাহ্ আবদুল করিম রোডে আছে ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান আইডিয়া পিঠা পার্ক। পিঠা নিয়েই তাদের কাজকর্ম। যেকোনো ঋতুতে এখানে মিলবে বিভিন্ন স্বাদের পিঠা। প্রতিষ্ঠানটিতে থরে থরে সাজানো বাহারি পিঠার সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে গাজর ভাপা পিঠা।
সাধারণত মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে ভাপা পিঠা। নানা অসুস্থতায় যাঁরা গুড়-নারকেলের মিশ্রণে তৈরি এই পিঠার স্বাদ নিতে পারেন না, তাঁদের জন্য গাজরের ভাপা পিঠা বানিয়েছে পিঠা পার্ক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, একটু ঝাল স্বাদের স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন এই পিঠা সব বয়সীরাই খেতে পারবেন। সংগঠনটির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ পিঠা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ প্রায় এক বছরের গবেষণায় এ পিঠা তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি গত এক বছরে দেশীয় পিঠার সম্ভারে যোগ করেছে নতুন ৩০টি পিঠা। এর আগে করোনাকালে প্রতিষ্ঠানটি ডুমুর, কালিজিরা, আদা, অলিভ অয়েল, মুরগির মাংসসহ ১২টি ঔষধি মসলার সমন্বয়ে বানিয়েছিল ‘ইমিউনিটি পিঠা’।
আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা যশোর সরকারি এম এম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, ‘এই পিঠার চাহিদা তৈরিই ছিল মানুষের কাছে। মানুষ খুঁজছিল গুড়ের মিষ্টির ভাপা পিঠার বিকল্প নতুন কিছু। ফলে আমরা পিঠাটি নিয়ে সাড়া পাচ্ছি।’
পিঠা পার্কের সাত উদ্যোক্তার একজন তানজিয়া জাহান মমতাজ। তিনি বলেন, ‘পিঠা পার্কে বাংলাদেশ পিঠা গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে। তারা প্রতিবছর নতুন পিঠা উদ্ভাবন করে থাকে। গাজর ভাপা সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। ডায়াবেটিসের রোগীদের মিষ্টি খাওয়া লিখিতভাবে নিষিদ্ধ। তাঁরা শীতে গরম ভাপা পিঠা খেতে পারেন না। তাঁদের জন্য এই পিঠা খুবই উপকারী। কেননা এই পিঠায় একটু ঝাল, লবণ ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ গাজর মেশানো থাকে।’
এ বিষয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. শিরীন নিগার বলেন, ‘গাজর দিয়ে বানানো ভাপা পিঠা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। গাজরে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন থাকে। তা ছাড়া গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এতে ত্বক মসৃণ হয় এবং চোখে জ্যোতি বাড়ে। ফলে এই পিঠা সব বয়সী মানুষের জন্য উপকারী।’
দেশীয় ঐতিহ্যের পিঠার সম্ভার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে অন্য রকম এক সংগ্রামে নামে আইডিয়া পিঠা পার্ক। এটি মূলত শিক্ষার্থীদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি উদ্যোগ এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১০১ রকম পিঠা দিয়ে। এখন সেখানে ১৩০ রকমের ঝাল-মিষ্টি পিঠা পাওয়া যায়। সংগঠনটিতে কাজ করা শতাধিক স্বেচ্ছাসেবীর সবাই কলেজ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁদের তৈরি আইডিয়া পিঠা পার্কের পণ্য এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।