জুমবাংলা ডেস্ক : চীনের ঋণ সহায়তায় নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের গ্রস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় ইতোমধ্যে ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হয়েছে। প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই টানেল দিয়ে যান চলাচল উন্মুক্ত রয়েছে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে। তবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের একমাত্র এই টানেল দিয়ে দৈনিক যে পরিমাণ গাড়ি পারাপার হয় তা দিয়ে তুলে আনা যাচ্ছে না রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়ও।
৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের টানেলটি নির্মাণের আগে করা সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছিল, বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর প্রথম বছরে প্রতিদিন গড়ে ১৭ হাজারের বেশি যানবাহন চলবে। যদিও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, যান চলাচল উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে টানেল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার ৮২টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। যারমধ্যে একটি অংশ ট্যুরিস্টদের গাড়ি। টানেল নির্মাণের পর অনেকে গাড়ি নিয়ে এটি ঘুরে আসছেন। যা কমে গেলে দৈনিক যানবাহন পারাপারের সংখ্যা আরও কমে আসবে।
অন্যদিকে সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু টানেল থেকে টোল বাবদ দৈনিক গড়ে ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। যেখানে টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক কাজে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এর মধ্যে একটি অংশ ব্যয় হয় টানেলে কৃত্রিম অক্সিজেন ও আলো সরবরাহ ছাড়াও সামগ্রিক নিরাপত্তা ও জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থায়।
চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে গড়ে তোলা ছিল বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের অন্যতম উদ্দেশ্য। তবে বাইসাইকেল, সিএনজি ও মোটরসাইকেলের মতো যানবাহনগুলো টানেল দিয়ে পারাপার হতে দেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে এখনো তেমন কোনো শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। এতে যান চলাচলও বাড়ছে না। এছাড়াও পরিকল্পনাধীন পতেঙ্গা টার্মিনালের পাশাপাশি বে টার্মিনাল ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল এখনো হয়নি। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, এসব অবকাঠামো যতদিন হবে না, ততদিন এ প্রকল্প থেকে কোনো সুফল পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক ‘টানেল নির্মাণ কতটা দূরদর্শী সিদ্ধান্ত’ এই শিরোনামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। যেখানে অদূরদর্শী পরিকল্পনা ও টানেলটির নানা দুর্বলতা তুলে ধরেছেন তিনি। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, কর্ণফুলী টানেলের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে শাহ আমানত সেতু। এই সেতুর তুলনায় কর্ণফুলী টানেলের টোল হার যানবাহন ভেদে আড়াই থেকে ছয় গুণ পর্যন্ত বেশি। ফলে এটি যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
বুয়েটের এই অধ্যাপক জানিয়েছেন, টানেল নির্মাণের আগে চালানো সমীক্ষায় যানবাহন চলাচলের যে ধারণা দেয়া হয়েছিল তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমান সময়ে এটি একটি ফরমায়েশি প্রকল্প হিসেবে মনে হচ্ছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, সহসাই এই টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে না, এটা সহজে অনুমান করা যায়।
অন্যদিকে উচ্চতার মানদণ্ডেও টানেল দিয়ে ভারী কার্গোর মতো যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যানবাহন চলাচলের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) অনুমোদিত হেড রুম ৫ দশমিক ৫ মিটার। সড়কের ওপর কোনো ফ্লাইওভার বা সমজাতীয় অবকাঠামোর ক্ষেত্রে নির্বিঘ্নে যানবাহন পারাপারেও এ মানদণ্ড বজায় রাখা হয়। অথচ কর্ণফুলী টানেলে হেডরুম রাখা হয়েছে ৪ দশমিক ৯ মিটার। ফলে উচ্চতা কম হওয়ায় টানেল দিয়ে ভারী কার্গোর মতো যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, টানেল দিয়ে দৈনিক যানবাহন পারাপারের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে নিরাপত্তাজনিত কারণ ছাড়াও দাহ্য পদার্থসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ। যদিও এ ক্ষেত্রে টানেলের বদলে ধনুকাকৃতির (আর্চ) লম্বা স্প্যান, সাসপেনশন ও কেবল দিয়ে ঝুলন্ত সেতু তৈরি করে কম খরচেই পরিবেশবান্ধব ও টেকসই একটি অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব ছিল বলেও মত তাদের।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামানের মতে, চট্টগ্রামের মিরসরাই ও মাতারবাড়ীর মতো অর্থনৈতিক করিডরগুলো মাথায় রেখে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মিত হয়েছে। সঠিক সময়ে এসব চালু করা সম্ভব না হলে বড় ধরনের এ বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সূত্র: সমকাল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।