লাইফস্টাইল ডেস্ক : অফিস শেষে বাসায় ফিরছেন। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামলো। বৃষ্টি নামলো তো নামলোই, আর থামাথামির কোনো নামগন্ধ নেই। এমন বৃষ্টিকে আমরা বলি মুষলধারে বৃষ্টি। ইংরেজরা একে বলে, “It’s raining cats and dogs.” আক্ষরিক অর্থ করলে দাঁড়ায়, বিড়াল-কুকুরের বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু ঝুম বৃষ্টির সাথে বিড়াল-কুকুরের সম্পর্ক কোথায়? কেন এমন নামকরণ করা হয়েছে?
সর্বপ্রথম এই বাগধারাটির মতোই একটি বাগধারার ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায় ১৬৫১ সালে প্রকাশিতওলর ইস্কানাস নামের এক কবিতা সংকলনে। ব্রিটিশ কবি হেনরি ভাউঘান এই বইয়ের এক কবিতায় একটি বাড়ির ছাদের কথা উল্লেখ করেন। এটি নাকি কুকুর-বিড়ালের ‘বৃষ্টি’ থেকে সুরক্ষিত ছিল। এক বছর পর রিচার্ড ব্রোম নামক এক ইংরেজ নাট্যকার তার সিটি উইট নামের কমেডি নাটকে ‘It shall rain dogs and polecats’ লাইনটি উল্লেখ করেন। এখানে পোলক্যাট হলো একধরনের বিড়ালজাতীয় প্রাণী।
এরপর ১৭৩৮ সালে বিখ্যাত ইংরেজ লেখক জোনাথন সুইফট Complete Collection of Genteel and Ingenious Conversation নামে সমাজের উচ্চশ্রেণীর কথোপকথন নিয়ে একটি ব্যঙ্গাত্মক লেখা প্রকাশ করেন। এই লেখায় একটি চরিত্রের কথোপকথনে সর্বপ্রথম এই বাগধারাটির বর্তমান রূপ ‘raining cats and dogs’ কথাটি উঠে আসে।
তবে বাগধারার এই রূপটি হয়তো সুইফট নিজে উদ্ভাবন করেননি। বরং আগে থেকেই প্রচলিত এই বাগধারাটিকে সুইফট নিজের মতো পরিবর্তন করে নিয়েছিলেন। সুইফটের লেখার পর থেকেই বাগধারাটির বর্তমান রূপ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং সবখানে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যান্য ব্রিটিশ লেখকদের মধ্যেও এই বাগধারাটির ভিন্ন ভিন্ন রূপ ব্যবহার করতে দেখা যায়। যেমন It’s raining pitchforks কিংবা it’s raining stair-rods। এগুলোর সবই মুষলধারে বৃষ্টি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সুইফটের বাগধারাটিই সর্বত্র ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।
ব্যঙ্গাত্মক লেখাটি ছাড়াও সুইফট City Shower নামে ১৭১০ সালে একটি কবিতা লিখেন। সেখানে ভারি বর্ষণের পর বন্যার বর্ণনা দেন তিনি। এই কবিতায় বন্যার ফলে রাস্তাঘাটে বিড়াল, কুকুরের মতো মৃত প্রাণীর একটি বর্ণনা রয়েছে। এর সাথে হয়তো এই বাগধারাটির একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। ঠিক কীভাবে এই বাগধারাটি এলো তার সঠিক কোনো তথ্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না।
তবে গবেষকরা এর উৎপত্তির পেছনে কয়েকটি তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন। প্রথম তত্ত্ব অনুসারে, এই বাগধারার উৎপত্তি আসলে পৌরাণিক কাহিনী থেকে। নর্স পুরাণে ঝড়ের দেবতা ওডিনকে সবসময় নানা প্রাণীর সাথে চিত্রায়িত করা হয়েছে। বিশেষ করে কুকুর ও নেকড়ের সাথে তাকে বেশি দেখা যায়। ফলে নর্সরা কুকুরকে ঝড়ের প্রতীক হিসেবে মানতো।
