মোঃ সোহাগ হাওলাদার : আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহের চেষ্টার জেরে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ‘চুরির’ মামলা করেছেন আওয়ামী লীগের এক নেত্রী। অভিযোগ উঠেছে, কোনো প্রকার প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে মামলাটি নথিভুক্ত করেছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

মামলায় আসামি করা হয়েছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলাদেশ বুলেটিন-এর নিজস্ব প্রতিবেদক ও আশুলিয়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আসলাম হাওলাদার সাকিব এবং দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার আশুলিয়া প্রতিনিধি সুফি সুমনকে।
জানা যায়, মামলার বাদী অ্যাডভোকেট নাছরিন আক্তার নিজেকে আওয়ামী লীগের নেত্রী এবং ঢাকা জেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক পরিচয়ে পরিচালনা করে আসছেন। তিনি স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ডা. এনামুর রহমান ও উপজেলা চেয়ারম্যান রাজীবের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
সাংবাদিকরা জানান, সম্প্রতি তারা আশুলিয়া থানার ওসি আব্দুল হান্নানের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধান করছিলেন। এসময় ওসির বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে নাছরিন আক্তারের নাম উঠে আসে। তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে শ্লীলতাহানি ও চুরির অভিযোগে উল্টো মামলা করেন, যা ওসি কোনো তদন্ত ছাড়াই নথিভুক্ত করেন বলে অভিযোগ।
সাংবাদিক সুফি সুমন বলেন “আমি একজন পেশাদার সংবাদকর্মী হিসেবে সমাজের অনিয়ম, দুর্নীতি ও কুকর্ম উন্মোচনে কাজ করি। সম্প্রতি আশুলিয়ার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগার ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের ঢাকা জেলা আইন বিষয়ক সম্পাদক গাজী নাছরিন আক্তার নাজের কুকর্ম নিয়ে প্রমাণভিত্তিক সংবাদ প্রকাশ করি। সংবাদ প্রকাশের পর তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে উকিল নোটিশ পাঠান, পরে আশুলিয়া থানায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক অভিযোগ দায়ের করেন। আশ্চর্যের বিষয়, থানার ওসি কোনো তদন্ত ছাড়াই সেটি মামলা হিসেবে রুজু করেন, যা সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও আইনের ন্যায্যতার পরিপন্থী। আমার দৃঢ় মনে হচ্ছে, ওসি হান্নান সাহেবের নিজের দুর্নীতির তথ্য প্রকাশে তিনি সাংবাদিকদের উপর ব্যাপক ক্ষুব্ধ থাকায় এভাবে তিনি মামলা রুজু করেছেন। তবুও আমি ভয় বা হয়রানির কাছে মাথা নত করবো না, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আমার কলম চালিয়ে যাব।”
অন্যদিকে সাংবাদিক আসলাম হাওলাদার সাকিব বলেন, “এই মামলার বাদীর সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি। মামলার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে গত ১১ অক্টোবর সকাল ৯টা , কিন্তু ওইদিন ছিল সরকারি ছুটি, আমি বাসায় ছিলাম। লোকেশন বের করলেই সেটা প্রমাণ হবে।”
তিনি আরও বলেন, “মামলার পেছনে ওসি আব্দুল হান্নানের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। আমি ওসির বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে তথ্য চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি এই মামলা রেকর্ড করেন।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেত্রী অ্যাডভোকেট নাছরিন আক্তার বলেন, “আমি আশুলিয়া থানায় একাধিক মামলা করেছি। যে মামলার বিষয়ে কথা বলছেন, তার বিস্তারিত যেখানে থেকে তথ্য পেয়েছেন, সেখান থেকেই জানুন।”
আশুলিয়া থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. আজগর হোসেন বলেন, “এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করার অনুমতি আমার নেই।”
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “আমি নিজেই মামলাটি তদন্ত করেছি। কিছু তথ্য সত্য মনে হয়েছে বলেই মামলা নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আসামিরা সাংবাদিক কিনা, সেটা আমি জানি না।”
Optical illusion: কি দেখতে পাচ্ছেন? এটি বলে দেবে আপনার ব্যক্তিত্ব কেমন
এরআগে, গত শনিবার (২ নভেম্বর) রাতে আশুলিয়া থানায় নাছরিন আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন, যেখানে আসামি করা হয় দুই সাংবাদিককে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