আবার লোককাহিনী অনুসারে, ডাইনিরা ঝড়ের মাঝে ঝাড়ুতে চড়ে আকাশে ওড়াওড়ি করে। আর তাদের সাথে থাকে কালো বিড়াল। ডাইনি ও কালো বিড়াল একসময় সমুদ্রের নাবিকদের কাছে ভারী বৃষ্টির প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। গবেষকদের মতে, Raining cats and dogs এর মাঝে থাকা বিড়াল দ্বারা ভারী বর্ষণ এবং কুকুর দ্বারা ঝড়ো বাতাসকে বোঝানো হয়। এগুলো এসেছে উপরের দুই পৌরাণিক প্রেক্ষাপট থেকে।
আবার আরেকদল গবেষকের মতে, Cats and dogs শব্দ দুটি এসেছে গ্রিক Cata doxa থেকে। এই গ্রিক শব্দযুগল অনেকটা ইংরেজি শব্দযুগলের মতোই শোনায়। গ্রিক ঐ শব্দযুগলের অর্থ হলো, যা বিশ্বাস করা যায় না, অর্থাৎ যখন অবিশ্বাস্য রকম জোরেশোরে বৃষ্টি হচ্ছে; তখন সেটিকে বলা হয় Raining cats and dogs।
আরেকটি ধারণা অনুসারে, Cats and dogs আসলে বর্তমানে অপ্রচলিত শব্দ Catadupe-এর বিকৃত রূপ। প্রাচীন ইংরেজি সাহিত্যে Catadupe-এর অর্থ ছিল ঝর্ণা বা জলপ্রপাত। এ শব্দটি দিয়ে নীলনদের জলোচ্ছ্বাস বোঝানো হতো। সেই অর্থে, Raining cats and dogs এর মানে ছিল ঝর্ণার মতো বৃষ্টি। এই বাগধারাটির উৎপত্তির পেছনে সবচেয়ে জনপ্রিয় যে গল্পটি প্রচলিত রয়েছে সেটি এসেছে লোকসাহিত্য থেকে।
এই গল্প অনুসারে, বহুকাল আগে মানুষ খড়ের ঘরে বাস করতো। সেসময় কুকুর বিড়ালের মতো গৃহপালিত প্রাণীরা এসব খড়ের ঘরের চালে উঠে বিশ্রাম নিতো। খুব জোরে বৃষ্টি নামলে বৃষ্টির তোড়ে ঘরের ছাদ থেকে কুকুর বিড়াল মাটিতে গড়িয়ে পড়তো। সেখান থেকেই হয়তো মুষলধারে বৃষ্টির নামের সাথে কুকুর বিড়াল জড়িয়ে যায়। লোকসাহিত্য ছাড়াও এই গল্পের আরেকটি বড় উৎস হলো Life in the 1500sনামে ১৯৯৯ সালে গোটা ইন্টারনেট জুড়ে ছড়িয়ে পড়া ইমেইল। এই ইমেইলে বলা হয়
তবে একটু বাস্তবতা বিচার করলেই বোঝা যাবে, এ গল্পটি আসলে ভিত্তিহীন। কারণ বিড়াল হয়তো লাফিয়ে ঘরের চালে উঠে আশ্রয় নিতে পারে, কিন্তু কুকুরের জন্য তা প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া ঝড়বৃষ্টির মধ্যে কুকুর কিংবা বিড়াল ঘরের চালের মতো উন্মুক্ত স্থানে আশ্রয় নেবে এমনটা ভাবাও আসলে অযৌক্তিক। গবেষকদের মতে, এ গল্পটির আসলে কোনো ভিত্তি নেই।
এই বাগধারা নিয়ে এমন আরেকটি গল্প প্রচলিত আছে। সপ্তদশ কিংবা অষ্টাদশ শতাব্দীর দিকে ব্রিটিশ শহরগুলোর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। সেসময় ভারী বৃষ্টি হলেই শহরগুলোতে ছোটখাট বন্যার সৃষ্টি হতো। ফলে বন্যার পানিতে ডুবে কুকুর-বিড়ালের মতো অনেক প্রাণী মারা যেত। বৃষ্টির পর এগুলোরই মৃতদেহ ভেসে থাকতো পানিতে। কেউ কেউ মনে করতেন, এই প্রাণীগুলো বাইবেলে উল্লেখিত সেই ব্যাঙ ঝরে পড়া বৃষ্টির মতোই আকাশ থেকে ঝরে পড়েছে।
আকাশ থেকে মাছ ও পাখির মতো ছোটখাটো প্রাণী বৃষ্টির সাথে ঝরে পড়ার অনেক ঘটনা থাকলেও কুকুর বিড়াল ঝরে পড়ার মতো ঘটনা বেশ বিরল। তবে আকাশ থেকে না পড়লেও রাস্তায় ভেসে থাকা কুকুর কিংবা বিড়ালের মৃতদেহ থেকেই হয়তো এই বাগধারাটি এসেছে। পূর্বে উল্লেখিত জোনাথন সুইফটে সেই কবিতাটিতেও ঠিক এমনটির উল্লেখ পাওয়া যায়।
শুধু ইংরেজিতেই এই বাগধারাটি ব্যবহার হয় এমন কিন্তু না। পৃথিবীর অনেক দেশের অনেক অঞ্চলে এই বাগধারাটির ভিন্ন ভিন্ন রূপ প্রচলিত রয়েছে।
লেখা- কালেক্টেড
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।